পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- নজর উল ইসলাম

একা পথিক

আমি যত একাকার করি সাজাই বটের পাতা

তুমি ভাঙো ঘর মন সাতকুটি ভেতরের অঞ্চল

হিরণ্য হারিয়ে একা পথিক অনু্ক্ত

 

বাঁশিহীন বাঁশি এ আলোবিন্দু পথে

কোন রঙ নেই শুধু জীবন্ত ধ্বংসাবশেষ

পাথরের পথ প্রকৃতি সাজ আমার সাজ

 

গোধূলির আকাশে গুটিকতক বক ওড়ে

গন্তব্য চেনে তারা— স্মৃতি কেবল পালক

লুকনো তোমার দেহমনে এক আজন্ম বাসা…

 

মায়াভূমি

আত্মকথায় শিল্পিত জোনাকির অচেনা দিনমান

অনুক্ত মনকাজলে অলেখা বিস্মৃতির জীবন

পালকঝরা উদ্ভাসে মন লুকনো মরুভূমি

পৃথিবীকে দাঁড় করিয়ে বুঝি সে মহামন

 

যখন একা হই পাথর বুকেও অপরূপ ভাসে

জলের ইচ্ছায় মেঘ যেন ঝরা বকুল

হারানো আগুন আপন কোলাজের মুখ

সাঁতরে ওঠে ভুবন মোহিনী স্বপ্নসুখ

 

যতই নকশা করি আয়নায় উৎসব

মুখ ও মুখোশ খুলে রোদ্দুর যাপন

ভাঙন মগ্ন হাসি বুঝে ফেলে সব

পাখিটা আপন ভাষার সুতীব্র রুমাল

 

জলটোপ খেলা খেলা বন্দনা বশে

শিহরণ জাগায় নিদারুণ প্রতিদিন

খুবলে আঁচড়ে নিমেষে উধাও

শুধু তাজমহল নামটি যা আছে…

 

আপনজন 

তোমাকে সাজাই পাখি করি চাঁদ-তারা সমবেত ঢেউ

প্রাণীত মায়াছোঁয়া হলদে হাওয়ায় বুক থরথর অন্য কেউ

নিজেও জানো, মেঘে মেঘে কী কথা হয় কী তুরুপ তাস

ডানা ভাঙা আর ছেঁড়া পাঁপড়ির আপাত মনবাস

ওই দ্যাখো ওই ভাঙছে নদী ওই দ্যাখো চালাঘর

ভুবনপুরের মাঠে আরও ধান কচিয়ে বসেছে সংসার

 

বাঁকের কাছে পুকুর পাড়ে একরত্তি কৃষ্ণচূড়া

তুলনাহীন সৃজন শেখে জলে চরে তার আড়ামোড়া

করিডোরে নিদ্রাভ্রমে নিবেদিত সুয্যিফুলের প্রাণ

শ্রাবণে ফোঁটায় ফোঁটায় দরদে লেখা হয়ে যায় নাম

আমার ভূগোল মাঠের পরে খোঁজে সারা দিনমান

মনচোরা কিছু পাখির ভেতর অসামান্য আপনজন!

 

আবহমান

আগুনের অমরতা পুষি বিস্মৃতির চিরায়ত জালে

আলোর জোনাকি সাজে অপরূপ ঐশ্বর্য অক্ষরে

রাত্রির নিদর্শন আভূমি ছড়িয়ে অন্ধকারের চোখ

নিপুণ সমাজতান্ত্রিক মনে রেখো গভীর শোক

 

যতদূর জানি বয়ঃসন্ধির প্রশ্নচিহ্নে মুখোশহীন বিপণন

খুলে যায় গানের মন্ত্রে জ্বলন্ত পরিবেশ সমর্থন

মোহনশীল মনজমি বিশ্বাসযোগ্যতায় হাসে

নিঝুম নির্জনে বাগানের মুগ্ধতায় শ্রেণিশত্রু ভাসে

 

আপন উদ্ভাসে উন্নত আকাশি পথেই প্রমাণিত

সর্বহারা প্রাণপণ দোলাচলে শীর্ষ ছুঁয়েছে হরদম

মহাকাল চিনেছে নিঃসঙ্গ ভ্রমরের প্রবল খেলা

রোদ্দুর ভিজেছে ঠিকই টগবগে লজ্জায় আঙরাখা

 

পাখির প্রণয় ঘরে সহজপাঠ্য কী জানি ফুটল ওই

ইচ্ছডানার আকুতি শুধুই অনন্তে অদূরেই

প্রেমখুশির আলোছলে ভরা মনজমিন

সমর্থন-সময় আলোবিন্দুর গোপন আপনজন

 

শিকারি ফিঙে উপোসী রাজাকার যদিও ধরে নিই

পাঁকাল চরিত্র ডোবে মান্যতায় হাসে সবাই

ব্রিলিয়ান্ট মেধায় পরিবেশ সুকুমার ডাকে

বঞ্চিত খাঁচায় অল্পস্বল্প অখন্ড সংসারে…

 

আরো পড়ুন- নজর উল ইসলামের আরো কবিতা