প্রচ্ছদমুক্তগদ্য

দর্শনের দর্পনে শিক্ষা- সুমন আমীন- মুক্তগদ্য

মানুষ যেদিন থেকে আত্মসচেতন হয়েছে, সেদিন থেকেই তার জ্ঞান সাধনা শুরু ।অস্তিত্ববোধের তাড়নাই মানুষ কে জ্ঞানের পথে ধাবিত করেছে।প্রাচীন কালে যখন মানুষ গুহার গহীন আঁধারে তীব্র শীতে কষ্ট করেছে,দুর্ভিক্ষ, ঝড়-জলোচ্ছাসে মৃত্যু বরণ করেছে তখন ও প্রকৃতির প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার জন্য Survival technique বা অর্জিত জ্ঞান কৌশলকে কাজে লাগিয়েছে।আজকে সভ্যতার এত যে অর্জন তার সবকিছুই মানুষের শিক্ষার গুনেই অর্জিত হয়েছে ।শিক্ষাই মানুষকে বেদনা উপশম ও আনন্দ বৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে।

মানব সভ্যতার আজকের যা কিছু অর্জন তার প্রতি পরতে পরতে মানুষের শ্রম ও মেধার সমন্বয়।মানব সমাজের অগ্রগতির ইতিহাসে খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর অবদান বিস্ময়কর ।খ্রীষ্টপূর্ব ৬০৪ সালে চীনদেশে দর্শনের জনক “লাও-সে” জন্ম গ্রহণ করেন ।এই শতাব্দীতেই চীনের শক্তিশালী দার্শনিক কনফুসিয়াস এর আবির্ভাব ।খ্রীষ্টপূর্ব ৫৬০ সালে উপমহাদেশে গৌতম বুদ্ধ জন্ম গ্রহণ করেন ।পারস্যের জরথুস্ট্র খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর লোক।পারস্যকে তিনি দীর্ঘদিন আলোর পথ দেখিয়েছেন।গ্রীক দর্শনের জনক থেলিস ৬৪০ খ্রীষ্টপূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন ।

দর্শন কে সকল জ্ঞানের জননী বলা হয়।বর্তমান যুগের পদার্থ বিজ্ঞান, প্রানী বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ইত্যাদি সকল বিষয় দর্শন থেকে সৃষ্টি ।আবার বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্য ও সুদৃশ্যমান।বিজ্ঞান কোন বস্তুর প্রকৃতিকে উদ্ঘাটন করে।বস্তুর অন্তর্নিহিত সত্যকে উদ্ঘাটিত করে না।অনু থেকে পরমানু ভাঙ্গার পদ্ধতি আবিষ্কার করে ঠিকই কিন্তু এই অনু-পরমানু মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত  হবে নাকি অকল্যাণে ব্যবহৃত হবে তা বিজ্ঞান ভাবে না। কিন্তু ধর্মের মতো দর্শন শাস্ত্র ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার কিভাবে মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হবে তা নিরুপন করতে সাহায্য করে ।

সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রসরতাও চলমান ।মননশীলতার অগ্রগতির পথে দর্শন শাস্ত্র তৈরি করে মহাসড়ক।আর এই মহাসড়কে সভ্যতাকে জঙ্গমশীল রাখার জন্য ক্ষণজন্মা কিছু দার্শনিক মহাপুরুষ মাইল ফলকের মতো পথ দেখিয়েছে মানুষকে ।এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষদের অন্যতম কনফুসিয়াস,গৌতম বুদ্ধ, থেলিস, সক্রেটিস, প্লেটো,এরিস্টটল,প্লুটার্ক,হযরত মুহম্মদ  (সা.),আল-গাজ্জালী,লুথার,ফ্রান্সিস বেকন,গ্যালিলিও,জন লক,জ্যাঁ জাক রুশো,রবীন্দ্রনাথ,আল্লামা ইকবাল।

