একগুচ্ছ সুফি কবিতা- এনামূল হক পলাশ
১.
প্রজ্ঞার উপর আস্থা না থাকলে
হৃদয়ের কথা শোনো,
জীবনের উর্বর ভূমিতেই
জীবনবৃক্ষের বীজ বুনো।
২.
জিকিরের ভেতর মিথ্যাও
সত্য হিসেবে ধরা দেয়।
সেইজন্য কখনো অযথা
জিকির করো না।
৩.
পরশ্রীকাতর ব্যক্তির সাথে
প্রেমে কাতর হয়ো না,
সে তোমার সামর্থ্যের পিঠে
ছুরি চালাতে থাকবে।
৪.
কুকুরের লেজকে সোজা করার
বৃথা চেষ্টা করো না,
কুকুরের বাঁকানো লেজ প্রকৃতি প্রদত্ত
কিন্তু ক্ষতিকর নয়।
পন্ড শ্রম দেয়ার চেয়ে
নিজের কাজ করা ভালো।
৫.
মসজিদে অথবা মন্দিরে তালাশ করে
স্রষ্টাকে পাবেনা কোনোদিন,
বহুকাল আগে থেকেই প্রার্থনালয়ে
স্রষ্টার সাক্ষাৎ পায়নি কেউ।
৬.
বন্ধুকে অস্বীকার করো না
প্রকৃত বন্ধু আত্মার অংশ,
যে তোমাকে প্রশ্রয় দিবে
তুমি তাকে করবেনা ধ্বংস।
৭.
যে তোমাকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হবে
তাকে তোমার কর্মের ব্যখ্যা দিওনা,
সে তোমাকে অপব্যাখ্যা করবে।
৮.
কিছু সত্য গুপ্ত রাখা শ্রেয়,
কেননা অনেক সত্য প্রচলিত
নির্দোষ প্রথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
জগতের ক্ষতির কারণ না হলে
আবহমান প্রথাকে শ্রদ্ধা করো।
৯.
সত্য মিথ্যা যাচাই করার
আমি কেউ না,
নরকের চৌকাঠে থাকে
বিচারকের পা।
১০.
আত্মা হচ্ছে সূর্যের মতো
যা রাতে বেড়াতে যায়,
আর দিনে ফিরে আসে।
তাকে দেখা যায়না যদিও
কিন্তু অবস্থান করে আমাদের
শরীরের পশমের চেয়ে কাছে।
১১.
মহাত্মা তারাই যারা ফিরে আসার পরে
ভালো মন্দ সকল বস্তুকে আলোকিত করে।
১২.
মৃত্যু হচ্ছে অনন্ত শুন্যতা
এক লম্বাটে ঘুম মাত্র,
জীবন সাথে নিয়ে আমি হেঁটে
যাই এক শুন্য পাত্র।
১৩.
যখন তুমি জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি
শুন্যতায় বিচরণ করতে পারবে,
অথচ পৃথিবীর জীবনে চলমান থাকবে
তোমার আত্মা তখন সুফি হবে।
১৪.
কেউ কেউ আমাকে সুফি বলে
কিন্তু আমি আসলে সুফি নই,
আমি পাঠ করি বিরামহীন শুন্যে
অনন্ত সত্তার এক প্রেমময় বই।
১৫.
আমি যেখানে বিলীন হতে পারি
তুমি তার সন্ধান জানো না,
ভেতরে প্রেমাকাংখা নেই বলে
অপার্থিব কিছু তুমি মানো না।
১৬.
আমার হৃদয়ের ভেতর
বন্ধু বাস করে,
বন্ধুরা পৃথিবী ভ্রমণ করে
আমার রূপ ধরে।
১৭.
আমি যে মদ পান করি
তার তুলনা নেই ,
প্রেমবিষে ডুবে থাকলে
হারাবে না খেই।
১৮.
তোমাদের আফিম আমি
কখনো করিনা পান,
আমি নাচতে নাচতে গাইব
সৃষ্টি প্রেমের গান।
আরো পড়ুন- এনামূল হক পলাশের সুফি কবিতা