পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- আনিসুর রহমান অপু

আলোর অতিথি

স্বপ্নে নয়, বিশুদ্ধ বাস্তবে, ধ্রুবে— আসে আফ্রোদিতি,

বাতচেল্লির ভেনাস আসে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তমাংসে–

প্রতিটি পরত খুলে প্রথম পোশাকে, ঝিনুকের

প্রশান্ত পাঁপড়ি থেকে বেরিয়ে চাঁদের চিরকুট

হাতে শান্ত নম্র ধীর ভঙ্গিমায় , আলোর অতিথি

গভীর গোলাপ ঠোঁট রাখে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে,

পৃথিবীর ব্যাপক বিরহ ভূমি আর নিন্দুকের

 

ভ্রুকূটি পেরিয়ে পেরিয়ে ছুঁয়ে দিই তার ইচ্ছের জানালা

আর লাবণ্যের লীলালাস্য, সদাহাস্য আহবান —

সুডৌল স্তনের কারুকার্য কিংবা নাভিতে জড়ানো

প্ররোচনা –সংযমী সন্তেরো রক্তে তোলে পাল–লুট

হয়ে যায় অনাব্য হৃদয়, অনাবাদী দীঘিনালা;

বোঝেননি যা বাৎসায়ণ স্বয়ং, অনিবার্য টান–

কামে-প্রেমে একাকার অমরার দেবীতে হারানো ।

 

 

ভুল প্রমাণিত হতে চাই

ভুলে থাকতে তো চাই-ই তুমুল,

চাই সব পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হোক-

মিসমার হয়ে যাওয়া বিষণ্ণ বাথানে

চাই ফের মাথা তুলুক হরিৎ উৎসব,

ধ্বংসস্তুপের উপর যেভাবে মিথের পাখি

রেখে যায় ঘুরে দাঁড়ানোর প্রণোদনা-

টলমল একাকিত্বে রাখি বাঁধার সুদৃঢ় মনোবল।

চাই খুব, পুরোনো পথের গ্লানি পিছে ফেলে

নতুন উদ্যমে লেখা হোক আশাবাদী বৈশাখের হালখাতা,

যাতা পেষা যাপনের ডালে আবার ফুটুক ফুল-ফল-

তবুও বিফল—পণ্ড হয়ে যায় সব আয়োজন ,

আশ্লেষী স্বজন সবুজ সে চাওয়ায় বিছিয়ে দেয়

সর্বগ্রাসী বাণিজ্য বিশদ!

 

যতো ভাবি , বৈরাগ্যের ভুল শুধরে প্রগাঢ় প্রণয়ে রাঙাবো

সিঁথির শূন্যতা, বিমর্ষ ব্যথার খোঁপায় পরাবো নক্ষত্রের ফুল

ভেঙে যায় মনের মাস্তুল;

পাঁজরের পাটাতন থেকে উঁকি মারে গনগনে স্মৃতি,

আর তার নিত্য নবায়ন

ধুয়ে ফেলে রোদের উদ্যম,

নীরবে নিস্প্রভ হয়ে যায় দোলনচাঁপার ইচ্ছের উচ্ছাস, অনপনেয় আকুতি—

উষ্ণতার উদার জমিন হতে হাওয়া হয়ে যায়

শরীর-সোহাগ, অন্তানন্দের অমল পাঠ প্রতিক্রিয়া,

ধানের শীষের থেকে শিশিরের নরম আভাস আর

সবুজ ঘাসের গল্প থেকে বৃষ্টির আখ্যান ধুয়ে নিলে

যা-থাকে সে হলো নীরেট নিঃস্বতা!

 

নিজেকে যতোই প্রবোধ শোনাই, সান্ত্বনা সংবেদ ঢেলে বলি, সব ঠিক আছে ;

আসলে কিছুই ঠিক নাই—

সাত রাস্তার মিছিল এসে সমস্বরে এই সত্যি বলে যায় রোজ !

বিশ্বাসের পিঠে ভরসা ভঙ্গের ছুরি নিয়ে কোথাও পৌঁছানো যায় না আসলে আর—

 

 

আরো পড়ুন- জামিল হাদীর কবিতা