আধুনিক দর্শনের জনক সক্রেটিসের জন্ম ৪৭০ খ্রীষ্টপূর্বে গ্রিসের এথেন্স নগরীতে ।যৌবনের শুরু থেকেই তিনি জ্ঞান অন্বেষা শুরু করেন ।জীবনের গভীর রহস্য উন্মোচন করার জন্য তিনি আত্মনিবেশ করেন।সত্যকে খুঁজে পাবার সাধনা তাঁর আমৃত্যু ।যে কোনো কিছু জানার জন্য তার কাছে প্রথম শর্ত ছিল জিজ্ঞাসা ।তাঁর বিখ্যাত উক্তি হলো “know Thyself ” অর্থাৎ নিজেকে জানা ।তিনি উন্মুক্ত প্রান্তরে মানুষকে শিক্ষা দিতেন।শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেন,আর যুক্তির মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর বের করে আনতেন।সক্রেটিস যে সমস্ত প্রশ্ন করতেন তা হলো:ধার্মিক কে,অধার্মিক কে,কোনটা সুশ্রী ও কোনটা কুশ্রী,কোনটা ন্যায় ও কোনটা অন্যায়,কোনটা জ্ঞান ও কোনটা বাতুলতা, সাহসিকতা কি আর কাপুরুষতা কি,রাষ্ট্র কি ও শাসক কি ইত্যাদি ।তাঁর এই মুক্ত বুদ্ধির চর্চা শাসক শ্রেণীর ভিত কাঁপিয়ে দেয়।তাই এথেন্সের তরুণ সমাজকে বিপথগামী করার দায়ে ৪০০খ্রীষ্টপূর্বে তাঁকে রাজদ্রোহিতার দায়ে গ্রেফতার করা হয়।সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো নিম্নরূপ:রাষ্ট্র স্বীকৃত ঈশ্বরকে অবিশ্বাস, নতুন ঈশ্বর প্রতিষ্ঠা এবং দেশের যুব শক্তিকে বিপথগামী করার অভিযোগ ।

কারারুদ্ধ থাকাকালে সক্রেটিসের বন্ধু বান্ধবরা প্রহরীকে পারিতোষিক দিয়ে তাঁকে পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।কিন্তু সক্রেটিস রাজি হননি।কেননা,তাঁর মতে,এইরুপ পলায়ন প্রথমত: মর্যাদা হানিকর,দ্বিতীয়ত তাঁর আজীবন শিক্ষার পরিপন্থী, তৃতীয়ত: রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ ।তাই তিনি প্রশান্ত চিত্তে হেমলক বিষ পান করে ৩৯৯ খ্রীষ্টপূর্বে জীবন সমাপ্ত করেন ।

সক্রেটিসের সুযোগ্য ছাত্র প্লেটো।প্লেটোর চিন্তাধারা সক্রেটিস দ্বারা প্রভাবিত ।প্লেটো মনে করতেন,বিশ্বের আত্মিক শক্তি বা ঈশ্বরকে আমরা যেভাবে বিচার করি শুধু সেভাবেই তিনি আমাদের কাছে প্রকাশিত হোন।মঙ্গল ও সৌন্দর্যকে আমরা যেভাবে অনুভব করি, সেভাবেই তা আমাদের মাঝে স্হান পায়।প্লেটো ছিলেন রক্ষণশীল মন মানুষিকতার অধিকারী।পুরাতন প্রথাকে মেনে নেয়াকে তিনি নিয়তি মনে করতেন।তাঁর মতে,কোন কিছুর পরিবর্তনের চাইতে বিপজ্জনক আর কিছুই নাই।শুধু তাই নয়,প্লেটোর দর্শনে নতুন খেলাধুলা, আমোদ,এবং সঙ্গীত ও গীত বিতানের আবিষ্কারকেরাও দন্ডনীয় অপরাধ ।

চিন্তার ইতিহাসে প্লেটো ও এরিস্টটল দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ ।১৮৩৪ খ্রীষ্টাব্দে গোটা ইউরোপ জুড়ে আদর্শবাদ ও বস্তুবাদের যে লড়াই চলছিল, জার্মান কবি হেনরিখ হাইন প্রমাণ করে দেখান যে,এই বিতর্কের আদিমূল প্লেটো ও এরিস্টটলের মধ্যে নিহিত ।প্লেটো বিশ্বাস করেন,মানুষ চিন্তা ভাবনা ও ধ্যান ধারনা নিয়েই পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করে ।আর এরিস্টটলের মতে,অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের চিন্তা ভাবনা গড়ে উঠে।আবার শিক্ষার প্রশ্নে দুজনের চিন্তার সাদৃশ্য ও লক্ষ্য করা যায়।দুজনের মতেই শিক্ষা রাষ্ট্রের কর্তব্যের একটি শাখা।দুজনেই মনে করতেন,রাষ্ট্র রক্ষার তাগিদে শিক্ষা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ।

