প্রচ্ছদসাক্ষাৎকার

কবি তাজ ইসলামের সাক্ষাৎকার

কেমন আছেন ?

তাজ ইসলাম: আলহামদুলিল্লাহ।

 

লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?

তাজ ইসলাম: ঠিক কিভাবে শুরু তা পূঙ্খানুপুঙ্খ বলতে পারব না। তবে এতটুকু মনে পড়ে, আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে কি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকেই লেখার আগ্রহ তৈরী হয়। আমাদের তখন নানা বিষয়ে রচনা লেখতে হত। রচনায় দেখতাম কবিতার কোটেশন থাকে। তো আমার চিন্তা হল কবিতাতো দু’লাইন আমিও লিখতে পারি। নিজের নিজেই কবিতার লাইন লিখে রচনাতে বসিয়ে দিতাম। তারপর গল্প, কবিতার লেখক পরিচিতি পড়ে আমার লেখক হতে মন চাইতো। এভাবেই সম্ভবত শুরু। এইট, নাইনে ওঠে আমি কবিতা, গল্প, উপন্যাসের নামে খাতা কয়েকটা পূর্ণ করে ফেললাম। তখন এগুলো ছিল আমার পান্ডুলিপি। যদিও এর কোনটিরই কোন হদিস নাই।

 

প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে কিছু বলুন

তাজ ইসলাম: আমার প্রথম প্রকাশিত বই কবিতার। দ্বিতীয়টি ছড়ার। দীর্ঘ সময় ব্যাপী লেখালেখির জগতে আছি। সে হিসেবে আমি মনে করি আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কম। বইয়ের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা। বই দুটো প্রকাশ হয়েছে। মূলত আমি কেমন লিখি এটি আমার যারা পাঠক তারা বই প্রকাশের আগেই মূল্যায়ন করতে পেরেছে। এখন বই প্রকাশ হয়েছে। পাঠক বিবেচনা করবে।  প্রকাশিত বই নিয়ে আমি কিছু বলব না। পাঠক বলবে।

 

 এখন কি লিখছেন?

তাজ ইসলাম: এখন লিখছি ফরমায়েশি লেখা। জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের তথ্য নিয়ে একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। আর এমনিতে আমি ধরাবাঁধা কিছু লিখি না। কবিতা, ছড়া, বই আলোচনা, সমকালীন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখি। আমি ছন্নছাড়া লেখক। যখন যা মন চায়, মন আসে তাই লিখি। তার মধ্যে কেউ কোন লেখা চাইলে লেখতে চেষ্টা করি।

 

 আপনার লেখালেখির বিষয়বস্তু বা উপজীব্য নিয়ে বলুন।

তাজ ইসলাম: আমার চারপাশই আমার বিষয়। আমার দেশ, আমার বিশ্বাস, আমার চিন্তা, আমার আদর্শই আমার লেখার উপজীব্য।

 

 আসন্ন বইমেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই

তাজ ইসলাম: খুব ইচ্ছা ছোটগল্প বা উপন্যাস প্রকাশ করার। কিন্ত এ বিষয়ে এখনও হাতই দেওয়া হয়নি। কাজীর লেখা ভাবনায় আছে, বাস্তবে নাই। হা হা হা।

শেষ পর্যন্ত কবিতার বই নিয়ে হাজির হতে পারি। কবিতার পাণ্ডুলিপি গোটা দুই প্রস্তত আছে। ছড়ানো ছিটানোগুলো গোছালে আরও দুইটা, তিনটা হবে।

 

 পাঠকদের কাছ থেকে একজন লেখকের প্রত্যাশা কি থাকে? আপনার ক্ষেত্রে তার প্রভাব কি?

