একগুচ্ছ সুফি কবিতা- এনামূল হক পলাশ
১
কি হারিয়েছো যার তালাশে
পেরেশান হয়ে তুমি ঘুরছো?
তুমি কি সূর্যাস্ত দেখোনি
যা পরবর্তীতে উদয় হয়?
নিজেকে হারানোর আগেই
ফিরে এসো নিজের দেহে।
২
কাকে তালাশ করে হয়রান
হয়ে আছো তুমি দিনরাত?
তাকে সঙ্গে নিয়েই তুমি
পার হচ্ছো নিজ ভূমি।
৩
ভয় পেওনা আমি আছি
তোমার কাছাকাছি,
ভনভনিয়ে আছি আমি
ক্ষুদ্র একটি মাছি।
মাছির ভয়ে পালিওনা
চক্ষু আমার হাজার,
আমার চোখে দেখে নিও
ভবের হাটবাজার।
৪
নিয়মিত যাতায়াতের রাস্তা
মনে হয়না খুব বেশি দূর,
অনিয়মিত হলেই তোমার
সাথে বাড়ে দূরত্বের ঘোর।
৫
সময় হলেই গাছ থেকে
টুপটাপ তাল পড়ে,
ধর্মের কল দেখো এভাবেই
আপনা আপনি নড়ে।
৬
কানের কাছে ফিসফিসানি
লম্বা টানের শ্বাস,
বুকের ভেতর ধুকপুকানি
দিলাম তোমায় আজ।
ঘুমের ঘোরে আমার হৃদয়
নতুন জীবন চুমে,
এবার আমায় শুদ্ধ করো
বর্ষা মুখর ঘুমে।
৭
আকাশ থেকে সূর্য্য ছেঁড়া
অগ্নি পিন্ড এসে,
আমার ভেতর ঘুমিয়ে আছে
বেলা যাওয়ার শেষে।
৮
পাথর হয়ে রাত্রি জাগি
হইনি আমি ছাই,
তালাশ করি তালাশ করি
যেখানে যা পাই।
৯
তুমি আছো বরফ শীতল
আমার ভেতর সুপ্ত,
অগ্নিতে মন না পোড়াটা
রহস্য এক গুপ্ত।
১০
হৃদয় আমার তোমার দিকে
ধ্যানে সমর্পিত,
কিছুই আমার যায় আসেনা
কেউ না হলেও প্রীত।
১১
যার যেখানে আছে অভাব,
সেখানেই তার ডুবে স্বভাব।
১২
ঢেউয়ের তালে ডিঙ্গি নৌকা
ছলাৎ ছলাৎ জলে,
দেহের নৌকা জীবন ঢেউয়ে
এমনি ভাবেই চলে।
কুপি বাতির সরল আলো
নিভু নিভু জ্বলে,
তোমার নীচে আমি আছি
অন্ধকারের তলে।
জ্বলতে থাকা মোমবাতিটা
একটু একটু গলে,
গলতে গলতে যাব আমি
হঠাৎ করে চলে।
১৩
যেখান থেকে যা কিছু পাও
তাই অর্জন করো,
সেখান থেকেই খেয়াল করে
মানুষটাকে ধরো।
১৪
বাড়ির ভেতর একতারাটা
অবিরত বাজে,
বাজতে বাজতে বাড়ি ছেড়ে
বিদায় নিতে সাজে।
১৫
তোমার জন্য হয়েছে ভ্রম
আমায় ক্ষমা করো,
শূন্য জীবন পাওয়ার জন্য
এখানে হই জড়ো।
সুফি কবিতা ১৬
জেগে থেকে শীতল হচ্ছি
তোমার বাঁশির সুরে,
তন্দ্রা আমায় বেতাল করে
রাখে তোমায় দূরে।
১৭
মাছের মতো বেঁচে আছি
জলের ভেতর প্রেমে,
হাওয়া খেতে উপরে আসি
মাঝে মাঝে থেমে।
লবণ যেমন মিশে থাকে
সমুদ্রের জলে,
মিলন হবে তোমার সাথে
আমার মরণ হলে।
১৮
ভয় পাইনা মরণ হলে
জামাই সাজে যাব,
খোলসটাকে পাল্টে পরে
তোমায় আমি পাব।
১৯
প্রেম করেছি বেশ করেছি
আমি প্রেমের সৃষ্টি,
তোমার জন্যই আমি প্রেমিক
খুলে দেখো দৃষ্টি।
২০
আমি আছি বলেই তুমি
তোমার স্থানে আছো,
আমার দিকে খেয়াল করে
অনন্তকাল বাঁচো।
২১
ভাব আসিলে
ভালো বাসিলে
ক্লান্তি এসে ভর করেনা
মাটির শরীরে।
২২
স্তুপে স্তুপে আবর্জনা
ভরে দিয়েছো ধর্মে,
মানব সমাজ বন্দী আছে
তোমার অপকর্মে।
সুফি কবিতা ২৩
ঈশ্বরের পাপে আমি
জন্মেছি মানুষ,
আমার পাপে এখন
ঈশ্বর বেহুঁশ।
২৪
বক্ষ চিড়ে দিলাম তোমায়
রাত্রি ভরা অগ্নি,
দিন কাটছে দিন কাটছে
সুখ দিয়েছি লগ্নি।
২৫
তোমাতেই অনন্ত ক্ষুধা
পান করি তার সুধা।
নিয়ম করে বন্ধ রেখেছি মুখ
প্রাণ ভরে লই সাওমের সুখ।
অনন্ত সাওম আছে এইখানে
জীবনের ধ্যান তবুও অন্যখানে।
আরও পড়ুন- মাহফুজ সজল এর কবিতা