একগুচ্ছ কবিতা- সিয়াম আল জাকি
চেতনা
জিঘাংসার গলিতে মুখ থুবড়ে পড়ে ‘ চেতনা ‘ নামক ভয়মিশ্রিত আবেগ
নীল থেকে সদ্য বেগুনি হয়ে ওঠা তার পানসে ঠোঁট প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে সেইসব স্বপ্নের যেগুলো
এখন প্রায় অস্তিত্বহীন।
চির সংগ্রামী প্রেমিক চরিত্রে অভিনয় করতে পারার দক্ষতা অর্জন করতে পারার সফলতার পর সে একটা কথা বুঝতে পেরেছে যে দৃঢ়তার চেয়েও এক সত্য এই ভুবনে
বিদ্যমান আছে, তা হলো লৌকিকতা।
শব্দটিকে তুচ্ছ মনে হতে পারে কিন্তু যার চেতনার রঙ সবুজ থেকে ধীরে লাল এবং নীলে পরিণত
হয়েছে সে জানে শূন্যস্থানে আবার শূন্য বসানো
কতোটা অপ্রাঙ্গীক এবং হাস্যকর।
অন্ধদের উদ্দেশ্যে
রেখাগুলো তবে মুছে যাক
শুরু হোক নতুন উদ্বোধন হওয়া হাইওয়ে
মেঠোপথের স্মৃতিগুলো অমলীন থেকে যাবে তা ঠিক
কিন্তু, তোমরা একটা কথা অস্বীকার করবেনা
আশা করি, তা হলো তোমরা চাও স্মৃতিগুলো যেন অতীতে বেঁচে থাকে বর্তমানে না।
জানি, বর্তমানে স্মৃতিগুলো যদি জেগে ওঠে তবে তা ভবিষ্যতের জন্য হবে বিষফোঁড়া।
রক্তিম জবায় নীল রঙের কাব্যিক বেদনা খুজতে
যাওয়া তোমাদের মন একটা কথা কোনোদিনও
বুঝবেনা যে নন্দনতত্ত্বের আড়ালে তোমরা লুকিয়ে রাখো সৌন্দর্যের কপটতা।
বিপ্লবের ঝান্ডা হতে চাও তোমরা! অবাক
হয়ে যায় তোমাদের এই কথা শুনে
আরে তোমরা তো সেই লোকজন যারা
শ্বেতসারের প্রয়োজনে বেচে দাও
চিরকাল লালন করা স্বপ্নকে।
যদিও তোমাদের স্বপ্নগুলো হয় নতুন নতুন
মহাপরিকল্পনার মতো অর্থহীন
আর কপটতায় ভরা।
আমদানি করা নতুন বৈদেশিক শব্দগুলোকে আঁকড়ে ধরে তোমরা প্রতিনিয়ত
প্রমাণ করতে চাও যে তোমরা সংগ্রামী?
প্রশ্নগুলো বোধহয় কঠিন হয়ে যাচ্ছে খুব বেশী
বুঝতে পারছি।
কিন্তু, একটা কথা কী বলতো, এখানে কবিতা লেখার সংগ্রাম চলছে সরল বিপ্লবে দুনিয়া
উদ্ধার করা হচ্ছে না
এই কথাটা বুঝতে হবে, তা বুঝতে না পারলে
আত্মহনন করতে হবে
আসলে তোমরা তাই করছো প্রতিনিয়ত।
ক্রিসমাস ট্রি
ধাতব উৎসবের মৌন মেঘের ছায়ায় ঢেকে যাওয়া রাত
কাল- মহাকালের সুরের মূর্ছনা শুনতে পায় এক জনৈক
অনুভূতির চিৎকার এবং অসামান্য ক্রুরতা
সাক্ষী আছে কোনো এক পলাতক আসামী।
ঘুমের অতলে হারিয়ে যাওয়া এক মহাত্মা
জেগে উঠেছে অসহ্য স্বাধীনতা
সবুজ কালো কোটের এক অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক।
চুরুটের ধোঁয়ায় জ্বলছে মশাল
রাত গভীর তন্দ্রারা এখনো জাগ্রত
তুচ্ছতার প্রতিধ্বনির শাণিত শব্দ শোনা যায়
অপেক্ষায় আছে চিরকালের সংজ্ঞাসহ
ক্রিসমাস ট্রি।
ডিসকোর্স
ঐ যে সেই ডিসকোর্সের কথা মনে হইলো হঠাৎ
তোমারে সবাই যার মধ্যে ফেইলা দিছিলো।
কতো আলাপের মধ্যে তোমারে আমি খুজতেছিলাম
কিন্তু পাইতেছিলাম না।
বন্ধু আর প্রেমের মাঝখানে লুকায় আছিলা তুমি
আমি বুঝবার পারি নাই।
পরে জানতে পারছিলাম তুমি ও আমারে খুজতাছিলা
কিন্তু আমারে তুমি খুইজা পাও নাই
এতো আলাপের মাঝে।
কী কয় যে একটু ভদ্রলোকের ভাষায়
আচ্ছা হ্যা মনে পড়ছে বিভ্রম হইছিলো তোমার আমারে নিয়া।
আমারে তুমি খুনী ভাবছিলা
অথচ ঐ রাতে তোমার সাথে আমি ছিলাম না।
ঐ যে কী কয় যেন আচ্ছা হ্যা মনে পড়ছে তোমার তখনকার ইচ্ছার সাথে আমার সম্পর্ক আছিল না
তুমি কিছু না বুইঝাই ঘুমায় পড়ছিলা।
এতোসবের পরে আর কী হইতে পারে
তোমার বিভ্রম হইলো যে স্বপ্নে তুমি আমারে দেখতাছিলা তাই তোমার লগে আমিই আছি!
বিভ্রমরে ডিসকোর্স বানায়ে ফেলে তোমার সাথে আমারে দেখা করানো হইছিলো
সবাকিছুরে তুড়ি মাইরা উড়ায়ে দিয়ে আমি কইলাম এই ডিসকোর্সের আলাপে আমি আর নাই।
সমস্যা হইলো গিয়ে আমি আলাপের বাইরে চইলা আসলেও তুমি বন্দী হইয়া রইলা সেই আলাপে
আমার আর কী বা করার ছিলো কও?
প্রশ্ন
চক্রপূরণ করতে হবে আপন সত্বাকে সাক্ষী রেখে
নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে এই বলে যে
আমি কেন আমার প্রতিবিম্বের কাছে
অপশনাল সাবজেক্ট।
ও, কী, কিংবা, এবং, আর, ইত্যাদি – এই অহেতুক বস্তুগুলো কেন আমার অবিচ্ছেদ্য অংশ
এ প্রশ্ন ও করা উচিত।
পর্বতের চূড়ায় অবস্থান করা শেরপার মতো অনুভূতিগুলোও আজ নিঃসঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে।
এর জন্য দায়ী কে?
সবশেষে শুধু এই প্রশ্নই থেকে যায়।
আরও পড়ুন- সুশান্ত হালদারের কবিতা