একটি ফুলের অপমৃত্যু- রওশন আলী- গল্প
এই হারামজাদি, নবাবের বেটি, নবাব সাহেবের মেয়ের মতো ঘুমাও। উঠ, উঠ, বলছি। এ ধরনের বকাঝকায় প্রতি সকালে ঘুম ভাঙে তানিয়ার। অথচ আগে তানিয়ার ঘুম ভাঙত পাখির গানে, মায়ের আদরমাখা ডাকে। মা নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়ে স্কুলে পাঠাত অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া তানিয়াকে। সেই দিনগুলি যেন তার কাছে এখন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মাসখানেক ধরে তানিয়া কাজ করছে মিসেস রহমানের বাসায়।
মিসেস রহমানের সংসারে স্বামী হাবিবুর রহমান আর একমাত্র ছেলে নাসের রহমান ছাড়া কেউ নেই। স্বামী ব্যবসা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত। মিসেস রহমান ব্যস্ত সময় কাটান সামাজিক কাজে। লেখাপড়া আর পাড়ার বখাটে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় পার করে ছেলে নাসের। আর তানিয়ার দিন কাটে একলা বাসায় বন্দীর মতো।
সেই সন্ধ্যায় বাসায় তানিয়া ছাড়া কেউ ছিল না। নাসের কোথা থেকে যেন তাড়াহুড়া করে এসেই তানিয়াকে ডাকে এক গ্লাস পানি দেওয়ার জন্যে। তানিয়া পানি নিয়ে ঘরে ঢুকতেই নাসের লুলোপ দৃষ্টিতে তানিয়ার দিকে তাকায়। একটা অজানা ভয়ে কেঁপে ওঠে তানিয়া। টেবিলে গ্লাস রেখে মুহূর্তে সে ফিরে আসবে, তখনই বাসার বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারে ঢেকে যায় চারদিক। সঙ্গে সঙ্গে নাসের যেন পশুতে পরিণত হল। ঝাঁপিয়ে পড়ে অসহায় শিকার তানিয়ার উপর। নিজেকে রক্ষা করতে তানিয়া রান্না ঘরে আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
রাতে মিসেস রহমান বাসায় ফিরে তানিয়াকে রান্না ঘরে রক্তাক্ত, জ্ঞানহীন অবস্থায় আবিষ্কার করে। কিছু কাঁচের ভাঙা জিনিসের মধ্যে অচেতন দেহটি মেঝেতে পড়েছিল। মিসেস রহমান বুঝতে পারলেন ভয়ংকর একটা কিছু হয়েছে। তবুও তিনি এই হারামজাদি, নবাবের বেটি, ওঠ বলছি ওঠ, বলে ডাকতে লাগলেন।
মিসেস রহমানের বকাঝকার আওয়াজে তানিয়ার জ্ঞান ফিরে আসতেই তিনি তানিয়ার চুল ধরে টেনে এনে গালে দু’টি কষে থাপ্পড় মেরে বলেন, হারামজাদি রান্নাঘরের তোকে আজ আমি শেষ করে ফেলব। একটা চামচ দিয়ে তানিয়াকে মারতে শুরু একি অবস্থা করে রেখেছিস। তুই আমার এত শখের জিনিস ভেঙে ফেলেছিস। দাঁড়া করে। তানিয়ার তখন কথা বলার ক্ষমতাও নাই। মিসেস রহমান তানিয়ার মুখে দু’টি পাঁচশ টাকার নোট ছুঁড়ে বললেন, তোকে আর আমার বাসায় কাজে রাখবো না। হারামজাদি তোকে একেবারে শেষ করে ফেলব। অসহায় তানিয়া শুধু মনে মনে কাল সকালে আমার বাসায় যেন না দেখি। সূর্য ওঠার আগেই কেটে পড়বি। নবী। ভাবে আমাকে আর শেষ করার কী বাকি আছে? আমাকে তো শেষ করেই ফেলা হয়েছে।
আরো পড়ুন- রাজিয়া নাজমীর গল্প