পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- জামিল হাদী

আমাদের শাহনেওয়াজ

ছেলেটার অনেকগুলো চোখ ছিলো।

সবাই ভয় পেত। এতো চোখ!

অথচ ছেলেটির চোখ থেকেও ছিলো না।

সে সাদাকে কালো,

কালোকে সাদা,

রঙিন কে সাদাকালো

আর সাদাকালোকে কোনোদিন রঙিন বলতে পারেনি।

ক্যালকুলেটর যোগ-বিয়োগ ঘুরপ্যাঁচ করেও ওর দৃষ্টির আসল সংখ্যা কখনো বের করতে পারেনি।

 

যারা একচোখা তাদের চোখে ভোরের মৃদু আলোকেও বজ্রপাত লাগে।

এই কথা শাহনেওয়াজ লিখে লিখে জানিয়ে দিয়েছিলো সবুজ পাতায়।

 

শাহনেওয়াজ জন্মান্ধ ছিলো

কিন্তু ওর বিবেক ছিলো সূর্যোদয়ের উপত্যকা।

 

পরাগ রেণু

একটা ইচ্ছা আছে আমার। মারাত্মক ইচ্ছে।

মা’র মুখ দেখতে দেখতে যেন দুনিয়া ছাড়তে পারি।

তারপর মনে পড়ে এতো স্বার্থপর হলে হবে!

তারপর মনে পড়ে ইচ্ছা তো ইচ্ছাই।

কত মানুষের বাচ্চাই তো মরছে মা’র কোলে।

আমার মাও সয়ে নেবে।

তারপর মনে পড়ে মৃত্যু তো আমার অধীন না, আমি মৃত্যুর অধীন।

আমি আবিষ্কার করি নিজেকে পূর্ণাঙ্গ লোভীর কাতারে।

যে লোভী মানুষ একটা কাব্যিক মৃত্যু পাওয়ার জন্যে মাকেও কষ্ট দিতে পারে।

 

মা, মাফ করে দিও।

 

অবান্তর

রাস্তার দৈর্ঘ্য সহজেই মাপা যায়।

মনে মনে পুষে বড় করা দূরত্ব কীভাবে মাপে?

লবণাক্ততার তীব্রতা বুঝতে অতটাও বিজ্ঞান লাগে না।

 

কিন্তু কথার বিস্বাদ?

সেটা কতদিন থাকে?

কতদিনে গিয়ে বাসী হয় রিক্ত কথার রক্তাক্ত ঝাঁঝ?

 

ঠিক কতগুলো দিন বিগত হলে,

ঝাপসা হয়ে যায় পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে দাগিয়ে রাখা প্রিয় তারিখের চারপাশের গোল বৃত্ত?

 

কতদিন পর একটা আপাত সুস্থ স্বপ্ন, স্বপ্নে আসে?

 

কতদিন পর দেখা হলে একটা হাসি বেরিয়ে আসে

জমিয়ে রাখা প্রশ্নোত্তর পর্বকে বোবা বানিয়ে?

 

বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন… সবকিছুর হিসাব করা যায়।

কে… কতবার… কাকে…কতটা ক্ষণ… কতটাবার…

মনে করে করে বর্ষাকালের বিজ্ঞাপন হয়ে উঠলো ── সেই হিসাব কার টালিখাতায় থাকে?

 

ভাংতি টাকার মতো অতি জরুরি ফাল্গুনের স্মৃতিসৌধে, কার ইতিহাস নাম পায় কবিতার?

 

আরও পড়ুন- একগুচ্ছ সুফি কবিতা