প্রচ্ছদবই আলোচনা

কারাকুলের মেষ- বই রিভিউ

বই: কারাকুলের মেষ
ধরন: কবিতার বই
লেখক : টিটো মোস্তাফিজ
প্রকাশক: রচয়িতা, উত্তরা, ঢাকা।
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা: টিটো মোস্তাফিজ
প্রকাশ কাল: ফেব্রুয়ারী ২০২৪
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৮
মূল্য: ২০০৳
রেটিং: ৮.৫/১০

 

বেশ কয়েকদিন ধরেই ফেসবুকে যুক্ত আছি‚ “কারাকুলের মেষ” এর কবি টিটো মোস্তাফিজের সাথে। আর তার সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে দেখার সুযোগ পাই – অপূর্ব শব্দশৈলী ও ছন্দ বুনন দ্বারা ,সময়ের ফাঁদে আটকা পড়া, বন্দি বাস্তবতার নানান ছন্দিত রুপ ।

কবি পরিচিতি:
বর্তমানে কর্মরত নাটোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক টিটো মোস্তাফিজ তার কমর্মময় ব্যস্ত জীবনে অফলাইনে লেখালেখির পাশাপাশি সমান তালে অনলাইন পত্রিকা-ম্যাগাজিন সহ অলপোয়েট্রিতে বাংলা এবং ইংরেজিতে ছড়া,কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে, বিশ্বের নানান প্রান্তের প্রতিযোগিদের পিছিয়ে ফেলে,ফ্রন্ট পেজে স্থান দখলের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। আর বিদেশ (জাপান) সফরে গিয়ে তিন পংক্তির জাপানি কবিতা হাইকুকে যেভাবে বাংলা সাহিত্যের সাথে সম্পর্কিত করেছেন তা আলাদা ভাবে প্রশংসার দাবিদার।একই সাথে তিনি একজন দারুণ অনুবাদক ও বটে৷ ‚কারাকুলের মেষ“ প্রকাশের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত তার চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার বাকি তিনটি কাব্যগ্রন্থ যথাক্রমে –
১)সালতামামির পঙক্তিমালা

২)হাইকু অভিযাত্রা

৩)এক পেয়ালা হাইকু

কারাকুলের মেষ:
❖ নান্দনিক প্রচ্ছদ বিশিষ্ট ৪৮ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে আকর্ষনীয় দুটি চতুর্দশপদী কবিতা, ৭টি দ্বিপদীসহ সব মিলিয়ে ৫৯টি কবিতা ।
❖ কবিতার ভাষা হিসেবে আনন্দ, আফসোস, প্রেম,প্রকৃতি, উদ্দীপ্ত অস্থিরতা, সংঘর্ষের জটিল মেলামেশা,কলমের কালির চোখ রাঙানো প্রতিবাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‚কারাকুলের মেষ“ কাব্যগ্রন্থ যেন এক
অন্যরকম নজির টানে।

প্রথম অংশে প্রকাশ পেয়েছে সার্থক কাব্যগ্রন্থ ‚কারাকুলের মেষ“ নামের কবিতা। যেখানে করুন পরিনতির কাছে নিরব আর্তনাদ ফুটে ওঠে।

“অক্ষর না পেয়ে জন্মের পূর্বেই
খুন হয় সেসব কবিতাগুলো
তাদের আর্তনাদ কি পৌঁছায়
নিষ্ঠুর হন্তারকদের কানে?”

