অনন্ত পৃথ্বীরাজ-এর একগুচ্ছ কবিতা
শহরতলি
পৌর এলাকার বাইরে ছোট ছোট ঘর, দালান;
ছোটখোটো দোকানপাট, কারখানা, কুটিরশিল্প
মানুষের নিত্য চলাচল; চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য:
ধান-চাল, আলু-পেয়াজ, সার, গরু ও মাছের ফিড
কত রকম বেচাকিনি, নানা ধরনের মানুষের ছড়াছড়ি।
কতকথা, কত না সুখ অথবা দুঃখগাথা।
সলংগা, আমাদের শহরতলি।
বক্রোক্তি
উক্তির বিপরীতে বচনামৃত আলোচনা নাই
আঁকাবাঁকা রাস্তায় চলা কথার ঢং আন্দাজ কর,
সাধারণত বাড়ির বউ আর ননদের তিক্ততা।
ফিনল্যান্ড
হে রাষ্ট্র, সুন্দরতম
সুখসমৃদ্ধি উদাহরণ আমাদের।
কীভাবে কাটাও দিন অথবা রাতের প্রহর
তোমাদের বিধবারা কখনো কী কাঁদে রাতের আঁধারে?
ঊনত্রিশ তিন বিশচব্বিশ
দঃ পুস্তিগাছা, সলংগা, সিরাজগঞ্জ
এতিমখানা
পিতামাতাহীন সন্তানদের আর আলাদা করে চিহ্নিত করার দরকার নেই।
হে রাষ্ট্র, তোমার কী দায়িত্ব নেই সবার না হোক; অন্তত এই মানুষগুলোর মৌলিক
অধিকার নিশ্চিত করা?
শুধু দু’মুঠো ভাতের জন্য এভাবে অসহায় শিশুদের কেন আলাদাভাবে চিহ্নিত হতে হবে!
কাঙালি ভোজ
ভোর থেকে অপেক্ষায়
সারাদিন কত দোয়া দরুদপাঠ;
মোনাজাত শেষ করে ঠায় দাঁড়িয়ে
এখনো গাড়ি আসে নি।
লঙ্গরখানায় মানুষ বেড়েছে ঢের
সারাবেলা যাদের টিকিটিও নজরে আসে নি
এবেলায় তারা হয়ে গেছে মস্তান
এক প্যাকেট ঢলঢলে খিচুড়ির জন্য
এভাবে মরণপণ যুদ্ধ করতে হবে
ওরা কী কখনো ভেবেছিল?
নিলাম
আমাদের কানের ভেতর শত্রুরা ফিসফিস করে-
জানালায় ট্রিগার তাক করা, টিপলেই শরীর ভেদ করে গুলি বেরিয়ে যাবে
নিত্য অভাব ভয়ংকর শত্রুর চেয়েও আরও খারাপ।
আমাদের লোকায়ত রুচির চর্চায় আমসত্ত্ব এখন ক'জনে খায়!
মোরগ পোলাও, খাসির রেজালার সাথে চিনি ছাড়া দধি কেউ কেউ পায়।
সুদুল বুদুল দিয়ে কোনো রকমে একটা টিপ সই নিতে পারলেই
দেনার দায়ে সব নিলামে তোলা হবে। তারপর মাসোয়ারা
এখন আর জমিটা তোমার নাই বাপু । ওটা ছেড়ে দাও ।
হলফনামা
ক্রৌঞ্চ ক্রৌঞ্চির চঞ্চু চঞ্চলতা
বুঝেও বোঝে না শিকারি ব্যাধ
যেখানে সৌন্দর্যের মূল্য নেই,
সেখানে
ভালোবাসা পালিয়ে বেড়ায়।
রাষ্ট্র প্রেম নয়, বোঝে অর্থের সার্থকতা।
অবিশান্ত বিশ্রাম ঘর
মর্গে যাওয়ার দুর্ভাগ্য যেন কারও না হয়!
শান্তি, এই শব্দটি মানুষের দিলের মধ্যে
লুকিয় থাকে।
জন্মেই সবাই কেবল দৌড়ায় আর দৌড়ায়
পৃথিবী যেন মায়ামৃগের মতো মরীচিকা।
নিদানকাল পেরিয়ে আমাদের শেষ ঠিকানা
অবিশ্রান্ত বিশ্রাম ঘর।
খসড়া মুদ্রণ
কবিতার লাল, নীল রঙ
সবাই দেখতে পায় না
দোয়াত কালির আবির্ভাব
কল্পনাকে জাদুঘরে নিয়ে যাবে।
ঈশ্বর কবিতা পছন্দ করেন,
নাকি খড়খড়ে গদ্য!
আরো পড়ুন- নিগার শামীমার কবিতা