প্রচ্ছদসাক্ষাৎকার

কবি টিটো মোস্তাফিজের সাথে কথোপকথন

পরমপাঠ: কেমন আছেন ?

টিটো মোস্তাফিজ: ভালো আছি। ধন্যবাদ।

পরমপাঠ: লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?

টিটো মোস্তাফিজ: ব্যাপারটা বেশ মজার । ২০১৩ সালে এক রাতে টিভিতে লুটেরা মুভি দেখছিলাম। পশ্চিম বঙ্গের জমিদার বাড়িতে তুষারপাত হচ্ছে দেখে আমি অবাক। তবে শেষ পাতার ব্যাপারটা ভাল লাগলো। মনে পড়ল টোকিও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার এর লবি। জাইকা আয়োজিত যুব আমন্ত্রণ প্রশিক্ষণে বাংলাদেশীদের চায়ের কাপে ঝড়। বন্ধু রকিব জাপানের একজন বিখ্যাত কবি শিকির কবিতা ডাউনোলোড করেছে।  খুব খারাপ শব্দমালা দিয়ে লিখা কবিতার পাতাটা আমাকে দিয়ে দেয়া হল। গবেষনা করে যদি মর্মার্থ বুঝতে পারি। আমি ওখানে কোন খারাপ কথা পাইনি কিন্তু জাপানের স্মৃতি হিসেবে পাতাটা রেখেছি। ঐ রাতেই  ট্রাংক হাতড়ে পাতাটা বের করি। ঐ পাতার ৬টি হাইকু আবার পড়ি। পোয়েম হান্টার ওয়েবসাইটে মাসাওকা শিকির বেশ কিছু হাইকু পড়ি এবং অনুবাদ করি। লুটেরা মুভি দেখার অনুভুতি নিয়েও কবিতা লিখার চেষ্টা করি। প্রসঙ্গত বলে রাখি মুভিটা ও হেনরীর দি লাস্ট লিফ গল্পে অনুপ্রাণিত। শিকির হাইকু অনুবাদ করতে গিয়ে মনে হলো এরকম তিন লাইনের ছোট কবিতা আমিও লিখতে পারি। সেখান থেকেই শুরু।

পরমপাঠ: প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে কিছু বলুন

টিটো মোস্তাফিজ: এ পর্যন্ত আমার ৩টি কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রকাশ হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ “সালতামামির পঙক্তিমালা” । বইটি ৩টি অধ্যায়ে ভাগ করা। প্রথম অধ্যায়ের নাম দাসের আত্মকথা। এতে আছে বিভিন্ন কবিতা ও লিমেরিক। মানব জীবন মূলত অন্যের সেবায় নিয়োজিত- এ উপলব্ধি থেকে প্রেম, বিরহ, বিক্ষোভ, সমাজচিত্র এই সব এসেছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে হাইকু। তৃতীয় অধ্যায় সালতামামির পঙক্তিমালা। বাংলাবছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ বৈশাখ হতে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র ছড়া ও কবিতায় ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ হাইকু অভিযাত্রা ২০২১ সালে প্রকাশ হয়। এতে হাইকু কিভাবে এসেছে সে সম্পর্কে আমার একান্ত গবেষণা, বিখ্যাত হাইকু গুরুদের কিছু হাইকু  এবং আমার লিখা ৩১২টি হাইকু আছে। আমার লিখা হাইকু গুলো ছয় ঋতু, নাগরিক জীবন, অনলাইন জীবন , গুনীজন, প্রকৃতি ও বিবিধ এবং নব্যসাম্প্রতিক এই কয়েকভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করা হয়েছে। হাইকুকে বাংলায় জনপ্রিয় এবং সহজবোধ্য করার কাঙ্খা থেকে হাইকু অভিযাত্রা এবং এক পেয়ালা হাইকু আগমন। এক পেয়ালা হাইকু ২০২৩ সালে প্রকাশ হয়।

পরমপাঠ: এখন কি লিখছেন?

টিটো মোস্তাফিজ: হাইকু । আমি সব সময় হাইকু লিখি। অবশ্য অন্য কবিতাও লিখি।

পরমপাঠ: আপনার কবিতার বিষয়বস্তু বা উপজীব্য নিয়ে বলুন।

টিটো মোস্তাফিজ: প্রকৃতি, প্রেম, বিরহ, বিক্ষোভ, সমাজচিত্র।

পরমপাঠ: আসন্ন বইমেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই

টিটো মোস্তাফিজ: বেশ কিছু বই কিনবো। এই বই মেলায় আমার ৪র্থ কাব্য গ্রন্থ “কারাকুলের মেষ” প্রকাশ হতে পারে।

পরমপাঠ:. পাঠকদের থেকে একজন কবির প্রত্যাশা কি থাকে? আপনার ক্ষেত্রে তার প্রভাব কি?

টিটো মোস্তাফিজ: কবি মনের আনন্দে সৃষ্টি করতে থাকেন।  লিখাটি যদি পাঠককে ভাবায় কিংবা তার মনের কথা বলে তাহলে দারুণ হয়।

পরমপাঠ: প্রকাশকদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য চাই।

টিটো মোস্তাফিজ: বাংলাদেশে প্রকাশক আর ছাপাখানার মধ্যে কি পার্থক্য তা আমি বুঝি না। লেখালেখি আর বিপনন দুটো আলাদা বিষয়। বিপননের দায়িত্ব নেয়া লেখকের জন্য অস্বস্তিকর।

পরমপাঠ: কবির কি স্বীকৃতি প্রয়োজন আছে? কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখেন?

টিটো মোস্তাফিজ: স্বীকৃতি অবশ্যই উৎসাহ বাড়ায়। প্রতিষ্ঠা আর কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা কিন্তু আলাদা ব্যাপার ( হাসি )।

পরমপাঠ: লোকে বলে কবিরা ভাতে মরে- এ নিয়ে কিছু বলুন

টিটো মোস্তাফিজ: কথাটা খুব একটা ভুল নয়। কেবল কাব্য চর্চা করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব নয়। অনেক কবিই রাজ আনুকুল্য পেয়ে নিশ্চিন্তে কাব্য চর্চা করেছেন একসময়।

পরমপাঠ: একজন লেখক কবির জন্য পড়াশোনা (সাহিত্য পাঠ) কতটুকু জরুরী?

টিটো মোস্তাফিজ: পড়াশোনা অবশ্যই জরুরী। সাহিত্যপাঠ না করলে সাহিত্যসৃষ্টির আগ্রহ কোথা থেকে আসবে ?

পরমপাঠ: নিজের লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা জানতে চাই।

টিটো মোস্তাফিজ: বাংলা সাহিত্যে হাইকু একটি অবস্থান করে নেবে এই বিশ্বাস থেকে হাইকু রচনা করি। এমনভাবে হাইকু রচনা করতে চাই যেন পাঠক সহজেই বার্তাটি পান। আমি কবিতা বা ছড়া যা-ই লিখিনা কেন সেখানে কিছু বলতে চাই। বর্তমানকে নিয়ে লিখলেও তা যেন সময়কে অতিক্রম করে যেতে পারে সেটি আশা করি।

পরমপাঠ: যারা লিখতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

টিটো মোস্তাফিজ: সাহিত্য চর্চা উপভোগ করুন। আপনার হৃদয়ের কথা শুনুন।

 

আরো পড়ুন- কবি জামিল হাদীর সাক্ষাৎকার