একগুচ্ছ কবিতা- রুদ্র বারী
‘সভ্যতার নগ্নপাঠ‘
সভ্যতার শীৎকার শুনি,
করুণ অথচ স্পষ্ট!
দন্তপাটির ফাঁক দিয়ে গুলিয়ে আসছে
খুব গোপনে; এবং সঙ্গোপনে।
চলে যাচ্ছে দূরে;
ভেসে যাচ্ছে বহু দূর ।
মিশে যাচ্ছে মননে, মগজে-
আধুনিকতায় এবং মস্তিষ্কে।
সভ্যতার যোনী দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে
আরেক সভ্যতা।
কপোল বেয়ে নেমে আসছে ঘাম,
শিরা- উপশিরা টান টান হয়ে ওঠে।
সভ্যতা বড় সুপুরুষ!
নগ্ন আঁধারে দেখি সভ্যতার নগ্নপাঠ।
চুম্বন করে;
ওষ্ঠ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে কামুকতা!
মিসে যাচ্ছে, লেপ্টে যাচ্ছে
আরেক সভ্যতার মুখে, ঠোঁটে,
স্তনে।
সভ্যতা কি জারজ সন্তান দিবে ?
নাকি দেবদূত, কালিদাস!
‘স্যার, আপনাকেই বলছি‘
আপনি, আপনি এবং আপনি!
হ্যাঁ, মহামান্য রাষ্ট্রের রাজকর্মচারী
আমি আপনাদের বলছি।
আমার পরিশ্রমেই আপনাদের মাইনে চলে।
আমার শ্রমেই গড়ে ওঠে বিশাল অট্টালিকা!
যেখানে আপনি, আপনি এবং আপনারা
বিলাসিতা করেন; উল্লাসে মাতেন স্ত্রী- সন্তান সাথে।
আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন!
বিনয়ের সাথে বলছি, আমার মূল্য দিতে শিখুন।
আপনাকে স্যার বলতে হয়!
আপনার পদে কুর্নিশ করতে হয় ক্রীতদাসের মতো,
নতজানু হয়ে দাঁড়াতে হয় আপনার দপ্তরে;
উৎকোচ গুনতে হয় ফাইলের দৌরাত্ম্যে!
অথচ- আপনি, আপনি এবং আপনারা…
আপনার উদর পুর্তি হয় আমার হাতেই।
আমার দেশেই আপনি রাজকর্মচারী।
আপনার পায়ের তলার শক্ত মাটি
আমার নরম করতল।
আপনি আমার ভাই, আমার বাবা, আমার বন্ধু;
আপনজন।
অথচ- গরম চা ছুঁড়ে দেন রুগ্ন মুখে,
চাষা বলে গালি দেন যত্রতত্র।
আপনি মানুষ! মানুষ হতে শিখুন।
বিনয় করে বলছি, মানুষ কে সম্মান দিতে শিখুন;
ভালোবাসতে শিখুন।
মহামান্য স্যার, আমি আপনাকেই বলছি!
যারা মনুষ্যত্বের সীমা অতিক্রম করেছেন,
পণ্যের মত বিক্রি করেছেন আপনার বিবেক
আমি তাদের বলছি।
এই দেশ আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছে,
এই জাতি আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছে।
অভিশাপ দিচ্ছে আপনার পূর্বপুরুষ,
যারা একদিন ক্রীতদাস ছিলেন!
মহামান্য স্যার, আমি আপনাকেই বলছি।
আপনি সম্মান পেতে শিখুন।
‘সিঁড়ি ‘
বোবা পৃথিবী অবাক; বিস্ময়!
সভ্যতার রেস্তোরাঁয় দেখি
মানুষের কাবাব।
মানুষ পুড়ে যাচ্ছে-
বিক্রি হচ্ছে মানুষ,
পণ্য হচ্ছে মানুষ;
বোবা হচ্ছে মানুষ আধুনিকতার দামে।
মানুষ মরে যাচ্ছে ;
ভেসে যাচ্ছে মানুষ
ডুবে যাচ্ছে মানুষ
নব জীবনের বাঁকে।
আমরা আধুনিকতা চাই-
সভ্য হতে চাই জীবনের দামে।
মানুষ ছিলাম কবে?
মানুষের বুকে পদাঘাত করে,
জেগে ওঠে সভ্যতা।
সভ্যতার উনুনে পুড়ে
মানুষের কাবাব।
এগিয়ে যাচ্ছে জি.ডি.পি. রথ!
যাক-
আধুনিকতা তোমায় লাল সালাম;
শোকে নত হোক তবু, মস্তক তোমার।
‘বর্ণমালা‘
আকণ্ঠ বিষ পান করে আমি মরে যাবো!
সাতসমুদ্র তেরোশত নদী;
সহস্রাধিক মহাসাগর পেরিয়ে
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন।
চুম্বন করবো তার দুটি পায়ে!
বর্ণমালা, আমার প্রাণের বর্ণমালা।
আমি পাড়ি দিতে পারি সপ্তনরক,
হাবিয়া দোজখ, এমন কি পাতালপুরীর
ভয়ঙ্কর রাক্ষসপুরী।
রাক্ষস রাজের সাথে ধরতে পারি বাজি!
মৃত্যুকে করতে পারি আলিঙ্গন
অবলীলায়- অনায়াসে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই।
তোমাকে হারাতে পারি না, বর্ণমালা!
আমার প্রাণের বর্ণমালা।
আমার মুখের চোয়াল জুড়ে তুমি থাকবে।
আমার কলমের আঁচড়ে তুমি থাকবে।
আমার কবিতায়, কণ্ঠস্বরে তুমি থাকবে।
তুমি থাকবে- তুমি থাকবে-
এবং শুধুই তুমি থাকবে।
তুমি থাকবে রমনার বটমূলে,
তুমি থাকবে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়!
তুমি থাকবে “আমার সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালোবাসি”।
প্রিয় বর্ণমালা- আমার প্রাণের বর্ণমালা!
তুমি আমার অন্তরআত্মা জুড়ে থাকবে।
তুমি থাকবে আমার মায়ের মুখের হাসি,
বাবার কাঁধে একাত্তরের কালো রাইফেল।
তুমি থাকবে, তুমি থাকবে-
এবং শুধুই তুমি থাকবে।
তুমি আমার প্রথম ও শেষ উচ্চারণ;
বর্ণমালা, আমার প্রাণের বর্ণমালা!
আরও পড়ুন- একগুচ্ছ সুফি কবিতা