গাদিরে খুম- সৌপর্ণ মাছুমের কবিতা
দশম হিজরি এহরাম পরে নূরনবি পদব্রজে
শত-সহস্র সাহাবি নিয়ে মক্কায় এলেন হজে ।
দুই কম কুড়ি জিলহজ চাঁদে হজ করে সমাপন
মহাসমারোহে ফিরছেন নবি সাথে সাহাবি-স্বজন ।
জ্হুফার কাছে গাদিরে খুমে পৌঁছালে মহারথে
ওহি এল কাছে “হে রাসূল তোমার পালনকর্তা হতে
তোমার প্রতি যা নাজিল হয়েছে, সকলের কাছে তা
পৌঁছায়ে দাও; না হলে খোদার বাণী পৌঁছালে না ।”
থামালেন নবি সব কাফেলা নির্দেশ আসমানি
সমবেত হ’ল সাহাবি সকল শুনতে নবির বাণী ।
পঞ্চতরুছায়াঘেরাতল চাঁদোয়া শোভিত হ’ল
রৌদ্রোজ্জ্বল দ্বিপ্রহরে ধড়ে যেন প্রাণ এল !
সেই তপ্ত মরুতে বেলাল আজানে দিলেন ডাক
নিয়ে সাহাবি জোহর-সালাত পড়ালেন নবিপাক ।
উটের জিনকে মঞ্চ বানায়ে তাতে চড়িলেন নবি
সাহাবা-কেরাম নীরব শ্রোতা, ভাষক মরুর কবি !
“সব প্রশংসা এক আল্লার যিনি আমাদের রব
এনেছি ঈমান তাঁর উপরে, আমরা করি যাঁর স্তব।
তাঁর কাছেতেই চাই সাহায্য যিনি পতিতের-পাবন
বিপথগামীদের করেন যিনি সৎপথে পরিচালন ।
সাক্ষ্য আমি দিচ্ছি আজি, তোমরা সবাই শোনো
আল্লাহ্ ছাড়া মহাবিশ্বে উপাস্য নাই কোনো !
মুহাম্মদ তাঁর পেয়ারা নবি, হাবিব নামে যে খ্যাত ;
দয়াময় খোদা মহাজ্ঞানী তিনি করেছেন আমায় জ্ঞাত।
অতি শীঘ্রই তোমাদের ছেড়ে প্রভুর সন্নিকটে
চলে যাব আমি; কাটবে সুদিন বিচ্ছেদ-সংকটে !
তোমাদের নিকট রেখে যাচ্ছি দুটি বস্তুর ভার
মদীয় পূত ‘আহলে বাইত’ আর কোরান আল্লার !
দ্বৈত এ রথ যদি আঁকড়ে ধর, পূর্ণ সমর্পণে
হবে নাতো কভু পথভ্রষ্ট , থাকিলে দৃঢ়পণে !”
এরপর নবি দৃঢ়চিত্তে আসাদুল্লার হাত
ঊর্ধ্বে তুলিয়া উচ্চে দিলেন ‘এলানে মাওলাইয়াত’
“আওলা ও মাওলা আমি হই যার, যে যেখানেই থাকো
আলীও মাওলা আজ থেকে তার সকলে জানিয়া রাখ।”
এই বলে নবি করিলেন দোয়া “হে খোদা মেহেরবান
আলীকে যে করে সাহায্য, তারে দিও জাযা-এহ্ছান !
যার বন্ধু আলী পাক হবে, তাহাকে বন্ধুরূপে
স্রহণ করিও ; করুণাধারায় সিক্ত করিও চুপে !
শত্রুতা যদি কেউ করে জেনে, হইও শত্রু তার
লাঞ্ছনা দিলে তুমি তারে দিও, শত লাঞ্ছনা-হার!
রিসালাতি-দায়মুক্ত হলাম ; প্রভুর মেহেরবানি,
পৌঁছায়ে দিও সকলের কাছে আজিকার সব বাণী ।”
মাহেন্দ্র সে ক্ষণে গাদিরখুমে আসিল জিব্রাঈল
সুরা মায়েদার তৃতীয় আয়াত প্রভুজি করিল নাজিল ।
“পরিপূর্ণ করিলাম দ্বীন, হবে না তা আর ক্ষুণ্ণ
তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামতও করিলাম সম্পূর্ণ !
