একগুচ্ছ কবিতা- মাহমুদা আক্তার
আঁড়চোখ
পেছনে ফিরে আর না তাকিয়ে
বরঞ্চ সামনের দিকে এগিয়ে যাই,
এটা মেনে নেই যে কষ্ট যা পেয়েছি এতদিন
হয়তো তা পাওনা ছিলো।
যতটুকু ঠকে গিয়েছি ততটুকুতেই
বিরাম চিহ্নের শেষ বন্ধনী চিহ্নটা এঁকে দেই,
কারো প্রতি কোন আশা না রাখি
কারণ আশা করতে গেলেই
কেউ নিরাশ করবে,
কেউ বা সুযোগ নেবে,
কেউ আবার প্রতিদান চাইবে
এটাই তো নিয়ম।
তাহলে কেন এই সহনশীলতা, সহমর্মিতা
নামক শব্দগুলোর প্রয়োগ চলমান?
আমরা কেউ কি আর আগের মতন আছি?
নেই তো! একদমই নেই।
কেউ খারাপ আছে জেনেও
তাকে আরো খারাপ থাকুক
সে কামনায় রত সবাই,
তাকে অসম্মান করতেই ব্যস্ত সবাই
কারণ তা সবচেয়ে আনন্দ দায়ক।
আমরা দীনতাকে উপহাস করি
আর ধনীকে করি সম্মান
কারণ ধনীকে ক্ষমতাবান ভেবে ভয় পাই
ধনীর লেজুড়বৃত্তি করে উপরের সিঁড়িতে
উঠতে পারবো এই স্বপ্ন দেখি।
আমরা ভালো থাকলে অতীত ভুলে যাই
আসলে অতীত না আমরা আমাদের
অস্তিত্ব’কেই ভুলে যাই।
ইচ্ছে করেই ভুলে যাই
কারণ এর মাঝে এক প্রকার আনন্দ আছে
অন্যকে আঁড়চোখে দেখার আনন্দ।
তোমার বসবাস
জ্বলজ্বল করা রাতের তারাটা
হঠাৎ আমায় জিজ্ঞাস করলো
তোমায় আজও মনে পড়ে কিনা?
আমি প্রথমে খানিকটা ইতস্তত বোধ করে
পরে আবার স্বাভাবিক হলাম,
ভাবলাম তোমায় আর নতুন করে
মনে পড়ার প্রয়োজন কি আছে?
তুমি তো সদা জীবিত আমার মনের অন্তঃপুরে
যেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছো তোমার ইচ্ছেমতো,
যেখানে সর্বত্র তোমার মালিকানা
তোমার রাজত্ব, বসবাস।
পূর্ণিমার চাঁদ
যদি বলি পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে এসো
আসবে তো?
ঐ দূর আকাশের পূর্ণিমার চাঁদ
যার আলোয় আলোকিত হয়
আঁধারে নিমজ্জিত পৃথিবী।
তেমনি তুমি আমায় আলোকিত করবে,
কি আলোকিত করবে না?
সাথে থাকবে তারার মেলা, ছায়াপথ, নীহারিকাপুঞ্জ
কখনো বা সপ্তর্ষিমন্ডল, ধুমকেতু, মেঘমালা।
আমি আমার আকাশটাকে সাজাবো
আমার মনের মতো করে।
যখন দিনের শেষে রাত আসবে
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে
তোমায় খুঁজবো পূর্ণিমার চাঁদরূপে
আর তুমি মেঘের ভাঁজে লুকিয়ে থাকবে।
যখন মেঘ সরে যাবে তুমি দৃশ্যমান হবে
আমি তোমায় আমার ব্যস্ততম
পুরো দিনের কথাগুলো বলবো,
সুখের কথাগুলো বলে হাসবো,
কখনো বা দুঃখের কথা বলে কাঁদবো।
কান্না পেলে তুমি আমায় ধমকে দিয়ে বলবে,
‘থামো! আর কত? হাসো এবার প্রাণখুলে হাসো।’
আমার হাসির শব্দে তারাগুলো যেন
আরো মিটমিট করে জ্বলতে শুরু করবে,
রাতের জোনাকিগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠবে,
থেমে থেমে হুতুমপেঁচা ডেকে উঠবে
আর জানান দিবে রাতের গভীরতা কতটুকু।
আমার হাসি দেখে তুমিও দূর আকাশে হেসে উঠবে
আবদার করবে তোমায় আকাশের ঠিকানায় যেন
প্রতিদিন চিঠি লিখে পাঠাই লাল নীল খামে।
আমি লিখবো অবশ্যই লিখবো
শত সহস্র চিঠি কিন্তু, তুমি পড়বে তো?
