একগুচ্ছ কবিতা- রহিত ঘোষাল
কারিগর
নদীর চড়ায় মরা মাছ।
পানির ওঠানামা বাধা বিপদের মতো,
ভূমিহীন কাটা দাগ ষড়যন্ত্র হয়ে এখন জড়ভরত,
এটা লখিন্দরের দেশ,এখানে ভেসে থাকাটাই স্বাভাবিক, উইঢিবির দেবতারা আলপথে হেঁকে যায়
আত্মগোপনচরিত,
মুড়োটা,দুধটা,ঘি’টা থাক তোমাদের পাতে,
চুমুকে চুমুকে লেগে থাক খালাসিটোলা, মাসিমা-কাকিমার রজঃস্রাব ভিজিয়ে দিক আদিগন্ত,
বেলচায় করে তুলে নাও মৃত্যুপথযাত্রীটিকে,
পতনশীল জাতিস্মরের অঙ্গ থেকে জন্ম নেবে গণিকালয়ের কারিগর।।
ঘাসের জংলায় দৌড়
সপ্তাহান্তে একবার বাড়ি যাব,
অনেক মাইল পথ,
পিছনে থাকবে বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি,
গলির মাথায় চা’য়ে দোকান,
কণ্টকাকীর্ণ গাছপাতা – অলি গলি তামা তামা করা হাহাকার কন্ঠে,মেঘ ছিল,
নির্মাণাধীন বাড়ি ক্রমশ গিলে খায় জরাজীর্ণ পরিতক্ত জীবন,
বৃষ্টির দিনে আমরা চলে আসি প্রাগৈতিহাসিক নট নটীদের কাছে,
ওরাই আমাদের রান্নাকরে খাওয়ায়,
বিয়ে দেয় তারপর আমরা দৌড়ে যাই লতাপাতা – ঘাসের জংলায়,
আমাদের উঠনে ছারপোকা আসে আমারা কুয়া টপকিয়ে পালিয়ে যাই
র্যাবোর কবিতার বই হাতে,
টিলিমিলি সময় উড়ে যাই কত মুদ্রিত-অমুদ্রিত বাগানে।।
বাঁশ ও সাপের গল্প
যে ওঝার সাপের পেটে জন্ম
তাকে সেতু থেকে ঝাপ দিতে হয়
সাঁতার দিতে হয় বিষপানিতে
তাকে ঠোঁট লুকাতে হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে
ভাগীরথীর তীর থেকে মায়াবী হাওয়া
কুঠিবাড়ির দেওয়ালে উলঙ্গ আঘাত করে
আক্ষেপ সঞ্চয় করে – বাঁশ হয়ে ওঠে পণ্য।।
চিপাগলি সংবাদ
কিছু গলি জন্ম থেকেই কুপগলি,
ওরা আমার স্মৃতি ছুঁয়ে আছে,
কাঁচা বাজারের দিকে একাধিক প্রবাহিত
কেরানীদের শতখানেক বার পারাপার,
জীবিকার পত্তনকালে কিছু প্রকোষ্ঠ অন্ধ রয়ে গেছে, রুজি-রুটি শরৎগুপ্ত রোড হয়ে চরিত্রমাধুর্যে জড়তা কাটিয়ে চচ্চড়ি চষে বেড়ায়।
প্রকৃত সৌভাগ্য যখন ধরাশায়ী- ধীরে ধীরে তর্কবিতর্ক চিপাগলির বিড়ালের রোমাঞ্চ নিয়ে তরুণ-তরুণীদের রক্তিম মনে ঐশ্বর্য,বিরিয়ানি,কাবাব,পরোটা,ঘোরাঘুরির পরে সন্ধ্যা জয় করে ফিরে নিস্তরঙ্গ হয়ে যায়। তামাকের প্রামাণচিত্র তদানীন্তন বহুত বছর দেখা সাক্ষাৎ নেই এমন বন্ধুর সাথে আলাপ করিয়ে দেয়,
আমার সামনে সেই বন্ধুও ফুরিয়ে যায়,গোলমেলে সময় কীভাবে কীভাবে এক রহস্যোপন্যাস অথবা এক পুরান সাম্রাজ্যের জমিদার হয়ে ওঠে।
আমি আবার এক ভরা বৃষ্টির দিনে শহরে ফিরেছি,খবর পেলাম অচিন্ত দা মারা গেছেন,আঘাত পেলাম,পকেটে তখন মাত্র ১৩ হাজার টাকা, বাথরুমে জল নেই,
সুষুমিত সব ধাপ,বৈঠকি ঘর,আমি করি সম্পাদনা-অর্পা করে রান্না,দূর দূরান্ত পৌঁছায় আমাদের কাছে,আমরা খাওয়াদাওয়া করে নেই-অর্পা বাসন মাজে,আমাদের কান্না ও ঘুম একসাথে আসে,আমাদের আয়ু বড়ো জোর আর এক শতাব্দী-এই কথা শুনে মুখ টিপে হাসে অর্পা।।
জল দাঁড়াবে
দ্রবীভূত বর্ষা মেঘ কাঁদছে,
ভারি হয়ে উঠছে
পুরানো বেশ্যার মতো তার গোলাপী চামড়া।
বিশুদ্ধ?
বৃত্তাকার পুঁতি ঝিকিমিকি করে,
সূক্ষ্ম ধোঁয়াশা চুম্বন।
নোঙর ফেলে এসেছে দ্বীপসমূহ,
শুধু ফোঁটা ফোঁটা জল দেখে যাওয়া
আর কে ছিল সাথে খুড়তুতো বোন?
সে তো চলে গেছে চুঁচুড়া বা মেচেদা
তবু এই অহেতুক আস্ফালন।
যে সকালে আলো কম সেটাই বর্ষাকাল,
অখ্যাত এক পাখি এসে বসেছে জানালায়,
সে একা ডানায় করে এনেছে জীমূত।
আজ থেকে এক অন্যরকম মৃগনয়না
দু’ই বেলা হাত পুড়িয়ে রেঁধে খাওয়াবে,
তাকে ঠাকুরের কাঁসার বাসন মাজতে দেখে ডাক দেবে চন্দনা,
আর কিছুদিন পরেই,হয়তো আর একটু পরেই,
জল দাঁড়াবে – জল দাঁড়াবে।।
আরও পড়ুন- জামিল হাদীর কবিতা