পদাবলিপ্রচ্ছদ

অলোক মিত্রের কবিতা

কাঁঠালিচাঁপার ঘ্রাণ

খুব কাছ থেকে নয়,

অবশ্য দূর থেকে দেখেছি তারে

আজও কাঁঠালিচাঁপার সুগন্ধি হয়ে

আছে মিশে একটা হৃদয়।

 

উপেক্ষার উদ্ভ্রান্ত উচ্চারণে

একদিন যাকে গিয়েছো এড়িয়ে

কিংবা পাশ কাটিয়ে কথার ধুম্রজালে।

অভিমানী চাতক ফিরে এসেছিল

সেদিন তৃষ্ণাহীন গৃহে।

 

আজ এই  মহুয়া বাতাসের সুতীব্র ভ্রুকুটি,

ক্ষমাহীন জলের উচ্ছ্বাস

এই সব ডিঙিয়ে তুমি তাকে

খুঁজে পাবে না কোথাও।

 

যাপিত ক্লান্তির সব সূত্র এড়িয়ে

আনন্দ বৈভবে উড়ছে প্রজাপতি….

আর আমি ঘ্রাণের সবটুকু সুগন্ধি ,

নিয়ে যাচ্ছি প্রীতিলতা তোমার

 

নিয়তি যদি হয় নিয়ম,

তবে নিশ্চিত আমি তার কৃতদাস।

 

 

ভাঁটফুলে চুমু খাই আয়ুষ্ণু পরিতাপে

সেদিনও তোকে বলেছিলাম আমি ভালোবাসা বুঝি না।  অথচ নির্লিপ্তভাবে তোকে চাই, কোন বিশেষণে নয়।

শত অবহেলার মাধুর্য্য শিরায়, শত কামনার ব্যধিগ্রস্ত

পরাজয়ে নির্লজ্জের মতো আমি তোকে চাই।

একদিন দেখা হবে শালুকফোটা কিংবা পদ্মফোটা কোন হিমশীতল দুপুরে, চাই বর্ষা এসে সেদিনও ভিজিয়ে দিয়ে যাক মন দুপুরের গহীনে।

গতকাল  কে যেন বললো, রাধা এসেছিল তোর সিঁথানে। দেখা হয়েছে? আমি তো জানি, কত কথা তাঁর সনে হয়েছে, হৃদয়ও মম গহীনে।

গতকাল গোলাপ বলেছিল, এখন আর আমাতে তোর মন বসে না কেন? বলিনি তাকে প্রতারণা আর ভাল্লাগে  না এখনও।

মুখ ফিরিয়ে ভাঁটফুলে চুমু খাই আয়ুষ্ণু পরিতাপে। সঞ্চিবনী তুলে নেই আরও কিছুটা কাল, প্রহর প্রলয়ের পৃথিবীতে টিকে থাকার।

আসলে ভালোবাসা বলে কিচ্ছু নেই, সে তো বেঁচে থাকার এক মায়া মোহ। না হয় আজ গোলাপে চুমু খাবো না।খাবো না হয় প্রকৃতির এক গ্লাস ক্লোরোফিলে।

চলে আয় না হয় ভাঁটফুল, চিনি না তাকে এমন বন বাঁদারে ফুটে থাকা অজস্র ফুল। তুলে নেই প্রাণের বেঁচে থাকার নির্যাস, বেলা শেষে চলে যাবার এই মেঠো পথে।

 

শীতের কাল

ইদানিং বুঝতে শিখেছি

যেমন করে ভাবতে,

একটা ঝুঁট শালিক

তার পৃথিবী থেকে

চলে যাওয়ার গপ্প

শুধালো গতকাল।

 

সারারাত ধরে, ভাবি

আমি বুঝতে শিখেছি

ঝুঁট শালিকের সেদিনের

ছিন্নবীনার সংলাপ।

 

ইদানিং ঘুমের ঘোরে

মৃত গত আত্মাদের শীতের

শেষ পদাবলী পড়ি।

দু’চোখ যেন ভূ-মধ্যমহাসাগর,

আমি প্রাতঃস্নানে বারবার

পরিশুদ্ধ হই দেহ আত্মার প্রিয় দর্শনে,

হই বিমোহিত তাঁর রূপলাবন্যের

পৌষালী শিশিরসিক্ত কুয়াশায়।

 

রসের হাড়ি উপুর করে,

মধুময় সঞ্জিবনী নেই প্রত্যুষে।

হেমন্তের ঝরাপাতাদের গান

আমায় খুব টানে, আমি শ্রীহরি

দর্শনে আত্মায় খুঁজি

পরমপ্রিয় সে, সান্নিধ্য।

 

শীত আসলেই ঝরাপাতার

বিলাপ, হেমন্তের সোনাঝরা রোদ,

সবুজ ধানক্ষেত জুড়ে পললমৃত্তিকার

আঁঠালো আল ধরে পাড়ি দেই

কুয়াশার সাঁকো, নবধানে সুগন্ধিচালের

মৌ মৌ গন্ধ আমাকে মাতাল করে।

 

আমি প্রতিদিন গত আত্মাদের কাছে

প্রার্থনা পাঠাই সোনালী রোদের খামে,

নির্লজ্জের মতো সঞ্জিবনী

তুলে নেই তরুলতাপাতা

আর আমিষের পাতে।

 

 

যাপিত জীবন

যাপিত সুখের পারদসম ক্ষতের

সেবা শুশ্রূষা করতে গিয়ে,

মেপে দেখতে চেয়েছি সহস্রবার।

যাপিত জীবনে হেমন্তের রোদের মতো

যেমনটা দুঃখ ধরা দিয়েছে সজস্রবার ।

 

হবে হয়তো,  যা কিছু ভালোলাগার

জীবনে বেশিরভাগ না ছিল লৌকিক

এখন অবশ্য সবার আড়ালে

বেরিয়ে আসতে চাই ;

অতপরঃ এখন দেখি সবই অলৌকিক!

 

নখদর্পণে দেখা মানুষটাকে নিয়ে

একটু বেশি চিন্তা করতে গিয়ে,

সব কিছু চুরমার হয়ে যায়।

এখানে বিষাদের না আছে ব্যাখ্যা,

না আছে সুখের মাত্রা ।

 

তারপরও প্রখর আলোর বিচ্চুরণমাখা

শৈশব থেকে তেজপাতা রাঙা মৃত্যুর

ব‍্যবধানে কোন রকম বেঁচে থাকে

একটা গোটা জীবন।

 

আরও পড়ুন- শাহিন চাষীর কবিতা