আশরাফ চঞ্চলের কবিতা
জীবন
সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে
চাই স্বতঃস্ফূর্ততা
স্বস্তি
তেমনি একটু উষ্ণতাও
থাকা জরুরী
যদি আবেগ
অনুভূতিই না থাকে
সেটা জীবন না
নরক!
চোখ
চোখ মানুষ চেনার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার
কাউকে মানুষ ভাবার আগে
তার চোখ দেখুন
একটু চালাক হলেই বুঝতে পারবেন
সে কতটা মানুষ আর
ঠক!
দেহের উপত্যকা
আমাদের দেখা হবে
পাহাড়ি উপত্যকায়
নদীর মোহনায়
ঠোঁটে
মধু ঝরবে
উষ্ণতা ছড়িয়ে যাবে
দেহের অলিতে-গলিতে
গোপন দরজায় হানা দেবে
ক্ষুধার্ত গাঙচিল!
টানেল
আমার বিশেষ দুর্বলতা নারী আর নদীতে
এই দুই জিনিসে আমার অতৃপ্তি নেই
আমি ডুবতে জানি
ভিজতে জানি
সুড়ঙ্গ টানেলে
পেতে দিই ঠো্ঁট আর লালায়িত জিভ!
ভুল গন্তব্য
ভালোভাবে বাঁচতে চেয়ে
কেবলই এগিয়ে যাচ্ছি
মৃত্যু দোয়ারের দিকে
চোখ টলুটলু
ঘুম।
হেরেমের অদৃশ্য আগুনে
বুকে চিনচনে ব্যথা
শ্বাসে অক্সিজেন নেই
সিসা।
এবার পথ দেখাও পীর বাবা
সামনে জটিল জংশন
অন্ধকূপ
কুয়াশা!
মানুষ
একদিন অদৃশ্যের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলাম
‘মানুষ চিনতে চাই
উপায় বলুন’
অদৃশ্য নীরব
উত্তর এলোনা।
চিন্তায় মশগুল হয়ে অনেক ভাবলাম
ভাবতে ভাবতে মাস গেল
এভাবে বছর।
তারপর একদিন বনের দিকে হাঁটা ধরলাম
এক অতিশয় বৃদ্ধ তপস্যায় বসে
বিড়বিড় করে বললেন, ‘অন্যকে চিনার আগে
নিজে মানুষ হ’ও
আচ্ছা, তবে মানুষ কে?
হাজার কোটি জনসংখ্যার ভেতরে আমরা কয়জন মানুষ?!
সংসার
দিনদিন সংসার ভেঙে যাচ্ছে
বিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে
কর্পোরেট মনোভাবে নেই মানবতা আর
শ্রদ্ধা!
মিথ্যা অহমিকায় মডার্নিজমে সবাই ডুবে যাচ্ছে
সুখের আশায় অসুখ কিনে আনছে সংসারে
মানুষ হওয়ার নামে
মানুষেরা দিনদিন অমানুষ হয়ে যাচ্ছে।
বিবাহ কিংবা বউয়ের গল্প
একদিন ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললাম
রাতে ঘুম হয়না
খুব অসুখে আছি
ওষুধ দেন
ডাক্তার বললেন, বাড়িতে গিয়ে বিবাহ করেন
অসুখ সেরে যাবে
বিবাহ করতেই অসুখ আরও বাড়লো
স্ত্রীর কী যে ঘ্যানর ঘ্যানর
রাতদিন শুধু প্যাঁন প্যাঁনানি
এটা ওটার আবদার!
কথায় কথায় বাড়ি ছাড়ার হুমকি!!
এবার রেগে হন্তদন্ত হয়ে আবার ওই ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম। তিনি সব বৃত্তান্ত শুনে প্রেপক্রিপশনে লিখলেন, যদি গাছে চড়ার অভ্যাস থাকে তবে একখন্ড মজবুত দড়ি নিয়ে ঝুলে পড়ুন। সাহস থাকলে বালাইনাশক দোকান থেকে একশিশি বিষ কিনুন নয়তো একপাতা ঘুমের দামি অষুধ। এছাড়া আপনার জন্যে আর কোনো পারফেক্ট অষুধ নেই।
বললাম,অযথা না ঘুরিয়ে প্রথমেই তো এই অষুধের কথা লিখে দিলেই পারতেন!
তিনি মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, আরে এতে আপনার আফসোস থেকে যেতো। কখনোই বুঝতেন না বউ কী জিনিস!
বিশ্বাস
ভালোবাসার অপর নাম বিশ্বাস
যার মধ্যে বিশ্বাস নেই
তার ভালোবাসা নেই।
ভালোবাসা বেঁচে থাকে বিশ্বাসে
বিশ্বাস থাকলে ভালোবাসা পাবে
প্রতিটি নিশ্বাসে।
ভালোবাসার নামে যারা করে ছলনা
এমন একটা সময় আসে
যখন কেউ পাশে থাকেনা।
এবার বোবা ও অন্ধ হয়ে যাবো
ভাবছি এবার বোবা হয়ে যাবো
কিছু বললেই বিপদ
হুমকি ধামকি
আক্রমণ!
এরচে’ বোবা হয়ে থাকাই ভালো
সামনে চলুক অন্যায় অবিচার
জুলুম নির্যাতন
প্রয়োজনে দুচোখ বন্ধ করে
অন্ধ হয়ে যাবো!
কিছু বললেই বিপদ
কিছু দেখলেই বিপদ
এরচে’ বোবা ও অন্ধ হয়ে থাকাই ভালো।
ভাড়াটিয়া
তোমরা চলে যাচ্ছো আমাদের বাসা ছেড়ে
খুব সকালেই ট্রাক এলো
আমার কাছে ওরা যেনো ডাকাতচক্র
গেইট খুলে সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে
ষণ্ডামার্কা লোকেরা নামাচ্ছে তোমার শোয়ার খাট
সোফাসেট আলনা আলমারি আর ড্রেসিং টেবিল
ফ্রিজ ফ্যান এসি গ্যাসের সিলিন্ডার চুলা বালতি ড্রাম
কম্বল তোষক হাড়ি-পাতিল ফুলের টব খেলনা
তুমি কাদছিলে অবুঝ শিশুর মতো অঝোরে
কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে
আহা! কী যে সেই ছটফটানি
মাথার কোষে জটিল ঘূর্ণন
চারপাশটায় কেবল শূণ্য শূণ্য শূণ্য
তোমার আব্বা প্রমোশনে অধ্যাপক হয়ে চলে যাচ্ছেন
জামালপুর সরকারি কলেজে
তাই তোমাদের এই চলে যাওয়া
কেউ দেখছেনা আমার ভেতরটা যে কিভাবে ভাঙছে
সাঁতার না জানা শিশুর মতো অতল জলে ডুবছে
ভাসছে!
হয়তো কাল কিংবা পরশু আরেক ভাড়াটিয়া আসবে
শূণ্য রুম আবারও ভরে উঠবে দামি দামি আসবাবপত্রে
কেবল তুমিই বারান্দার রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেনা
ঠোঁটে মোলায়েম হাসি ছড়িয়ে ডাকবেনা-
এ্যাই কাছে এসো
এভাবেই সবাই চলে যায়
কেউ থাকেনা
ভালোবাসা মানেই মিথ্যা আর ছলনা!
আরো পড়ুন- নোমান শায়েরীর কবিতা