কথাসাহিত্যপদাবলি

একগুচ্ছ কবিতা- আনিসুর রহমান অপু

অঘোষিত সম্রাজ্ঞী

হ‍্যাঁ, দোষ তো তারই ,
নাহলে এতো কিছু থাকতে সবুজ বাথানে
শখ করে সাপের খামারও করে কেউ !
সব দায় করেছে কবুল —
আর দায় শুধতেই গনগনে বুকে বয়ে চলে ভিসুভিয়াস।
কলিজার কোষে কোষে পৌঁছে গেছে তোমার কীর্তির কারিশমা,
সেখান থেকে ফেরার বা ফেরানোর সাধ্য নেই আর —
বানে ভাসা পাখিটির মতো হারিয়েছে সবই যার তাকে
আরও নীলে চোবানো হোক —তার নামে ছডানো হোক আরও ক্লেদ !
ব্রে খেলায়— ইস্কার বিবির সাথে দু’চার টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে দিলে সহজেই জিতে যাবে বাজী !
দিবসের শেষ আলোটুকুর বরাদ্ধ কেটে দিলে তারপর
তুমিই সম্রাজ্ঞী —কিছুই করতে পারবে না কাজী !

 

তলেতলে টেম্পু চালায়

কে না জানে গালমন্দ ভালো নয় —
এমনও নয় যাকে দিলাম রাতারাতি ক্ষতি হয়ে গেলো তার খুব ! অমঙ্গলের দেবতা হলেও হয়তো বলার সাথে সাথেই কাটা পড়তো গণেশের মতো কারো মাথা!

ক্রাচে হাঁটা সময়ের একটা পর্যায়ে আসলে গালি আর অভিশাপ ছাড়া তেমন কোনো অস্ত্রও তো থাকে না দখলে !
অথচ উসকানি দাতা রয়ে যায় ধোয়া তুলসির পাতা ,
তলে তলে টেম্পু চালায় প্রতিদিন।

দখলের দৌরাত্ম্যে যে তোমাকে ধরে বেঁধে সহীবাদের দীক্ষা নিতে বলে, নিজেই দেখেছ তার অবৈধ বাসর !
এখন তুমি তাকে পঞ্চসতীর এক সতী ভাববে নাকি বহুগামিনী বলবে সেটা একান্তই তোমার ব‍্যাপার !
এখানে আমাদের কিছু বলার নেই !

 

পরিহাস পরিহাস

যখন সময় থমকে দাঁড়ায় দিশেহারা দিনলিপি
অশুভ’র সুর, বেজে ওঠে দূরে, উড়ে যায় জলপিপি !

পাঁজরতলায় তরল আগুন, ধিকিধিকি দাউ-দাউ—
ভেবেছি প্রণয় , আসলে কি তাই—হাঁউ মাঁউ খাঁউ খাঁউ !
মানুষের থেকে উঠছে এ ধ্বনি, না-মানুষী চিৎকার
একদার প্রেম নিজেকে বিকিয়ে, হারিয়েছে ভিত তার !

মানুষ খুঁজবে মানুষের ছায়া, পাখিরা খুঁজবে পাখি
কতো দূর আর যাবে বা মানুষ নিঃসঙ্গ ও একাকী !

যাকে ভালোবেসে শুকনো নদীতে, ভাসিয়েছিলাম নাও
ভুলেছে সে সব রাঙা অনুভব, ভালোবাসাদের গাঁও —

চোখে চোখ রেখে শিউরে উঠি, এ—কোন পিশাচের ছায়া –
যেখানে একদা ভিড়িযেছি তরী, শত জনমের মায়া —
না সহানুভূতি নাই সংবেদ, মানবিকতার কিছু—
স্বার্থলোলুপ ডাকাতচক্র, ছুটছে লোভের পিছু !
লোভ লোভ লোভ , ঘৃণা-সংক্ষোভ, কেমনে সে ক্লেদ ভুলি
লোভের চুলায় আগুন জ্বালাতে, ভাঙে যে মাথার খুলি।

এক ফোঁটা আয়ু আর জল-বায়ু, তারপরই সাইরেন
হয়তো নিজেকে ভাবছে অজেয়, আগ্রাসী বাইডেন !

পঞ্চপতির ঘর সামলেও, দ্রৌপদী তুমি সতী—
অথচ জলেতে না-নেমেও কেউ, ভোগ করে পরিণতি !