শিক্ষা ও দর্শনের ইতিহাসে অন্যতম এক বাতিঘর হযরত মুহম্মদ(সা.)।হযরত মুহম্মদ (সা.)এর প্রতি আল্লাহর প্রেরিত প্রথম নির্দেশ হলো “পাঠ করো”।পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নিকট জ্ঞান লাভের জন্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দেয়া আছে-“রাব্বি যিদনি ইলমা” অর্থাৎ হে আমার প্রভু, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।হযরত মুহম্মদ (সা.)এর শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কিত বিখ্যাত উক্তি গুলো হলো:১.শহীদের রক্ত অপেক্ষা জ্ঞানীর কলমের কালি অধিক পবিত্র ২.দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষা করা ফরয ৩.প্রতিটি নর নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ ৪.যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেহেশতের সাথে তুল্য ৫.জ্ঞান অর্জন করার জন্য সুদূর চীন দেশে যাও ৬.যেদিন আমি কোনো জ্ঞান অর্জন করতে পারিনা, সেদিনটা আমার জীবনের অংশ নহে।

ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে সমগ্র আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো ।হযরত মুহম্মদ (সা.) এর সংস্পর্শে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসে আরবের বেদুইন মানুষ গুলোই পরিনত হয় সোনার মানুষে।রবার্ট ব্রিফল্ট তার “The Making of Humanity” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন -“সম্ভবত আরব বাসীদের দ্বারা প্রভাবিত না হলে আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতার ক্রমবিকাশ হতো না ।মানব সভ্যতার প্রতিটি অগ্রগতির ক্ষেত্রেই মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাব পরিলক্ষিত ।ইউরোপের বিজ্ঞানের চরমোন্নতি বলতে যা বুঝায় তা প্রাচীন গ্রীকদের অনুসন্ধান ও উৎসাহ, নতুন শিক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার এবং গণিত শাস্ত্রের উন্নয়নে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পরিমাপের নতুন রুপের ফলশ্রুতি ।এই উৎসাহ ও পদ্ধতি সমূহ ইউরোপীয় ভূখণ্ডে আরববাসী দ্বারাই প্রচলিত হয়েছিল।”রেভারেন্ড জর্জ বুশ ইসলাম ও তার প্রভাব সম্পর্কে বলেছেন -“ইসলামের উত্থান, উন্নতি ও স্থায়িত্বের ফলে সভ্য জগতের যে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয় বিশ্বের অন্য কোন বিপ্লবের ফলে তা সম্ভব হয়নি ।”

শিক্ষা ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রথম ইসলামই দেয়।হযরত মুহম্মদ সা.সপ্তম শতকে নারীকে সম্পত্তিতে যে অধিকার দেয় ইংল্যান্ডে ১৮৭৫ সালের পূর্বে এই অধিকার ছিলো না ।আর স্পেনের ইসলামী যুগের শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞানের কথাতো আজ সর্বজন বিদিত ।ইসলামী শাসন যুগে খলিফাগণ বিতর্ক সভার আয়োজন করতেন ।সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক গণও উপস্থিত থাকতেন ।তাঁরা সেখানে তর্কশাস্ত্রবিদ,গণিতবিদ, আইনবিদ,চিকিৎসাবিদ প্রভৃতি বিভাগে বিভক্ত নিজ নিজ “কালা” বা পোশাক পরিধান করতেন ।আরবদের অনুকরণেই ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে গাউনের প্রচলন হয়।

