একগুচ্ছ কবিতা- আশরাফ চঞ্চল
লজ্জা
অনেক বছর আগে পাড়ার এক সুন্দরী কাছে ডেকেছিল
আমি লজ্জায় যাইনি
সেদিন, রাস্তায় তার সাথে দেখা
বললাম, কাছে আয় তো দেখি!
সে লাজুক হাসি হেসে দ্রুত বেগে চলে গেল
এখন আমার লজ্জা নেই আর
সে ভীষণ লাজুক!
সঙ্গম
পাশের ঘরের ভাবি প্রতিদিন সকালে গোসল করত
আমি তখন প্রাইমারিতে পড়ি
সকাল বেলার গোসলের আদি অন্ত বুঝতাম না
একদিন প্রচণ্ড শীতের সকালে আমার সরল প্রশ্ন
ভাবি, এত ঠাণ্ডায় জলে নামতে তোমার খারাপ লাগেনা?
‘কতটা খারাপ লাগে বড় হলেই বুঝবি’
সঙ্গম শেষে আমিও এখন কাঁপতে কাঁপতে জলে নামি!
চুম্বন
একদিন আব্বা আর আম্মাতে প্রচণ্ড ঝগড়া বেধে গেল
ঝগড়ার মূলে লিপস্টিক
আম্মা চিল্লায়া বলছে, আমি তো রাতে লিপস্টিক লাগাইনি
তোমার ঠোঁটে গোলাপি ওই দাগ এল কোত্থেকে?
আব্বা কাচুমাচু ভঙ্গিমায় আস্তে আস্তে আম্মাকে কী বলেছিল জানিনা
সে বার আম্মা রাগ করে নানা বাড়ি চলে গিয়েছিল
আমি এখন ঘরে বউ রেখে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে মনে মনে ভাবি
আব্বাও বোধহয় সেদিন রাতে অন্য নারীর লিপস্টিক মাখা ঠোঁটে এভাবে চুমু খেয়েছিল!
চুরট
আব্বা খুউব চুরট খেতেন
প্রথমে বক মার্কা
পরে পাইলট
আম্মার কাছে ধোয়া ও ঘ্রাণ বিশ্রী লাগত
এই নিয়ে ঝগড়া হত রোজ
কোনোদিন চুরটের বাণ্ডিল চুলায় দিতেন
অথবা পুকুরে ডুবিয়ে মাছেদের দিয়ে দিতেন
চুরট খেতে খেতে আব্বার ঠোঁট দুটো কাল হয়ে গিয়েছিল
এখন আম্মা নেই
কী ভেবে আব্বাও আর চুরট খান না!
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আব্বাকে প্রায়ই কাঁদতে দেখি
শুনেছি,স্বামী কাঁদলে নাকি স্ত্রী বেহেশতি হয়!
চিঠি প্রেম ও বিয়ে
বিয়ের আগে আব্বা নাকি আম্মাকে চিঠি লিখত
চিঠি লিখতে লিখতে প্রেম
তারপর বিয়ে
ডিজিটাল এই যুগে এখন কেউ চিঠি লিখেনা
মোবাইলে মোবাইলে চ্যাট
ডেটিং
ছুঁয়াছুঁয়ি!
যুগ
আগেকার যুগে মেয়েদের তলপেট ব্যথা শুরু হলে লজ্জায় মরত
চুপিচুপি নেকড়া খুঁজত
এখন লজ্জা শরমের বালাই নেই
বয় ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে বলে, ’আমার না পিরিয়ড চলছে
ঘরে ন্যাপকিন নেই
নিয়ে এস!’
স্মৃতির ইস্কুল
অনেক দূরে স্কুল ছিল
আমরা পাড়ার সব ছেলেমেয়ে দলবেঁধে স্কুলে যেতাম
দুরন্তপনার অন্ত ছিলনা
ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী সালমা আমার প্রেমে পড়ে গেল
আমি নায়ক শাহরুখ খানের মত ভাব নিয়ে সারা স্কুল মাতিয়ে রাখতাম
একদিন সালনা স্কুলে এসেই আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল,তাতে লেখা
‘কাল আমাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে
যে করেই হোক ফিরাও আমাকে’
আমি কিছুই করতে পারিনি
এই আফসোসে এখনও চোখের জল ফেলি!
অন্দরমহল
বৃষ্টির রাত এলে ঘুমিয়োনা ওগো রাজেশ্বরী
আমি সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে
চলে আসব তোমার কাছে
অচেনা এক রাজপুত্তর
ঈশ্বরের দোহাই দরজায় দিয়োনা খিল
তুমি আমি জলের নূপুর পরে
সারারাত বৃষ্টিজলে ভিজব
অন্দরমহল হয়ে যাবে নদী
ঠোঁটের কার্নিশের নেশার আদ্রতা মেখে
পুরো দেহে বইয়ে দেব চুম্বনের ঝড়
গোপন উপত্যকায় চুমুক দিয়ে
টেনে নেব সবটুকু মহুয়া নির্যাস!
স্মৃতির ভূগোল
আম্মাকে খুউব মনে পড়ে
ঈদের দিন এলে
গাছের নারিকেল দিয়ে
হাত বানানো সেমাই রাঁধতেন
বাজার থেকে সোডা এনে
পুরনো জামা কাপড় সেলাই দিয়ে
ধুয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতেন
গরু কুরবানি দেওয়ার সামর্থ না থাকায়
ঘরে পালা মোরগ জবাই করে
কষানো মাংস দিয়ে আমাদের ভাত খেতে দিতেন
এখন সব আছে
শুধু আম্মা নেই
ঈদের আনন্দ নেই
আরও পড়ুন- এনামূল হক পলাশের কবিতা