একগুচ্ছ কবিতা- সবুজ জানা
আয়না
গুগলি আর শামুকদের ঘরে আয়নার ব্যাবহার নেই।
সাজগোজ বাদ দিয়ে মানুষেরাও আয়নার সামনে দাঁড়ায় না
সত্যকে সহ্য করার সাহস বন্ধু যাদের নেই
আয়না তাদের চোখে আঙুল দেবেই।
যদি ভেবে থাক আয়না তোমার টাকায় কেনা
অতএব ওর গড়ন হবে তোমার কথামত চরম অনুগত
এমন ধারণা নিয়ে আয়নার ব্যাবসাদার হওয়া যায়
আয়না না।
এসো বন্ধু, আয়নার সামনে দাঁড়াই।
বেশরম হলে অন্য কথা।
পদ্ম মধু
আগুনে ফেনার ভেতর আবহমান শুয়ে আছে রৌদ্রপায়ী সৈকত
সাংসারিক বিষে নীল হয়ে আসা নাবিকের চোখ
তাকিয়ে আছে জলে
ক্রমাগত বৈষ্ণব বিনয়ী ঘরানার ঢেউ উঠে
আর ধুয়িয়ে দেয় নরনারায়নের পা…
অখণ্ড ভারতবর্ষ পবিত্র হয়ে ওঠে
জগন্নাথ ঘাটে ডুবে যায় আমাদের চৈতন্যদেব
এমন করে ডুবলে যুগে যুগে ভেসে ওঠা যায়।
আমরাও এক একজন লোটাস ইটারেরই অবতার
স্ত্রীর দেওেয়া কমলালেবু আছে অফিস ব্যাগের ভেতর
জিভের স্বাদ নিম্ন মধ্যপন্থার পদ্ম মধু।
হালখাতা
ভাঙ্গা উনুনটাকে মাটির প্রলেপে সারিয়ে নিচ্ছে আমার মা
পরিবারের ভরপেট খিদে প্রশমনে জ্বলে উঠবে আগুন
…বুকে।
এ আগুন জ্বলে ওঠা ও নিভে যাওয়ার মধ্যে
বিজ্ঞাপন ছাড়া সরকারের কোনো সহযোগিতা নেই।
সমালোচনা ছাড়া সমাজেরও কোনো দ্বায়বদ্ধতা নেই।
নববর্ষে দোকানের বকেয়া খাতা থেকে হিসেব নিয়ে
হালখাতার চিঠি পৌঁছে দিয়ে গেছে আমার পকেটে
সে পকেটে আমার শ্রমজীবি হাত সঞ্চয় ভরে দিতে দিতে
আমার যৌবন পরিত্যক্ত কাগজের ঠোঙা…
একটা অদৃশ্য স্বতঃস্ফূর্ত ফুলকিতে ছাইহীন পুড়ছে হৃদয়
বুক পকেটে সৌজন্য আমন্ত্রণের সাথে বকেয়ার চিরকূট
আগুনের পাশে থাকলেও সে হিসেব পোড়েনা কোনোদিন
কপালের লেখার মত
নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে…
হাজারও চোখের ভীড়ে
হাজারও চোখের ভীড়ে সেই চোখ চেনা খুব কঠিন
যে চোখে চোখ রেখে অনায়াসে প্রেমে পড়া যায়।
পাশপাশি ধর্ষকও প্রেমিকের মত চেয়ে থাকে সুচতুর
গুলিয়ে ফেলি প্রেমিক আর ধর্ষকের চোখ কোনটা?
আমার নগ্নতা সঠিক পুরুষ খুঁজে নেবে তাই
শাড়ির আঁচল ছাতির উপর থেকে নামিয়ে দিলাম।
অত:পর খুলে ফেলছি একটি একটি ব্লাউজের হূক!
তুমি ধর্ষক হলে রিপুর তাড়নায় লোভে পড়বে নিশ্চয়
কামুক আমায় পেতে চাইবে শরীরে। শুধুমাত্র শরীরে।
আর তুমি আমার শারীরিক নগ্নতার চৌকাঠ ডিঙিয়ে ভেতরে এলে
নারীর অন্দরমহলে স্বাগত তোমায় আমার বিশ্বাসের পুরুষ
আমার ভরসার পুরুষ। ভালবাসা নিও।
যোগফল শূন্য
অনেক হল দেখা। অনেক। যথেষ্ট।
এ মাটিরই উপর পথগুলো পথভ্রষ্ট….
রাঙা-বাউল বাঁশী
হল সন্ন্যাসী।
অনেক পেয়েছি। অনেক। বুকভরে। আঁচলভরে।
অবহেলা থেকে সম্মানিত মাটির ঘরে।
ওগো গৃহী
কর জবাবদিহি।
প্রতারক। জানিনা তুমি কি চাও?
আমার আমিকে খুঁজে নিতে দাও।
ওগো পোষ্য
তুমি নমস্য।
মাথাভরে। হৃদয়ভরে। অনেক জানার পরে
থেমেছি কালো বিড়ালের ইশারায় সংস্কারে।
এই শোন্
আমি মাইলষ্টোন।
পড়ন্ত বেলায় চরম হিসেবী চরণচিহ্ন।
বোকা বানিয়ে আমার যোগফল শূন্য।
শেষ অস্ত্র
আমার বানপ্রস্থ।
আরো পড়ুন- জামিল হাদীর কবিতা