আছে কবির সাথে কবিমনের কল্পিত প্রেমিকার সাথে প্রকৃতির তুলনা, আক্ষেপিত খুনসুটি ও নীরব কথোপকথন।

“তোমারই অপেক্ষায় রোদে পুড়ে পুড়ে
আকাশে মেঘের দল হারিয়েছে কালি”

“একসাথে অমর হবো আমরা দুজনে
আমরা তোমাকে আমার কবিতা বানাবো”

“ইমারতের ফাটলে গজিয়ে ওঠা চারাগাছ-
তপ্ত দুপুরে হঠাৎ বয়ে আসা ফুলের সুবাস”

আরেকটু পাতা উল্টিয়ে মাঝের দিকে গেলে দেখা মেলে, কবির চোখে ধরা পড়েনি এমন কোনো ঋতু নেই।স্থান পেয়েছে নানান ঋতুর নানান প্রাকৃতিক রুপ,সৌন্দর্য একই সাথে প্রকৃতির নিষ্ঠুরতম করুন অভিজ্ঞতা।

“গুঁড়ো গুঁড়ো তুষার কণা
হাড় কাঁপানো বাতাস
আঙ্গুল অবশ করা পানি
পথ শিশুর কান ব্যাথা”

“কখনো পায়রার বাক বাকুম ডাক
তুমুল বর্ষণে ভেজা অসহায় কাক”

“পথের ধারে জলাধারে
টুপ করে দেয় ডুব
কৈ টিপি ছানা
খলশে শোলের পোনা”

“আরও একটি শুষ্ক ঢোক-
বৈশাখের এমন রোখ”

সাম্প্রতিক সময়ের সমালোচনাও বাদ যায়নি।

“জিতলে পরে সোনার ছেলে
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার”

“হাতুড়ি বাটালি সাদা বিদ্যুৎ লঙ্কান চা
কিছুতেই কাজ হয়ে ওঠে না কেন?”

বইটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে বর্তমান সভ্যতার অসহায় নির্মমতাকবির কলমি চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি। অধিকার এবং মানবাধিকার উপেক্ষা সহিত অস্থিরতা ও সংঘাতের কারণে বর্তমান সভ্যতা ও নির্মমতার চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে।

“প্রিয়ার হাতের মেহেদী
এখনো যে শুকায়নি

কতোগুলো মিসাইল উড়লো
আর কয়টা বাড়ি ধ্বসলো?”

বইটিতে দুইটি চতুর্দশপদী কবিতা প্রশ্নমালা, নরঢিবি এবং দ্বিপদী গুচ্ছ রচনার মাধ্যমে লেখক যে সাহিত্যিক দক্ষতার নজির টেনেছেন তা মনে করিয়ে দেয় যেকোনো বিষয়ই সাহিত্যিক সংঘবদ্ধ করতে লেখক যেনো বিশেষ ভাবে পটু।

“ঘুমের রাজ্যে আগ্রাসন স্বপ্নেরা দিশেহারা-
একটুখানি আকাশ চাই মায়ার মেঘে ভরা”

পাঠ প্রতিক্রিয়া:
কবি টিটো মোস্তাফিজের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‚কারাকুলের মেষ“ পাঠককে ভাবগুলির গভীরতা অনুভব করিয়ে অনুভূতির ব্যাপ্তি ঘটানোর পাশাপাশি উপেক্ষিত চিন্তাশক্তির উদ্বোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কবিতা সংকলিত এই বইটি আধুনিক ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা হয়েছে।আর তার মৌলিকতার কথা না বললেই
নয়। সাহিত্যিক দৃষ্টিতে বইটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মৌলিক।তবে কিছু সমালোচনা না করলেই নয়।যেমন:বইয়ের ভিতরে কবিতা গুলো ঘটনা ক্রম অনুসারে পর পর সাজানোর পাশাপাশি ঘটনার সাথে সম্পর্কিত কিছু চিত্র থাকলে তা পাঠক দৃষ্টিতে আরো বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠতে পারতো।আর বইয়ের সূচিপত্র ও লেখায় ব্যবহৃত
ফন্টে আরেকটু সচেতন হওয়া জরুরি। কিন্তু সব মিলিয়ে বলতে হবে কাব্যগ্রন্থটি এক কথায় অপূর্ব। তাইতো মনে বলতে চায়-

“কবি!কেমনে লিখো হে এমন কবিতা? লিখিতে কবে থেকে?ছাত্র থাকার কালে?“

রিভিউয়ার: সৈয়দ ওয়ালিদ হাসান, বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।