পদাবলিলোকসাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা- আনিসুর রহমান অপু

কী ছিল যে সে

কী ছিল যে সে, জানেনি কেউ

বলিনি কারো কাছে

প্রতিটি দিন, প্রতি প্রহরই বেঁচে থাকা যে আঁচে!

 

প্রথম দেখা প্রণয় লেখা ফুল ফোটানো হাসি-

হৃদয় খুলে ডেকেছে কাছে, বলেছে, ‘ভালোবাসি।’

রোদ্দুরে যে মুখচ্ছবি জোছনাতেও মায়া ,

অনুভবের অথৈ স্রোতে ভাসছে প্রীতি ছায়া!

 

মনের রঙে রঙ ছড়িয়ে কতো কী আঁকিবুকি

দু’চোখে যার নিটোল দীঘি যেন বা হাকালুকি !

যতোটা প্রেম দু’হাতে ধরে দিয়েছে তারও বেশি

ঈর্ষা জ্বরে ভোগে তা দেখে না-মানুষের পেশি !

 

ইচ্ছে কুঁড়ি স্বপ্নঝুঁড়ি, ঝুঁড়িতে জমে ব্যথা

স্মৃতি সাঁকোয়  নানা রঙের বিরহ ব্যাকুলতা!

জমেছে ধাঁধা কালো ও সাদা, অতল অভিমান

পাঁজর জুড়ে জট-জ্যমিতি , সব হারানো গান –

হারিয়ে গেছে তবুও আছে, সেই পুরনো ঠিক-

যে মুখটাতে মগ্ন মায়া, মুগ্ধ মানবিক!

 

ঈষাণে মেঘ কুয়াশার কু, আড়ালে-অগোচরে,

ইচ্ছে মতো ঢেলেছে বিষ প্রাণের সরোবরে!

কেড়েছে কূট দখলপনা ফুল ফোটানো দিন

থাকতে সবই নিঃস্ব ধরা বিপন্ন মলিন!

 

খাঁচার পাখি কাঁদছে একা বুকে তা থই থই-

নিজের ভুলে এ পরাজয়— কার কাছে বা কই!

কার চালে ও ধূর্ত ঢিলে, পথ নিয়েছে বাঁক-

কী হবে আর জখম খুঁড়ে- থাক সে কথা থাক!

সাঁড়াশি বোধ কেড়েছে হাসি, সামনে চলা রথ

পর সে প্রীতি স্মৃতি-শ্রাবন , রঙচটা শপথ!

 

বুকের মাঝে মাদল বাজে, স্বপ্নে ঘেরা ঘর

পিষে দানব রক্ত খেকো, সাজে স্বয়ম্ভর!

যদিও দানো নেভায় বাতি, আশাও এক ফুঁয়ে ,

থাকবে তবু স্বপ্ন গাথা, আবহকাল ছুঁয়ে।

 

নামটি তারও যত্ন করে, লিখবে জবা-জুঁই

সুঁই-সুতোতে নকশিকাঁথা, ফসল ফলা ভূঁই!

কী নাম দেবো, নাম যে কী দি’, ফুলের নামে নাম

তুলনাহীন হৃদয়গাথা জেনো বিশ্বগ্রাম ।

 

যদিও দেখা অথবা চিঠি , নাই সে বহুদিন

বইছে নদী দুঃখধারা বিষণ্ণ মলিন-

বুকের চরা ধূসর ধরা, কষ্ট কালো গাথা

শূন্য ধু ধু নীল যাপনে , কুয়াশা ভরা খাতা!

 

দিয়েছে ভোর গাঁঢ় আদর আফ্রোদিতি’ নদী

মনের মাঝে সকাল সাঁঝে নীরব নিরবধি-

সূর্য রাগে কুসুম বাগে কে সে সমর্পিতা –

বিনা দোষেই মরছে পুড়ে, ভালোবাসার সীতা!

 

যে ছিল জুড়ে, হৃদয় খুঁড়ে গভীর অনুভবে

কী করে ভুলি, তার না থাকা প্রাণের উৎসবে!

কী ছিল যে সে, জানেনি কেউ বলিনি কারো কাছে

বলেছি, ‘ছিল ‘  ছিল কি শুধু—সতত ছুঁয়ে আছে!

 

ঘসেটির বীজ

অথচ ভেবেছি,  সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন,

ক্ষমাহীন কুয়াশা কাটিয়ে, হেসে উঠবে উদার

অন্তরঙ্গ ভোর, ঘোর কেটেছে দ্রুতই–অন্তর্গত

রক্তের রাক্ষুসে ধারা দিশেহারা করেছে সময়–

দেরী হয়ে গেছে খুব, তা-ও শেষে চিনেছি রঙিন

কথাবাজ চতুর চেহারা–নষ্ট-নোংরা আগাছার

থেকে দূরে থাকাই যেখানে শ্রেয়–পরলোকগত

 

পিতৃ বাক্যে সেখানে টেনেছি কাছে–‘ অবুঝ-অবোধ,

আর শিক্ষাহীন ওরা, তাও দেখো–থেকো মিলেমিশে।’

চিত্ররূপ দিতে তার, ঝরেছে অনেক অশ্রু, রক্ত-

ঘাম, সর্বস্ব খোয়ানো ঝুঁকি–খেটেছি অস্ত-উদয়;

পারিনি ফেরাতে ‘সৎ’ থেকে শঠ, শোনেনি প্রবোধ

বিষকাঁটা, ঘরভাঙা ঘসেটির বীজ–ঘৃণ্য ক্লিশে,

ভালোবাসা পিষে–ঢালে বিষ-স্বার্থোন্মাদ লোভাসক্ত।

*আনিসুর রহমান অপু: নিউইয়র্ক প্রবাসী কবি।

 

আরও পড়ুন- একগুচ্ছ সুফি কবিতা