পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- সুশান্ত হালদার

যোদ্ধা

সুদীর্ঘ পাটাতনে যে উর্বশী শুয়ে আছে

যার বাম-স্তনের পাশ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে হরগঙ্গা

সুদীর্ঘ কাল যারা পাশে বসে ভাবছেন

খয়েরী রঙা দুধে যে জলের অস্পষ্টতা

আষাঢ়ে মেঘের কালোবাজারির ঘুপচি ঘরে দিন শেষে

নেমে এসেছিল আকাশ ঘেরা সোনালি সন্ধ্যা

মনে হচ্ছে ভোরের আলোয় শিশিরসিক্ত কুয়াশায়

স্থির ঊর্ধ্বমুখী অলকানন্দার তীর্যক আলোর প্রতিফলিত ভঙ্গিমা

যার আক্ষেপহীন ইশারায় ভেঙে পড়ছে নদীকূল বিধৌত সভ্যতা

তারই ধ্বংসস্তূপে বসে লিখে যাচ্ছি আমি সমুদ্র মন্থনের কবিতা

 

ভরাট নদী, আকাশ ভাঙা মেঘে

বজ্র শিহরণে থৈথৈ জলে অপলক দৃষ্টির যে একাগ্রতা

তারই বৃহদাংশ জুড়ে আমার কামরূপ কামাখ্যার সীমানা

যেখানে হেলেন বিচ্ছেদে…

আমিও হয়েছি একিলিসের মতো ভয়ঙ্কর এক যোদ্ধা!

 

তুচ্ছ মৃত্যুর পরিহাস

নিকোটিন ঠোঁটে চুমু নয়

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে,

তোমাকে বলার আগেই যে মাঠ শালিক শূন্য হয়েছে

তার অধিকাংশেই ছিল মাটি জড়ানো দূর্বার বসবাস

যেখানে নক্ষত্র গুণে গুণে

ঝরাপালকে লিখেছিল নাম জীবনানন্দ দাশ

এমনই দিনে

যদি কেউ ভালোবেসে কবিতার গাঁট ছুঁয়ে বলেন

তুচ্ছ মৃত্যুর পরিহাস জেনেই

সঙ্গম স্পৃহায় আমিও স্বাধীনতা উত্তর বাংলার ভবিতব্য হতে চাই

তবে নূপুর নিক্কণের ঝঙ্কার নয়

দশভুজায় যেন দেবী আমার প্রীতিলতা-ই হয়!

 

ধ্বংসের ইঙ্গিতে চক্রধারী ব্রহ্মা

দরজা খোলা

বায়ু শূন্য স্থান

যে হাত প্রসারিত করে রেখেছ

সাবধান

ড্রাগন চিহ্নিত ঘরে

পতনোন্মুখ আগুনের উত্থান

 

জেনে হোক বা না জেনেই হোক

দিয়েছ তো সজোরে ধাক্কা

কী অদ্ভুত

কুণ্ডলিত নাভিমূলে

দেখি

ধ্বংসের ইঙ্গিতে বসে আছে চক্রধারী ব্রহ্মা!

 

পোড়া বুকে দাগাঙ্কিত রক্তমাখা শূল

এমনও তো হতে পারে

কানসাটের আম ঢাকায় ফরমালিনে

আপনি খাচ্ছেন আর ভাবছেন

হাইব্রিডে যদি মানুষ হইতো

তাহলে ঘুষবানিজ্যে বাংলাদেশ আরও আগাইয়া যাইতো

কাল যে অফিসে গেছিলাম

দাঁত খিলানের ভাব দেখেই বুঝলাম

হালায় ভাঁওতাবাজ

জিন টিন পরীক্ষা করলে নির্ঘাত বলে দিতে পারতাম মাল আমদানিকৃত

বউয়ের কেসে ফাঁইস্যা গ্যাছি বলে সেকি চোটপাট

জামিনে-ই বাড়ি বেচার নকশা আঁইকা দিলো

গরম সূর্য আর লোডশেডিং এর দিকে তাকাইয়া  বললাম

বাঙালিরে পোড়াইয়া সেদ্ধ করলেও নাস্তার টেবিলে ভালোবাসায় টান দেয়

আমি মুক্তিযোদ্ধার পুলা

পোড়া বুকে এখনও দাগাঙ্কিত একাত্তরের রক্তমাখা শূল

ঘুষ নয়, প্রতিবাদে অপ্রতিরোধ্য হলে

দোজখ করে দিতে পারি এসি নিদ্রায় বউয়ের গলা প্যাচানো ঘুম!

 

আরও পড়ুন- তমিজ উদ্দীন লোদীর কবিতা