তাজ ইসলাম: পাঠকের কাছে লেখকের প্রত্যাশা কী থাকে তা বলতে আমি বিব্রত। তো এতটুকু বলতে পারি একজন পাঠকের কাছে আমার প্রত্যাশা আমার বইটি তারা পড়ুক। তারপর তিনি তার মতামত জানান। স্ট্যাটকাট বলুক ভালো কি মন্দ। আমার সবার আগে এটাই।

এখন এই চাওয়া পূরণের জন্য লেখকের দায় আছে। তিনি তার লেখক শক্তি দিয়ে পাঠক মনকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তবেই পাঠক সেই লেখকের বই কিনবে ও পড়বে। আমার ক্ষেত্রে আশা করি আমি তেমন একটা শ্রেণী তৈরী করতে পেরেছি। যারা আমার লেখা পড়ে। মন্দ বা প্রশংসা মুখের উপর না বললেও আমি উপলব্ধি করতে পারি।

 

 প্রকাশকদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য চাই।

তাজ ইসলাম: মন্দ প্রকাশকের পাল্লায় এখনও পড়িনি। এমনিতে বাজারে প্রকাশকদের নিয়ে বহু কথা চালু আছে। আমি যেহেতু লেখক, বহু লেখকের সাথে পরিচয় আছে। তাদের অনেকের অভিজ্ঞতা, অভিযোগ আমার জানা। প্রকাশকদের একটা অংশের চরিত্র কলুষিত।

 

কবি বা লেখকের কি স্বীকৃতি প্রয়োজন আছে? কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখেন?

তাজ ইসলাম: কবি বা লেখকের প্রথম স্বীকৃতির হলো পাঠকের ভালোবাসা। প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে কবি বা লেখকের কিছু যায় আসে না। তবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা সম্মান লেখককে প্রেরণা জোগায়। পাঠক প্রিয়তা,পাঠকের ভালোবাসা হল লেখকের জন্য বড় শক্তি। এটি অবশ্য লেখককেই তার লেখার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।

প্রতিষ্ঠা বিষয়টিও তেমনই।লেখকের মূল পূঁজি লেখা। সত্যিকারে লেখক তার লেখা দিয়েই নিজের স্থান করে নেন সমাজে। অবশ্য অনুকুল পরিবেশ, প্রচার প্রচারণা অলেখককেও প্রতিষ্ঠিত করে। তা সাময়িক। লেখকের লেখায় যদি প্রাণ থাকে আজ অবহেলিত হলেও আগামী তাকে জায়গা ছেড়ে দেবে।

 

 

 লোকে বলে কবিরা ভাতে মরে- এ নিয়ে কিছু বলুন

তাজ ইসলাম: আজকালতো কবিরা আগের ধ্যান ধারণায় নাই। আজকের কবি সচেতন। নিজেই নিজের আয়ের পথটি নিশ্চিত করে নেন। হ্যাঁ একটা বিষয় আছে সহকর্মীদের তুলনায় নিজের পেশায় একটু অমনোযোগী থাকেন। পেশায় যতটুকু সিনসিয়ার হওয়ার কথা ততটা হন না। কাজেই অন্যদের তুলনায় একটু পিছিয়ে থাকেন। তাছাড়া শুধু কবি নন ব্যক্তি যখন সেলিব্রেটি হয়ে যান তখন  তার বিষয়ে সমাজের ধারণা থাকে ভিন্ন রকম। এমনিতে কোন উপকার না করলেও তার সমন্ধে খোঁজখবর রাখে। একই ব্যক্তি যদি আম পাবলিক হন, আর হাসপাতালে মারা যান তাহলে তিনি নীরবেই মারা যান। আর তিনি যদি কবি হন তখন সরবে মারা যান। মানুষ জানে তিনি এই এই অসুখে মারা যান। একজন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক সাহিত্যের পিছনে পর্যাপ্ত সময়, শ্রম, মেধা ব্যশ করেন। সে হিসেবে সমাজ, রাষ্ট্র থেকে কোন প্রতিদান পান না। বিনিময়ে শূন্যতা নিয়েই থেকে যান। এজন্যই হয়তো প্রচলিত কবিরা না খেয়ে মারা যান, বা বলে কবিরা ভাতে মরে।

 

 একজন লেখক কবির জন্য পড়াশোনা (সাহিত্য পাঠ) কতটুকু জরুরী?