আজ হতে আমি প্রসন্নচিত্তে এই ঘোষণা দিলাম
তোমাদের কাছে আমার সবিশেষ মনোনীত দ্বীনিসলাম !”
ওহি পেয়ে নবি বলে শুকরিয়ায় ”আল্লাহু আকবার
পূর্ণতা দিলেন দ্বীনকে যিনি সহস্র কৃপা তাঁর !
আমার কর্ম-রিসালাতে যেমন তুষ্ট আল্লাজি
আসাদুল্লার মাওলাইয়াতেও আল্লা তেমন রাজি !”
আবু বক্কর, উমার ফারুক সব শুনে বলে, “ভাই
‘আবু তালেবের সন্তান’ তোমায় মোবারকবাদ জানাই ।
আজ হতে তুমি আমাদেরি কেবল মাওলা-ইমাম নও
মুমিন নর ও নারীদেরও তুমি মওলা-এ হক হও!”
অতঃপর সবে মহোৎসবে একে একে কাছে এসে
‘খোশ আমদেদ’ জানাল তোমায়, হাসিমুখে ভালবেসে !
সকল নবিরই ওয়াসী ছিল, যাঁরা ছিল নবিদের জুড়ি
আলী ছিল নবির ওয়াসী-খলিফা, ভ্রাতা-উত্তরসূরি ।
মুসার নিকটে হারুনের যেমন গৌরব অমলিন
মহাবীর আলী নবির নিকটে সে মর্যদায় আসীন ।
হারুনের সাথে নাফসুল্লার কেবলি তফাত এই
তিনি ছিল নবি, মুহাম্মদের পরে আর নবি নেই ।
আল্লার কাছে রাসুলে পাকের যেমন মর্যাদা
নবিজির কাছে আলী তেমনি মাক্কি শাহজাদা !
আহমদ নবি সাবধানকারী, এল যে মানববেশে
খোদা-সন্ধানী খুঁজে পাবে পথ তোমার মাঝেতে এসে।
নবিজির পর সাহাবা কেরাম পড়িলে দ্বন্দ্ব-দ্বিধায়
তুমি দিলে তার বিশদ ব্যাখ্যা স্বকীয় সুপ্রজ্ঞায় ।
জ্ঞানের শহর আহমদ নবি, সেই নগরীর দ্বার
মুশকিল কুশা মওলা আলী মুরতজা হায়দার ।
সিফাতি নূরের দুই অংশ, নবি ও মওলা আলী
সব কিতাবের জ্ঞানসুধা তাঁরে দিয়েছেন প্রভু ঢালি !
নূরনবি তোমায় আপন ছাঁচে গড়েছেন নিজ হাতে
তুমি হলে তাই সবাক কোরান, আছ কোরানের সাথে ।
এই উম্মাতের হুজ্জাত তুমি, হে সিদ্দিকে আকবর
এবাদত হয় তোমার পানেতে তাকালে খোশ-নজর !
যে দিক পানেই ঘুরিবে তুমি, হে সত্যের নিরিখ
সত্য ও ন্যায় কম্পাস-সম ঘুরিবে তোমার দিক !
ভালোবাসে যারা আল্লা ও রাসুল, করে আমলে সালিহা
তারাই খোদার সন্তোষভাজন, মুমিন হিজবুল্লাহ !
সেই মুমিনেরে আপন হস্তে সুধা-কাওসার আনি
পিয়াইবে তুমি রোজ কিয়ামতে, রাসুলে পাকের বাণী ।
সেনাপতি ছিলে সব সমরে বিজয় কেতনধারী
স্বর্গ ও নরক কে পাবে না পাবে, তুমি বন্টনকারী ।
পুত্রের উপর বেশি অধিকার যেমন জন্মদাতার
মুসলমানের উপর তোমারও তদ্রূপ অধিকার ।
নবি ও খোদার বন্ধু সে; যার সখ্যতা হলো তৈরি
তোমার সাথে- যার অমিত্র ভাব সে রাসুল-আল্লার বৈরী !
যারা করে ঘৃণা, বিদ্বেষপোষণ আসাদুল্লার প্রতি
চিনে নিও তারা মুনাফিক খাঁটি, ইসলাম-চ্যুত মতি !
আরো পড়ুন- শবে মেরাজের কবিতা