কাঠের পুতুল
মাঝে মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে হয়
চিরচেনা গন্ডি থেকে
কিছুটা দূরে সরে আসতে হয়।
তখন দেখবে মানুষগুলো
তোমার অভাব’টাকে কিভাবে প্রকাশ করে?
আদৌ কি তুমি তাদের প্রিয়জন
নাকি প্রয়োজন অচিরেই তুমি তা বুঝতে পারবে।
বুঝতে পারবে তোমার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু,
কে কিভাবে তোমায় মূল্যায়ন করছে
তা বোধগম্য হবে তোমার কাছে।
নিজের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিজের হাতেই রাখো
অন্যের হাতে তুলে দিলে তখন তুমি
কাঠের পুতুলে পরিণত হবে।
যে যেভাবে নাচাতে চাইবে
তুমিও ঠিক সেভাবেই নাচবে
সময় শেষে বুঝতে পারবে
সবকিছুই ষোল আনায় বৃথা।
অবশ্যই নিজের মনের কথা শোন
মন ভালো বা খারাপ দু’টোই বলবে
বিচার বিশ্লেষণ করে তবেই
নিজের পথ তৈরি কর এরপর পথ চল।
তবেই জীবন সুন্দর
তুমিও সুন্দর।
সুপ্রভাত
কোন এক কাক ডাকা ভোরে
হঠাৎ যখন আমার ঘুম ভাঙবে
দেখবো সকালটা খুব মিষ্টি
চারদিকের সবুজের সমারোহ
গাছের পাতার ফাঁকে সূর্যের আলো
এসে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে
মনে হলো যেন লুকোচুরি খেলায় মগ্ন।
আমি আলসেমি ভেঙে উঠলাম
জানালার পাশে এসে দাঁড়ালাম
দেখি ব্যস্ততম শহর
মানুষগুলো ছুটোছুটি করছে রোজগারের আশায়।
কেউ ভ্যানে সবজি, ফল, মাছ নিয়ে
বিক্রয়ের জন্য বসেছে
কেউ আবার ক্রেতা হয়েই
দর কষাকষি’তে ব্যস্ত।
পাড়ার মধ্যবয়স্ক ক’জন লোক
পরোটার দোকানের সামনে
লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে
আর বিরক্তি নিয়ে বলছে,
‘আর কতক্ষণ লাগবে ভায়া?’
এরপর হাতে পেয়েই দৌড়
ঘরের সবাই মিলে একসাথে বসে
সকালের জল খাবার খাবে বলে।
কিছু ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলে যাওয়ার
প্রস্তুতি নিয়েই বের হলো।
দল বেঁধে গল্প আর খুনসুটি
করতে করতে দ্রুত গতিতে
পা চালিয়ে হাঁটছে পাছে যদি
দেরীতে পৌঁছে ক্লাসের বাইরে
কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়!
আমি এবার চোখ রাখলাম
আমার সাজানো বারান্দায়
যেখানে টবে ফুটে আছে
গোলাপ, বেলি, গাঁদাফুল
আর কিছু মানিপ্যান্ট।
তারা যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে
স্নিগ্ধ দখিনা হাওয়ার সাথে
ডানে বাঁয়ে দুলছে আর
আমায় বলছে, ‘মেয়ে শোন! সুপ্রভাত।’
আরো পড়ুন- বদরুজ্জামান আলমগীরের কবিতা