আধহাত- সুতপা সোঽহং-অণুগল্প
কানে হেডফোন গোঁজা ছিল। আলতো করে একটা ছোঁয়া পেলাম হাতে। মুখ উঠিয়ে দেখতে পেলাম। সে। ডাকাডাকি করেছে হয়তো অনেকক্ষণ। শুনতে পাই নি। হেডফোন খুললাম না। সাউন্ডটা কমিয়ে দিলাম। সে চুপ করে পাশে বসল। আমি আড়চোখে দূরত্বটা দেখলাম। আধহাত। কিছু একটা বলা দরকার। কিন্তু সব কথাই এখন হাস্যকর মনে হবে। ও রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর শরীরটা বোধহয় এখানে। মন দূরে অনেক দূরে যত দূরে থাকলে আমি এই আধহাত ডিঙ্গোতে পারি না। রেশমের মতো হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। ওর আবার জ্বর হবে না তো? এখন তো আর মাথা মুছিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই। এতো অসহায় লাগছে। এতোটা তো ফোনে ব্রেক আপের সময়ও লাগে নি, ও যখন শেষ দেখা করার কথা বললো তখনও না। আমি কি একবার হাতটা ধরে ক্ষমা চাইবো? ব্যাপারটা নাটুকে হয়ে যাবে। হোয়াটসঅ্যাপে সরি লিখে পাঠাবো? নাহ আমি আগে কেন বলতে যাবো। দোষ তো ওরও কম না। অন্তত এখন কথা তো বলতে পারে। থাক আমিও চুপ করে থাকি। আমারই বা কি এতো ঠেকা পড়েছে! পাশের বেঞ্চ থেকে খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ আসছে। সবাই হাসছে, কথা বলছে। আমরাই শুধু আধহাত দূরত্বে পাথরের মূর্তির মতো বসে আছি। ও একবার ঘড়ি দেখলো। ওহো এখন তো আমার জন্য সময়ও নেই। উশখুশ করে বলে উঠলো
– ‘এখন উঠতে হবে।’
— ‘হুম’
– ‘কী শুনছিস? আলি শেঠ্ঠী?’
— ‘হুম’
– ‘হুম ছাড়া আর কিছু বলতে শিখেছিস?’
আমি উত্তর দিলাম না। শেষের দিন ঝগড়া করার কোনো মানে হয় না। এ নিয়ে আগেও কয়েকবার তুমুল ঝগড়া হয়েছে।
ও আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখ থমথমে। এইবার আমাদের চলে যেতে হবে বিপরীতে। আধহাত থেকে দূরত্ব কয়েক শো মাইল হবে। কী বলব বুঝতে পারছি না। বুকটা চিন চিন করছে। ও আরেকবার ঘড়িটা দেখলো। কারোর সাথে দেখা করার আছে? এর মধ্যেই নতুন কেউ এসে গেল? বাহ রে বাহ প্রেম! কষ্টে রাগে ঘৃণায় অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। ও এক ঝটকায় হাত ধরে ফেলে দুটো টিকিট হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর গম্ভীর গলায় বললো ‘শ্রীকান্ত আচার্য তথ্যকেন্দ্রে এসেছেন প্রোগ্রাম করতে। সাড়ে সাতটা থেকে শো। দশমিনিট হাতে আছে। জোরে হাঁটতে পারবি তো?’
— ‘হুম্’
– ‘আবার হুম্?’
দুজনেই জোরে হেসে উঠেছি। হাসির শব্দে আশেপাশের লোকজন ভুরু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করছে এই যে আধহাত দূরত্বে আমরা হাঁটছি আসলে আমাদের সম্পর্কটা কী!
আরো পড়ুন- শাশ্বত বোসের গল্প