খুলেছ কোথায় শরীরী পসরা, কোন হোস্টেলে হাট,
লেখা আছে সবই কখন কোথায় , কোন পড়শির খাট !
শ‍্যাম সোহাগিনী, রাঈ বিনোদিনী , লেখো রতি ইতিহাস
সে ঘাটেই কি না নাও বাঁধে মাঝি, পরিহাস পরিহাস !

 

রুবাইয়াত-ই-রূপনগর


কুঞ্জলতা, আমার কথা, এখনও কি পড়ে মনে ?
স্মৃতির সাথে হাঁটতে গিয়ে, কাঁদো একা গভীর বনে ?
চাঁদনি দেখে আগের মতো , এখনও কি হও গো উদাস ?
গভীর প্রেমে এমনই হয়, বুঝবে কি তা সাধারণে—


ভাবছি যাকে ভুলে যাবো, কেন সে-ই আসে মনে !
যখন-তখন ভাসে সে মুখ , আসে গভীর সঙ্গোপনে !
সকল স্মৃতি, প্রণয়-প্রীতি, মুছতে যেতেই ইরেজারে —
জড়িয়ে ধরে মায়াডোরে , জড়ায় গাঢ় আলিঙ্গনে।


দিয়েছিলে একটি গোলাপ, গাঢ় গভীর ভালোবাসায়—
সে ফুল আমায় ভুলে ভাসায় ,ভাসায়-ডোবায় সর্বনাশায় !
তোমার দেওয়া গোলাপ এখন, শুকায় বসে বইয়ের ভেতর
দিনগুলি মোর কাটছে ভালোই , জীর্ণ-হলুদ বিমর্ষতায় !


হায়রে আমার স্বপ্ন-সুদিন, কার পাপে যে এলোমেলো
নিজের দোষেই বুকের ঘরে , কালনাগিনীর ছোবল এলো
জালেও নয়—বড়শি গিলে , পস্তাই আমি আঁধারপুরে —
আর্তনাদ আর আফসোস আমার, সবার কাছে লাগছে খেলো !


হাজার গোলাপ চুমু খেলো, লাল গোলাপী ওই অধরে
কিন্তু আমি ঠোঁট বাড়াতেই , শর্মিলা রাঈ দ্বিধায় মরে
বলে, ‘ও শ‍্যাম দোহাই তোমার , হাত ছেড়ে দাও মরি লাজে
এই অবলা অন‍্যদিয়া, সিঁধ কেটো না মনের ঘরে —‘


শখ ছিল খুব পারিপার্শ্ব, রাখবো খুশি যথাসাধ‍্য —
কিন্তু আমার এমন কপাল, ঘরে-বাইরে সব অবাধ‍্য !
ঘোর আধারে নিজকে একা, দেখতে পেয়ে ফিরলো গো হুঁশ
চাওয়াটা কি ভুল ছিল খুব , বাতাও আমায় হে আরাধ্য!


দুঃসময়ে তোমার থেকে, নিয়েছিলাম এক আধুলি
বিনিময়ে দিয়েছি ঢের—ক্ষেতের ফসল , ঘোড়াগুলি
তবুও আমার অনেক দেনা—দায় ঘোচে না দিয়েও শত
এক আধুলির ঋণের বোঝা, শুধতে খাচ্ছি নিত‍্য গুলি ।

 


সেই কবে দূর দ্বি-প্রহরে, দিয়েছিলে এক ঘড়া জল
সুদে-মূলে সেই যে দেনা, বেড়েই কি না আজ হিমাচল
দু’হাত ভরে দিয়েও আমার—দায় মেটেনা, এমনই দেনা
নিত‍্য যুঝি , কেমনে শুধি , কেমনে পেরোই ওই বিন্ধ্যাচল !

রেখে যাচ্ছি চতুষ্পদী, ভালোবাসার রুবাইয়াত—
জানি না কাল রাখবে কি না , কিংবা করবে আত্মসাৎ ।
আমার সময় গেঁথে রাখলাম , অকৃতি এই আনিসুর —
ভালো-মন্দের রায়টি লিখো , দূর আগামী, কালপ্রপাত ।

১০

মনে রেখো এই কবিতা, রুবাইয়াত-ই রূপনগর
চেয়েছিলাম বাগান জুড়ে, ফুটুক গোলাপ-জুঁই-টগর !
চাই বা না-চাই ফুলের সাথে, থাকে কিছু আগাছাও—
ভুলের দায় সব আমারই থাক, ফুলগুলো ছুঁক প্রেম-অধর!

 

আরও পড়ুন- বদরুজ্জামান আলমগীরের কবিতা

ফলো করুন- পরমপাঠ সাহিত্য পত্রিকা