একগুচ্ছ কবিতা- সিয়াম আল জাকি
পঙক্তি
মুখমন্ডলের ভেতর লুকিয়ে থাকা মন ও মস্তিষ্কনীর্ভর পঙক্তিগুলো প্রকাশ পাবে আজ।
পঙক্তিগুলো প্রাচীন বটগাছের নির্মল কোমল ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো একসময়
সিগারেটের আগুনে গোলাপ পুড়িয়ে ফেলে বলতে চেয়েছিলো এই সব জাগতিক প্রেম, আবেগ কিংবা ভালোবাসা সব কিছুই বৃথা।
রক্তাক্ত পঙক্তিগুলো সকল দ্বিধার দুয়ার ভেঙ্গে ফেলে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলো
শুধুমাত্র চিঠি না পাওয়ার বেদনা এবং আকাঙ্ক্ষাময় যন্ত্রনাকে উপেক্ষা করবে বলে।
সকল বিপ্লব সকল আন্দোলন যে কতটা অসম্ভব এবং মানুষের পেন্ডুলামের ন্যায় দোদুল্যমান আদর্শ যে ঠিক কতটা ফাঁপা তা নির্দেশ করে পঙক্তির প্রতিটি ব্যর্থ আন্দোলন।
রাস্তার মধ্যখান থেকে ধ্বংস হয়ে আবার জেগে ওঠা বিষন্নতা খোঁজ করে পঙক্তির।
পঙক্তিগুলো ধরা দেয় না, তীব্র রোদের ঝলসানো রাস্তার উত্তপ্ত কংক্রিট থেকে সে শুরু করে কোন এক খরস্রোতা নদীর অববাহিকার গতিপথ।
আমরা অবশেষে অসীমের কাছে নালিশের সুরে প্রশ্ন করি কী হলো কোথায় গেলো তোমার সেই মায়াবী আশীর্বাদ?
আমরা উত্তরের অপেক্ষায় থাকি, অপেক্ষা করতে করতে আমাদের হৃদয় গলে যায়, চোখ পচে যায় এবং নিউরনের প্রতিটি স্পন্দন জানান দেয় অসারতার।
কিছুক্ষণ পরে উত্তর আসে, প্রথম প্রথম উত্তরের ভাষা আমরা বুঝিনা।
আরো কিছু সময় পর সব বুঝতে পারি
উত্তর হলো; পঙক্তিগুলো আর নেই তারা এখন চিরতরে মৃত অবস্থার আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়েছে।
আমরা এই উত্তর শুনে আনন্দ করি
উল্লাস করে বলি
এইবার বুঝি আমরা মুক্তি পেলাম সত্যিকারের যন্ত্রণা থেকে।
প্রতিক্রিয়া
বিরক্তি থেকে উৎপন্ন আক্রোশের কথা
রাগ করে আছে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান
সময় ফুরিয়ে যায় না চেতনার সামনে
প্রেম করবে বলে ফাঁসিতে ঝুলানো হলো
জীবন পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা জড় পদার্থ
ব্যক্তি আমি হিসেবে পরিচয় দেওয়া লজ্জাজনক
জাতি আত্মপরিচয়ের অহমিকায় জর্জরিত
প্রশ্ন এমতাবস্থায় যার অনুসন্ধান নিষিদ্ধ
পরিবার বিধ্বস্ত এক আবেগের নাম
আবেগ একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের নাম
সম্পর্ক মৃত অবস্থায়ও বেঁচে থাকা উচিত
মৃত্যু চিন্তাভাবনা করার জন্য চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত
মানুষ না থাকলেই ভালো হয়
তুমি থাকাটা আবশ্যক মানুষের জন্য।
পরিচয়
কোনো অজুহাতের অস্তিত্ব নেই
নিজের কাছে নিজের আর নেই কোনো ব্যখ্যা
দুপুরের খাবারের আয়োজনে সবার শেষে
নিজেকে দেখতে পাওয়া
ব্যপারটা তেমন কিছু না
কোনো অযথা বাক্যালাপের প্রয়োজন নেই আর
নিজেকে অনেক কিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার জন্যও কোনো ব্যাখ্যা নেই
আয়নার কাছে গেলে যাকে দেখতে পাওয়া যায়
তারও আর কোনো অস্তিত্ব নেই
নিজের কাছে নিজের পরিচয়
এখন অর্থহীন।
সন্ধা
শূন্য উদ্যানের নিকটবর্তী কোনো স্থানে নিজের সাথে নিজের শেষ কথা
অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তেও অন্ধকারের
জন্য তীব্র ঘৃণা
পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা কালো সবুজ রঙের বিকেলে গোধূলির প্রথম প্রহর
মানুষ তার হিসেবি মন নিয়ে আমাকে
মাপতে বসে
কল্পনার মায়াজালে বন্দী হয়ে যোগবিয়োগ করার কারণে তাদের মারাত্মক ভুল হয়
সময় গড়িয়ে যায়
সন্ধার ধাঁধায় গুলিয়ে ওঠে আমার ব্যক্তিত্ব
অনুভব করি কোনো একজনের তীক্ষ্ণ কষ্টের যুক্তিতে আজ নিশ্চিত আমার পরাজয়
তবুও লেপটে থাকা কালো সবুজ রঙের রুপান্তরিত সন্ধায় আমার সাথে প্রায় সবার শেষ দেখা হয়।
প্রয়োজন
তেলচটচটে অবস্থায় এক লোক দাড়িয়ে আছে আমার পাশে
এখনো দাড়িয়ে আছে
আমি জানি রাস্তা পার হওয়ার সময় সে মারা যাবে।
রাস্তায়
তার চোখের মণি দুটো পরে থাকবে।
একটি কাক তার ঠোঁটে করে নিয়ে যাবে মণিগুলো। তার বাচ্চাদের জীবন্ত মারবেল দিয়ে খেলার খুব শখ।
আজ তাদের শখ পূরণ হবে।
তাই লোকটাকে বাঁচানোর প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন- মান্নান নূরের কবিতা