পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- শাহিন চাষী

শুভ্রবাক

এই যে নদী চলছে ধেয়ে
পুলক মেখে, বিবিধ গেয়ে
দেখি অবাক চেয়ে;
এই নদীকেই দেখি কোথাও মূঢ়, বাধা পেয়ে।

এই যে তরু বিপুল শাখা
সবুজে ফুল সাজিয়ে রাখা
জাগায় সুখের পাখা,
এই তরুটাই ঝড়ের ঘাতে হঠাৎ বিষাদমাখা!

এই যে পাখি কূজন করে
সুরকে সাজায় থরে-থরে
কণ্ঠে মায়া ভরে,
এই পাখিটাও তীরের বিষে হয়তো ধুঁকে মরে।

এই যে আকাশ সূর্যবাহী
চন্দ্র-তারায় হৃদয়গ্রাহী–
দেখি অবাক চাহি;
এই আকাশই মেঘের ফাঁদে দুঃখে ওঠে গাহি।

জীবনটা ঠিক নদী, পাখি,
সুনীল আকাশ, সবুজ শাখী–
স্বপ্ন রঙিন রাখি;
জীবন জুড়েই কান্না-হাসির নিবিড় মাখামাখি।

 

ময়না ও ফিঙে

গাছের ডালে ময়না পাখি
মেলে কাজল ডাগর আঁখি–
একলা বোঝে বোসে,
মেঘের ঘায়ে আকাশ থেকে পড়ছে তারা খসে!

হাঁস-মুরগির ছানা দেখে
বলছে মাথায় মায়া রেখে,
শ্বাপদ জেগে আছে,
একলা-একা যেও না কেউ বাইরে, বনের কাছে।

কণ্ঠসুধায় সোহাগ ধরে
ফড়িংকে কয় উচ্চস্বরে,
সময় খারাপ হলো,
চোখ-কান সব খোলা রেখে সাবধানে পথ চলো।

ফিঙেরাজা দূরের থেকে
রুক্ষ হয়ে উঠছে খেঁকে–
তোর কেন বল জ্বলে?
দুঃসাহসে বাড়িস যদি থাকবি মাটির তলে।

ময়না শেষে ডাকলো সবার
প্রাণে-প্রাণে এলো জোয়ার:
সব হলো এক দলে,
ডানাভাঙা ফিঙেই শেষে ভাসে চোখের জলে।

 

বিচার কাহিনী

ঘাটের মরা আতর আলী করলো মূলো চুরি,
আমজনতা খুব চালালো উপহাসের ছুরি!

পিঠের উপর রূঢ় চাবুক গড়লো গভীর ক্ষত,
মুখটা তবু শব্দবিহীন বোকা-বোবার মতো।

মেথর-মুচি পাড়লো গালি বাবা ও মা তুলে,
কেউ চালালো ধারালো ক্ষুর রুক্ষ সাদা চুলে।

কেউবা দিলো প্রবল লাথি মলিন মুখের পরে,
কেউবা বলে পিছন দিয়ে বাঁশটাকে দে ভরে।

রক্তমাখা বিবশ দেহ কাঠগড়াতে শেষে,
সাজা শুনে দুচোখ তুলে আতর ওঠেন হেসে!

হাসির সাথে ঝরে পড়ে ঘেন্না রাশি-রাশি:
পুকুরচোরের জোটে মালা মূলো চোরের ফাঁসি!

বিচারকের মেজাজ, আগুন– মুখে কেন হাসি?
আতর বলেন,” ন্যায়ের সাথে আছি পাশাপাশি!”

সুধা

এই তরুটা আমার;
রৌদ্রদিনে তোমার পাশে
ক্লান্তি যদি ফোকলা হাসে,
ভাগটা নিও ছায়ার।

গড়েছি এই নদী;
বোসতে পারো তীরে এসে,
নিতে পারো জলও শেষে,
লাগলো কাজে যদি।

আমার আছে বাঁশি;
হাঁটলে বিষাদ অন্তপুরে,
বাজাও তারে বিবিধ সুরে,
দুঃখরা যাক ভাসি।

আমার বসতবাড়ি:
বৃষ্টি-আঁধার পথের বাঁকে
আসলো যদি দুর্বিপাকে,
ভুলো দ্বিধা, আড়ি…।

আমার সুরের সুধা
দু’হাত ভরে ইচ্ছেমতোন
নিতে পারো যখন-তখন,
বাণীর যদি ক্ষুধা।

তোমার-আমার বুকে–
আমি-তুমি আসন পেলে,
যাবে না আর নগ্ন খেলে
নিলাজ সর্বভূকে।

উমক, যশোর।
২৭| ১০ |২০২৪

 

 

আরো পড়ুন- শাহিন চাষীর কবিতা