তাজ ইসলাম: এর কোন বিকল্প তো দেখছি না। শুধু কবি বা লেখক কেন কোন মানুষেরই পড়ার বিকল্প কিচ্ছু নাই। আল্লার নবীর উপর প্রথম নির্দেশই হল ‘ইকরা’ পড়ো। পড়তে হবে। এই শব্দে যত প্রকারের জোর আছে তা প্রয়োগ করে বলুন ‘পড়তে হবে।’

 

 নিজের লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা জানতে চাই।

তাজ ইসলাম: পরিকল্পনার বিষয়টি গোপন থাকুক। প্রাপ্তির কথা বলতে গেলে আলহামদুলিল্লাহ। লেখক না হলে বলেন তো আমি কি? কি পরিচয় বা গুণ আছে? যতটুকু সম্মান পাই তাতো লেখক হওয়ার জন্যই। এই যে আপনি আমার মুখোমুখি হয়েছেন, আমি লেখক না হলে আমার তো মনে হয় আপনি আমার সামনে আসার কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন না। এই দেশে, এই রাজধানীতে আমার চেয়ে সব দিক থেকে কত বড় বড় মানুষ আছে! তারা ডাক পায় না। আমাকে ডাকে। এগুলোও প্রাপ্তি। আক্ষরিক অর্থে কিছু সম্মাননাও পেয়েছি। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।

প্রত্যাশার তো শেষ নাই। আমৃত্যু লিখতে যেন পারি এই দোয়া চাই। শব্দই আমার অস্ত্র। দেশ, মানুষ, জাতির খেদমত যেন হয় লেখালেখি এইটাও কামনা।

 

যারা লিখতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

তাজ ইসলাম: যারা লিখতে চায় তারা লিখুন। লেখককে পরামর্শ দেওয়ার মতো কথা আমার নাই। লেখক নিজেই নিজের পথ তৈরী করে নেন। নিজের কর্তব্য ঠিক করেন। তবু দুটো কথা বলি।

সবার আগে নিজেকে চিহ্নিত করুন। আপনি কোন বিষয়ে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? ঐ বিষয়ে সফলদের লেখা প্রচুর পড়ুন। লেখতে গিয়ে সেরা লেখাটা লিখতে চেষ্টা করুন। পড়ুন, পরামর্শ নিন। আন্তরিক হোন। সাধনার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলুন।

নিজের উপর যে করণীয় বর্তায় তা আদায় করার মাধ্যম লেখাটাকেই মান্য করুন। আজ থেকে আগামীকাল উত্তম হওয়ার সাধনায় থাকুন।

আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

*তাজ ইসলাম: তাজ ইসলাম, প্রকৃত নাম মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তাজু কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার কামারাটিয়া বড় বন্দেরবাড়ী গ্রামে ১৯৭৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আবুল হাসিম বেপারী এবং মা মোছাম্মাদ কমলা খাতুন। তাজ তিন ভাই, তিন বোনের মাঝে প্রথম। তিনি দুই পুত্র এক কন্যার জনক।মা বাবা, স্ত্রী, পুত্র, ভাইদের নিয়ে যৌথপরিবার তার । তাজ ইসলাম প্যারামেডিক্স চিকিৎসক। প্রাকটিস করছেন নিজস্ব চেম্বারে।

তাজ কবিতা, ছড়া, সাহিত্যালোচনা, গ্রন্থালোচনা, ছোটগল্প লিখে থাকেন।  তার প্রকাশিত গ্রন্থ ১. আরো কিছু কান্নার খবর (কবিতা ২০১৮ বইমেলা), ২. বিসমিল্লাহতে গলদ নাই (ছড়া ২০২০ বইমেলা) ইনভেলাপ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়।  তিনি স্বরশব্দ নামক লিটলম্যাগ সম্পাদক, ছড়াপত্র নিব’র সহসম্পাদক।

তাজ ইসলাম যেসকল পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন ১) শুরূক প্রকাশনা পরিষদ ও শুরূক সাহিত্য মজলিশ কর্তৃক “সম্মাননা স্মারক ২০১৮”; ২) বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার কর্তৃক “বাসাসপ সম্মাননা ২০১৮” ৩) ইয়ুথ ডেভলাপমেন্ট ফোরাম কর্তৃক “সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯” এবং পপুলার কিন্ডারগার্টেন কর্তৃক সংবর্ধনা ৪) উদ্দীপন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ ৫) অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান সিএনসি সাহিত্য পদক ২০২৩ পপুলার কিন্ডারগার্টেন কর্তৃক সম্মাননা ও সংবর্ধিত এবং মুক্তবুলি সম্মাননা স্মারক (বরিশাল)সহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। তিনি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতি ও সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন ।

আরো পড়ুন- নোমান শায়েরীর সাক্ষাৎকার