পদাবলিপ্রচ্ছদ

জামিল হাদী’র কবিতা

রক্তাভ

১.
সম্মোহকের সেতু পেরিয়ে একটা কাঠগড়া আছে।
একদিন সেই কাঠগড়ায় দেখা হবে হে গিরিবাজ।
হয়তো ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে সারাদিন শেষে এসে তুমি বসবে কাঁপা কাঁপা পায়ে সেখানে।
মনে করার চেষ্টা করবে পরের দিনের যুদ্ধের নকশা।
কোথায় উড়তে হবে, কোথায় পুড়তে হবে?
কোথায় জুড়তে হবে, কোথায় হবে থামতে!
আমি কোনো অভিযোগ জানাবো না।
বিচলিত করবো না তোমায় অঙ্গীকার মনে করিয়ে দিয়ে।

আমি শুধু পলকা বাতাস হবো।
যতটা সম্ভব তাতে মিশিয়ে নেবো দ্বীপান্তর হয়ে যাওয়া কোনো এক মাঝ সমুদ্রের শীতলতম অনুরণন।

তুমি ভেবো না। তুমি জিরিয়ে নিও কেবল।
আমি যখন বাতাস হতে শিখে গেছি।
আক্ষেপ নিয়ে মিলিয়ে যেতেও পারবো।

 

২.
অনেক ডালপালা জমে গেছে।
শুরু হয়েছে পাতা পচন।
গাছের চোখ নেই তবু সে সবচেয়ে কাছ থেকে সাক্ষী হয় প্রলয়ের।
সুনামির ধ্বংসযজ্ঞ শেষে আদালত বসে না।
ভূমিকম্প হবার অপরাধে মাটির হয় না কোর্ট মার্শাল।
আমি শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজি।
আমার এই প্রশ্নের উত্তর সকলের জানা কিন্তু সবাই নিশ্চুপ উত্তরটার উচ্চারণে..
না দেখতে পেয়েও যেভাবে অন্ধ বুঝে যায় আজ ফুলেদের শহরে চলছে জোনাকি উৎসব… সেরকম।
তবু আমি প্রশ্নটা বাঁচিয়ে রাখবো।
যেভাবে বর্ষায় ঘরের খিল বড় হয়ে যাবার পরও গেরস্থিনী ফেলে দেয় না খিলটা বাতিল ভেবে
আমিও ফেলবো না।
শুধু বড় করে যাবো প্রশ্নের আয়ু।

 

৩.
আমাদের চালশে ঘরে পোকার বাতি।
আমরা সেই আলোতেই সুখ আর দু:খের নোক্তা গাঁথি।

পরদিন সেখান থেকেই আবার শুরু,
যেখানে চড়ুইচোখী মানুষেরাই সংখ্যাগুরু।

এ যেন বেঁচে থাকা গানের পালা,
আমি তার পানের কোটো, সে হয় আমার ভাতের থালা।

সেখানে চাহিবামাত্র বৃষ্টি নামে,
লড়াইয়ের অনেক আগেই যে দুনিয়ায় যুদ্ধ থামে।
সেখানে ঘাসের জীবন পায় কলরব
যেখানে চোখ নামাতে বাধ্য থাকে কালাশনিকভ।

আমাদের চালশে ঘরে রোদের উঁকি,
আমাদের আছে শুধু মিথ্যে হওয়া গল্পটুকই।

আসে যত রক্তাভ ক্ষণ বাসী হওয়া ভাতের মতো,
পানি দিয়ে খেয়ে ফেলা এই আমাদের মজ্জাগত।

যতদূর গেলে পরে ভালোবাসা পাচ্ছে শরীর,
আমি সেই সমুদ্র আর সে হয় আমার সমুদ্রতীর…

 

আরো পড়ুন- একগুচ্ছ সুফি কবিতা