একগুচ্ছ কবিতা- সৌপর্ণ মাছুম
নবঘনবৃষ্টি
এসো তুমি কোথা হে চঞ্চলা বৃষ্টি!
মাগ্ছে তোমায় সবে; তুমি কত মিষ্টি!
ধীরে ধীরে আসো যবে, শান্ত স্বভাবে
‘শশ কেন নিশ্চল’ ভাবি কার প্রভাবে।
চপলাহরিণসমমায়াবী ও দৃষ্টি!
বন্দনা করি এসো নবঘন বৃষ্টি!
অবনত মস্তকে, যবে দাও ঘোমটা
বিরহে চাতক কবির, রুদ্ধদমটা।
মুগ্ধ করা তব, মধুর ঐ হাস্য!
উপমা দেব কিসে? নেই তার ভাষ্য!
খোঁপা খুলে দাও ছেড়ে, তব মেঘ-কেশ্টি!
বন্দনা করি এসো নবঘন বৃষ্টি!
ভানু দেবতার টানে, যাও উড়ে আকাশে!
হাসিয়া ভাসিয়া বেড়াও, মিশে থেকে বাতাসে
হৈমের কৃপাতে, সঞ্জীবনী লয়ে
আবার আসো গো ফিরে, যেন পূত হয়ে !
মহাকাল-ধরণী, জানে তব হিস্ট্রি।
বন্দনা করি এসো নবঘনবৃষ্টি!
গিরি-বন এ ধরা, তব নব পরশে
শ্যামল ও সজীবহয়, পুলকিতহরষে
ভাটাপড়াতটিনীসিন্ধুর কোলে গো
যৌবনসুধাধারা, দাওতুমি ঢেলে গো!
ভাসায়ে দাওতব, রূপ-গুণ-কিশ্তি!
বন্দনা করি এসো নবঘন বৃষ্টি!
স্বপ্নিল ছন্দে এসে ধরো নবতান
বিদূরিত করো দুখ, গেয়ে ভৈরবী গান!
শুভ্র-শীতল তুমি আপনারে হারিয়ে
মৃত-মৃত্তিকাকে প্রাণ দাও ফিরিয়ে।
তুমি সখী প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি!
বন্দনা করি এসো নবঘন বৃষ্টি!
কৃত্রিমবসন, ভূষণ ও বচনে
শ্রীহারাহও কেন, ভাবুকের লোচনে ?
এসোএসোরুমঝুমনূপুরবাজিয়ে
ধুয়েমুছেনবরূপে দাওহিয়াসাজিয়ে।
তোমার মোহিনী প্রেমে, জাগুক এ দেশটি!
বন্দনা করি এসো নবঘন বৃষ্টি!!
তন্দ্রা লাগা বারি ঝরে
তন্দ্রা লাগা বারি ঝরেমুখর শর্বরী
থেকে থেকে চমকে ওঠে সৌদামিনী পরী।
বাহির পানে অঝর ধারা
ঝরিতেছে বাঁধন-হারা
ফোটে কদম হৃদয়-কাড়া, নাচে ময়ূরী।
স্মৃতির মাঝে অবগাহন করি ক্ষণে ক্ষণে
বিধূর ধরা উপুর করা হরিৎ বসনে
এল নব বাদলতিথি
সজল হলো হৃদয়ক্ষিতি
সুখ পেতে মন ছোটে লয়ে কল্পনা রূপতরী।
তুমি এলে বাদলপরী
ভালোবাসার আষাঢ় তুমি সোনালি প্রেমদারা
তুমি এলে বাদলপরী তাই সাজলো ধরা।
পেখম তুলে ময়ূর নাচে দেয়ার তালে তালে
চাতক অধর সিক্ত করে তোমার শীতল গালে
ছোটে ঘন ডাকে দেয়া
ফোটে বনে কদম- কেয়া
ইরাবানে এলো জোয়ার, সরিৎ সলিলভরা।
ধূম্র-তপ্ত বসুধাকে আলিঙ্গনে তুমি
বুকের স্নেহসুধাধারায় করলে আবাসভূমি
নিসর্গ তাই পরম পূজায়
বরণ করে আজো তোমায়
কুসমিত শ্যামল কুঞ্জ, ভূধর মনোহরা।
নির্ঝরিণীর কূল ভেসে যায়
কোন্ নবীনার নয়ন-ধারা ঝরছে বেণু-বনে
বিজলী মেয়ে নেয়ে গেয়ে আসে ক্ষণে ক্ষণে।
গগনে নেই তপ্ত তপন
হিম সমীরণ বুনছে স্বপন
অভ্র মাঝে তড়িৎ হাসে বর্ষার আগমনে।
নীরস ভুবন বিধুর ভূ-ধর হলো সঞ্জীবিত
শ্যাম বনানী হরায় হরায় চির পল্লবিত
বাদল-পরীর নব ধারায়
নির্ঝরিণীর কূল ভেসে যায়
গন্ধরাজের গন্ধে ছোটে ভ্রমর ভ্রমনে।
চির হরায় সাজলো ধরা
রুম ঝুমঝুম রুম ঝুমঝুম বৃষ্টি নামে ওই
সলিলধারায় সিক্ত হিয়া মনের মানুষ কই।
কেনো জানি বর্ষা এলে
নব ধারার ছোঁওয়া পেলে
স্মৃতি লয়ে হৃদয় খেলে, কেমনে ঘরে রই।
গুরুম গুরুম মেঘ ডাকিলে
ময়ূর নাচে পেখম তুলে
দিল্-দরিয়া ওঠে ফুলে কোলা ব্যাঙের সই।
চির হরায় সাজলো ধরা
ঘুচল ধূসর জীর্ণ-জরা
কেয়া-কদম-গন্ধরাজে মাতোয়ারা হই।
আরও পড়ুন- জামিল হাদীর কবিতা