একগুচ্ছ কবিতা- শাহিন চাষী
গণক ঠাকুরের খোঁজে
আগুনে জ্বলছিল সমাজ–
শোককাতর গাছের নীচে পাথরের মূর্তির মতো
ছাইরঙা মাছ,পাখি, জোনাকি ও অন্যান্য ।
একজন গণক
সময়ের রেখা গুনে বলেছিল,
শনির বলয়ে দ্রুতপায়ে নেমে আসছে রাহু,
ইবলিশ মরলেই সাদা পতাকা পতপত!
তারপর বহু জল মিশে গেল মোহনায়
কান্না ফুড়ে ফুটলো না হাসি–
মাটির বুক ক্রমশই উত্তপ্ত বালির সমুদ্র!
হঠাৎ একটি মানুষ উধাও,
অতঃপর–
নদীভরা ফুল,
গাছভরা মাছ,
ফলভরা ঘাস…
আমি এখন গণক ঠাকুরের খোঁজে ঘরছাড়া।
লাশ
বোধভর্তি মাথা
ক্রমেই ডুবে যায় স্যাঁতসেতে মাটির গহীন গর্তে
মাইলপোস্টের মতো স্থবির পা!
ঘাম ছুটিয়ে বাঁকাই চোখ,
কাঁধের উপর চুপচাপ ফুটফুটে আছিয়া–
স্থির কর্ণিয়ায় শিশিরের মতো
নীল যন্ত্রণা,
চাপা অভিমান,
তীব্র বিদ্রুপ…।
কাঁপে ঠোঁট ,
জ্বলে ওঠে ঘেন্নাদ্ভুত আগুন–
দীর্ঘশ্বাস ঠেলে উঠে আসে তরল উপহাস,
চারপাশে নির্বাক ইয়াসমিন, নুসরাত, তনু…!
বুকে কান পাতি–
ভেতর থেকে গলগল সবিনয় ধ্বনি,
হে পুরুষ! পৌরুষে বাঁচো–
পশুর সাথে বেড়ে যাক দূরত্ব!
শোক নামে–
ব্যক্তিগত লজ্জায় নীল হয় কিশোরীর ফ্রক,
ফ্রকের নীচে কঙ্কালসার স্বদেশের লাশ!
মানুষ
(১)
মানুষ দেখলেই
চোখের সামনে ফুটে ওঠে বিচিত্র-বর্ণিল ফুল।
যদি মন চায়
শয়তান অথবা পশু দেখতে
আমি একমনে অপলক মানুষ দেখি।
(২)
যথাযথ বুঝি
ইবলিশের কাঁধে হাঁটে-চলে মানুষ;
তবুও রুদ্ধবাক!
ঈশ্বরের কল্পনায় চোখের সামনেই মাছ
মানুষের দীর্ঘ সারি।
মোনালিসার পোট্রেট
সর্ষেফুলে আবীরের ঢেউ–
উপমায় সজ্জিত শব্দের সুদীর্ঘ মিছিল ঠেলে
আমার সামনে চুপচাপ মোনালিসা!
কবিতার দীর্ঘশ্বাস ফেলে
মুখ থেকে উড়ে আসে কৌতুহলী প্রশ্ন
তোমার জ্যামিতিক হাসির সত্যিকার রহস্য কী?
রেখেছো কী ধরে ঘুমকাড়া ঐ চোখের গহীন তলে?
বাতাস সজাগ,
মুহুর্তেই চুপচাপ পাখি– একাগ্র মনযোগ,
কান তুলে শান্ত নদী– বোবা আকাশ,
পলকহীন আমার চোখ–
মনের কোষে উত্তেজনার সরল স্পর্শক!
মুখ খোলে মোনালিসা
একদিন ভিঞ্চি বলেছিল মাথাহীন বুদ্ধিজীবীর গল্প
সেই থেকে এই ঠোঁটে বিস্ময়মাখা হাসি,
সেই থেকে চোখ দুটো রহস্যের ঘেরাটোপ!
আকাশ-নদী-পাখি
সরল স্বরে আমাকে বললো কিছু বুঝলেন কি?
আমার চোখে আমাদের মিলিত মুখ!
মাথা
কান টানলে মাথা আসে এই কথাটি জানি,
ধরতে কালো বসে-বসে তাই যত কান টানি।
আপনমনে স্বপ্ন দেখি পড়বে বিড়াল ধরা–
মাটিতে নেই এতটুকুও আলো-জলের খরা।
চোখের মাঠে ছায়া ভাসে বাতাসদোলা ফুল,
পাতার ফাঁকে সুরে মাতাল মৌমাছি-বুলবুল।
কত সুখের জাল যে বুনি বাবুই-চড়ুই ঠোঁটে
সরল হাসি হরিণ হয়েই সবুজ ঘাসে ছোটে।
হঠাৎ করেই বলে আকাশ বুকের কাছে এসে
যতই টানো কানটা ধরে নেই যে মাথা শেষে!
উদাস মনে খটকা জাগে বিস্ময়ে বুক ফাটে
সত্যি কারো নেই যে মাথা বিক্রি গেছে হাটে!
আরও পড়ুন- আনিসুর রহমান অপুর কবিতা