পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- মহসিন আহমেদ

১.

দরজা বন্ধ

আমাকে ডাকছো,

ডেকেই যাচ্ছ তুমি

জানালার পাশে

প্রজাপতি হয়ে

হেঁয়ালি নাচ্ছ তুমি।।

 

অথচ, এদিকে

দরজার কড়া নড়ছে

তোমার উঠোনে অবিরাম ঝড়ো

বৃষ্টির জল ঝরছে

আমাকে ভিজিয়ে এই অবেলায়

কী সুখ পাচ্ছ তুমি।।

 

একটু পরেই

সান্ধ্যপ্রদীপ জ্বলবে

আঁধার নামার আগেই হয়তো

তোমার হৃদয় গলবে

কেন যে ভিজিয়ে আনন্দে ঢেউ

এখনও খাচ্ছ তুমি।।

 

২.

পথ বেঁকে গেছে পথের বাঁ দিকে

ফেলে গেছে তার আদিম চিহ্ন

ফেলে গেছে তার কোমল পায়ের ছাপ

ভরা বর্ষায় জল টলমল

গ্রীষ্মে ছড়ায় ঝলসানো উত্তাপ।

 

কার ছায়া কে যে জানি না কিছুই

রোদ নাকি আমি বৃষ্টিকে ছুঁই,

ভেবে ভেবে আমি ফেনায়িত জল

নেশার মদিরা যেন

বারেবারে শুধু আমার সামনে

প্রশ্নবোধক চিহ্ন আসে যে কেন!?

 

কখনও রাখিনি ভাঙন পিয়াসী

কোনো সরোদে আঙুল

তবু কেন শুধু ভোরের বকুল

ঝরে যে মধ্যরাতে

কে নাড়ায় ডাল কার পায়ে পিশে

আহত বকুল চিৎকার করে

কাতরাতে কাতরাতে!?

 

৩.

এখনো তো এই পথে আসি রোজ রাতে

উঁকি দিয়ে যাই জানালাতে

ফেলে রেখে যাই আমি দু’পায়ের ছাপ

কখনো কি ভেবেছ তা, এ চিহ্ন কার-

এ মাটিতে কেন উত্তাপ।

 

একার আগুনটুকু পোড়ায় আমাকে –

পোড়ায় পথের ধুলো

পুড়ে পুড়ে শেষ হয় না তো আজও —

স্মৃতিময় পাতাগুলো।

 

রাত্রিপুরাণ

সময়ের কালোঘোড়া ছুটে চলে হাবিয়ার দিকে

বিবর্ণ চোখের ভিড়ে রাত্রিপুরাণেও মেঘ জমে

মুহূর্তেই ঢেকে দেয় ঝলমলে এই পৃথিবীকে

নীলাভ সঙ্গমছায়া বিরাজিত হয় ক্রমে ক্রমে।

 

গোপন সঞ্চয়টুকু মুখরিত হয়ে ছায়ামেঘে

মায়াদৃশ্যে জোছনার বিরুদ্ধে বাজায় জলগান

স্নায়ুজল দীর্ঘপথ পেরোয় আক্রোশে ঝড়বেগে

নির্জনবিন্দুতে জমে অব্যক্ত নিয়ন অভিমান।

 

জল ঘুঙুরের ডাকে বর্ণিল বিকিনিপত্র নাচে

ঝলমলে ঝাড়বাতি নগরীর নীল স্নানাগারে

মাকড়শা পুচ্ছ নাচিয়ে ফেরে সঘন রাতের কাছে

নিতম্বের কারুকাজে দৃশ্যকল্প নিয়ে যায় অভিসারে।

 

ঋতুরঙ ভেসে যায় সুতিয়া বানার হয়ে রোজ

শ্রাবণপুরাণে আজও ঢেউ খেলে খরস্রোতা নদী

নেশার মদিরা শেষে কামুক পাখিরা করে খোঁজ

উড়ে আর ভাবে তারা গুহাকালে ফেরা যেতো যদি।

 

আরও পড়ুন- শাহিন চাষীর কবিতা