পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- আশরাফ চঞ্চল

তৃ্ষ্ণা

বুকফাটা তৃষ্ণায় একটা

জলাশয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।

স্বচ্ছ জলের আয়নায় চুমুক দিয়ে বুঝলাম

এ যে নুনের শরবত!

 

বশীকরণ

ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী দিলরুবা আকতার।

অবিকল আফ্রোদিতির মতো চেহারা।

কাজল টানা চোখে যেন যাদুর স্পর্শ মাখা।এ

কবার তাকালে সর্বাঙ্গে অন্যরকম ঝড় বয়ে যায়।

আমি কাছে গেলে সে দূরে চলে যায়। আমাকে পাত্তা দেয়না।

একদিন এক কবিরাজের কাছে গেলাম।

তিনি আমাকে বশীকরণের ধুলা পড়া দিলেন।

ওই ধুলা ছিটিয়ে দিলাম দিলরুবার শরীরে।

ফলাফল শূন্য

 

ভাংতি পদ্য

আমার মৃত্যুকালে শিথানের পাশে বসে

মাথার এলোমেলো চুলে বিলি কাটবে তুমি

চোখ গড়িয়ে ঝরবে লোনা জল

এ বিশ্বাস আমার নেই!

জগতের সব মেয়েরাই লোভী

দুঃসময়ে দূরে চলে যায়!!

 

নিলাম পর্ব

যেদিন নিজেকে নিলামে ডাকলাম

তোমাকে ছাড়া অন্য কোনো ক্রেতাই ছিলোনা

দরদামবিহীন অতি সস্তায়

কিনে নিলে আমাকে!

এখন বুঝেছি,জীবন নিয়ে খামখেয়ালি করতে নেই

সময় তো দ্রুত ফুরিয়ে যায়

পস্তানোর ফল যে শুধুই দীর্ঘশ্বাস

অঝোর ধারায় কান্না!

 

ঠোট ও নদী বিষয়ক

ঠোঁটে চুমুক দিলে

নদীতে অমৃত রস

লুটোপুটি খায়

 

শরীরে জেগে উঠে

ঘূর্ণি সমেত ঝড়

আচানক ভালোলাগ!

 

নাক জানে-

নদীর কোন খোড়লে

লুকিয়ে আছে  কস্তুরী

সুবাস!

 

নেতা

যে মহল্লায় থাকি

সেখানে বাজে লোকের বাস

কেউ গুন্ডা কেউ মাস্তান

নেশাখোরের অভয়ারণ্য!

 

যেদিন টুপি পরে মসজিদে গেলাম

অনেকেই খিলখিল করে হাসল

বিদ্রুপাত্বক উক্তি-

চরমোনাই না ফরিদপুরী!?

 

তারপর ট্যাবলেট ব্যবসা শুরু করলাম

হাতে টাকা এল

নারী এল

এভাবেই নেতা হয়ে গেলাম!

 

বেকার 

পড়ালেখা শেষ করে

চাকরি খুঁজেছি

পাইনি

 

বেকারের কোন মূল্য নেই

সবার কাছেই

উপদ্রব

 

দিলরুবা হাতে মেহদি মেখে

কাঁদতে কাঁদতে

চলে গেল

 

আমার ভাগ্যরেখায় সুখ নেই

শুধু অসুখের ছড়াছড়ি

কষ্ট আর কষ্ট

 

সিঁড়ি

রোজি চাম্বুগং

চেপ্টা নাকের দ্রোপদী মেয়ে

ছোট ছোট চোখে কী অনুপম দৃষ্টি!

 

সেদিন বিরিশিরির আকাশ জুড়ে

শরতের থোকা থোকা মেঘে

চকমকা জ্যোৎস্না ছিল

আমার চোখে  নেশার আফিম ছড়িয়ে

গারো পাহাড়ের উপত্যকা বেয়ে বেয়ে

মান্দিপাড়ায় নেচে গেয়ে

মেতে উঠলাম চ্যূঁ উৎসবে!

 

আহা! কী আচানক সিঁড়ি

ভাঁজ

গিরিখাত

ঠোঁটের আদ্রতায়

লবণের মত স্বাদ!

 

পীর

আমাদের গ্রামে ফসলের মৌসুমে

চাঁনপুরের লম্বা চুলওয়ালা

পীর আসত

শান্ত সৌম্য চেহারা

অবিকল মেয়েদের মত দেখতে

ভক্তরা তাদের পায়ে চুমু খেত

মোরগ জবাই করত

রান্না শেষ হলে

মেয়েরা এসে পীর বাবার শরীর টিপত

তারপর  ফুরফুরা মনে গোসল করত

বাবার জন্যে সাতখুন মাফ

হোকনা ডলাডলি বাবা আর বউয়েতে

এতেই ধন্য বরং শরীর হবে পাক!

মারফতি বাবা এক ভক্তের অবিবাহিত

মেয়ের সাথে ফূর্তি করতে গিয়ে পেট বাধিয়ে ফেললে

মেয়েটি গলায় দড়ি দিয়ে মরল

সেই থেকে পীর বাবা আমাদের গ্রাম ছাড়ল

 

আরো পড়ুন- আশরাফ চঞ্চলের আরো কবিতা