পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- শেখ আব্বাস উদ্দিন

আশ্বস্ত হওয়া না হওয়ার গল্প

শ্রোতৃমন্ডলীর মধ্যে যদি কোন প্রতিক্রিয়া না হয়

তাহলে ধরে নিতে হয় কেউ কিছু শুনছেনা,

অথবা সবটাই অনর্থক;

আজকাল আমাদের ইন্দ্রিয়গুলির সংবেদনশীলতা

বেশ কমে গেছে

যা আগে গল্প কবিতার বিষয় হতো,

এখন তা দুশ্চিন্তার;

 

দাউ দাউ করে জ্বলছে কিশোরী দেহ,

মানুষ পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে আছে;

মানুষ পোড়া দুর্বিষহ শব্দে সন্ত্রস্ত পাখিরা

তীব্র বিতৃষ্ণায় উড়ে যাচ্ছে গভীর অরণ্যের দিকে;

নিরুপদ্রব জীবনের কথা মনে করতে পারিনা!

অসময়ের বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া জলাভূমির করুণ চোখে

ছাতিম গাছের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দেখি

ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেখেয়ালে ঘটে যাওয়া দের

অসঙ্গতির মতো সর্বত্রই অসঙ্গতির ছাপ সুস্পষ্ট।

 

সীমারেখা

সাময়িক থামাকে বিরতি বললে

আমার বোধে প্রতিভাত হয় এক ধরণের আলো।

থমকে যাওয়া জীবন দুরন্ত গতিতে ছুটে যাওয়া

সময়ের হাত ধরতে পারে না।

জীবনের প্রতিটা বাঁকে শুধু যে ঝুলে আসা অন্ধকার

তা নয় হয়তো কোথাও উপচে পড়া জ্যোৎস্না

সোনালী ক্ষেত জুড়ে শুধু সবুজের শ্যামলিমা

ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলের তীব্রতায়

কেঁপে ওঠে ভেতরটা

কৌটো ভর্তি সুবাসের মত হৃদয় জুড়ে

নকশী কাঁথার ফোঁড়

ভয়ংকর ঝাপসা মধ্যবিত্ত জীবন,

মন কষ্টের সেতু পেরিয়ে এসে দাঁড়াই,

চেয়ে দেখি পায়ের নিচে শুয়ে আছে

আমার অস্তিত্বের রেখাচিত্র

তার সীমাবদ্ধতা আসলে ব্যক্তি আমার

অধরা সাফল্যের সুবাস

চিন্তা চেতনা স্বপ্ন এবং প্রেম কোনো

কিছুই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।

 

জীবন

নকশী কাঁথার খন্ডচিত্র আর

এই গড়পড়তা জীবন আমাদের

জ্যোৎস্না রাত্রিতে ঘুম না আসা মনের পাখির চঞ্চলতা

আর নির্বাসিত জমাট অন্ধকার ভেঙে হেঁটে আসছে সূর্যের পরাগ

এ কোন পরিত্যক্ত অথবা আশ্রয়হীন জীবন

নাকি কামনার!

অথবা কোন বিতাড়িত জীবন।

 

ঝড়ো হাওয়ায় বিপন্ন নৌকার মতো

বোধ শূন্য হয়ে ভেসে চলেছে কোন অজানা পথের দিকে

জীবনটাকে ভাঁজ করে তুলে রাখতে চেয়েছিল,

ধুলিধুসরিত মাঠের প্রান্তে বসে

কল্পনার বিলাস ছবি আঁকতে চেয়েছিল আজীবন,

কাল্পনিক সে ছবির নাম —- জীবন।

 

সরীসৃপের মত বেঁচে আছি

বন্ধু সতীর্থ সহোদর সকলে আজ ষড়যন্ত্রী

সময় কিভাবে বদলে দেয় মানুষকে

হয়তো আমাকেও

পৃথিবী ঈশ্বরের প্রেমের অনুদান।

নিজ ভাবনার আলো স্পর্শে প্রিয় উদ্যান

গড়ে দিলেন

সেরা আর্কিটেক্ট তিনি।

 

নিখুঁত কারু

অদ্ভুত বৈভব আর বৈপরীত্যে ঠাসা

অজস্র অধরা প্রশ্ন আর তার নিচে

অবশিষ্ট থাকে

আমাদের সীমাবদ্ধতা।

 

কাল সকালটাও ছিল সানাতন

প্রতিটা রাত এখন শালা পরামর্শের রাত

বাঞ্জনার উড়ালপুল পার হয়ে যাচ্ছে জীবন

শত্রু এবং সহোদর একই রকম মুখাবয়ব

কিভাবে আমরা অন্ধ হয়ে যাই

ভুলে যাই অতীত দুঃখের দিন, ভালোবাসার দিন,

ভ্রাতৃৃ প্রীতি সব অনুভূতি সকল।

কেন আমরা এমন হই!

উত্তরহীন এই প্রশ্ন আমাকে তাড়িত করে নিয়ত।

 

লঙ্কা পেঁয়াজ আর পান্তা ভাতের সকাল

ঝলমলে রোদ আকাশ ভরা,

অস্থির নক্ষত্র মহাকাশ।

সব অতীত হয়ে গেল আমাদের প্রাণবন্ত ইতিহাস

সরীসৃপের মত বেঁচে আছি।

 

আরও পড়ুন- এনামূল হক পলাশের কবিতা