শিক্ষা ও দর্শনের চমৎকার সমন্বয় দেখতে পাওয়া যায় ইমাম আবু হামিদ মুহম্মদ আল-গাজ্জালীর চিন্তা ভাবনায়।বিশ্বে যে কয়জন অতিন্দ্রিয়বাদী ধর্ম তত্ত্ববিদ সবিশেষ খ্যাতি লাভ করেছেন ইমাম গাজ্জালী তাদের মধ্যে অন্যতম ।তাঁর শিক্ষা সম্পর্কিত সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হলো ফাতিহাত-আল-উলুম বা Introduction to the science. আধুনিক ইউরোপের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে আল গাজ্জালীর অবদান ব্যপক।শিক্ষক -ছাত্র সম্পর্কিত তার লিখিত মতবাদ হলো-“ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকদের সহানুভূতিশীল হওয়া কর্তব্য এবং তাদের সাথে সন্তান-সন্ততির মতো ব্যবহার করা উচিত ।”ইমাম গাজ্জালী বলেন-“প্রতিটি ছাত্রের সহিত সততার সাথে ব্যবহার করুন ।লক্ষ্য রাখুন কোন ছাত্রই যেন যোগ্যতা অর্জন না করে উপাধি লাভ করতে না আসে।ছাত্রদের অসাধুতা কখনো সহ্য করবেন না ।প্রয়োজনে তাদেরকে সতর্ক ও তিরস্কার করুন ।ছাত্রদের সম্মুখে সহকারী শিক্ষক সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য করবেন না বা তাদের সমালোচনা করবেন না ।ছাত্রদের বোধগম্য নয় এমন শিক্ষা দান ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার পরিহার করুন ।আপনার কার্য যাতে আপনার কথাকে মিথ্যা প্রমাণিত না করে তার জন্য সর্বদা ছাত্রদের আদর্শ রুপে কাজ করুন ।ছাত্রদের কাজ প্রশংসার যোগ্য হলে সর্বদা প্রশংসা করুন ও উৎসাহিত করুন ।তাদের প্রথম অপরাধ না দেখার ভান করুন ।কিন্তু কোন ছাত্র যদি বার বার একই অপরাধ করে যেতে থাকে তবে তিরস্কার করুন ।সর্বদা তিরস্কার করাকে একমাত্র সংশোধনের পথ মনে করবেন না ।তার জীবনের উদ্দেশ্যকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন ।তা হলে তার শিক্ষা ও সঠিক পথে পরিচালিত হবে ।”

মার্টিন লুথারের মতবাদ যেমন খ্রীষ্টান জগতে চিন্তা ভাবনায় আমূল পরিবর্তন আনে বিজ্ঞান ও চিন্তার ক্ষেত্রে ও গ্যালিলিও গ্যালিলি পরিবর্তনের জোয়ার আনেন।পোপের অন্ধকার শাসনামলে যখন পুরো ইউরোপ জর্জরিত তখন দার্শনিকগণই ইউরোপ কে আলোর পথ দেখান।Giordano Bruno কে তাঁর দার্শনিক সৃষ্টি তত্ত্বের জন্য জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।দেকার্তে,লাইবনিজ,নিউটন, কান্ট,রুশো,লক,ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিক ইউরোপে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করে ইউরোপকে পাদ প্রদীপে নিয়ে আসেন।

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে মেনে নিতে পারেননি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও।তাঁর শৈশব জীবনের শিক্ষা দুর্দশার কথা আমরা সবাই জানি ।তিনি মনে করতেন শিক্ষার মধ্যে আনন্দ ও স্বাধীনতা না থাকলে সে শিক্ষা ফলপ্রসূ হবে না ।তাইতো তিনি ভিন্ন ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শান্তি নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন ।রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে P.C.Lal তার ‘Reconstruction and Education in Rural India ‘ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, “Tagore’s philosophy and principles of education were not the outecome of any training he had received at a pedagogical Institute or a University, for he had attended neither. His philosophy was the philosophy of an artist and of a poetic genius .” শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে রবীন্দ্র নাথ লিখেছেন, “জীবনের যাহা লক্ষ্য শিক্ষার লক্ষ্য ও তাহাই।শিক্ষা জিনিসটা জীবনের সঙ্গে সঙ্গতিহীন জিনিস নহে ।আমরা কি হইব এবং কি শিখিব -এই দুইটি কথা গায়ে গায়ে সংলগ্ন ।পাত্র যত বড় জল তার চেয়ে বেশি ধরে না।”  সত্যিকার অর্থে রবীন্দ্র সাহিত্যের আজন্ম সাধনা ছিল জীবনের সাথে আত্মার সন্তুষ্টি ।

আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় দর্শনের অভাব ব্যপকতর।আধুনিক শিক্ষার নামে কুশিক্ষা মানুষকে যন্ত্রে পরিণত করেছে ।স্কুল, কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী শিক্ষিত লোকটির হাতে প্রতিনিয়ত লুট হচ্ছে মানবতা ও নৈতিকতা ।সঠিক জীবন দর্শনের অভাবে সার্টিফিকেটধারী তথাকথিত শিক্ষিত মানুষটি রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য  সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।খেটে খাওয়া মাটির কাছাকাছি থাকা একজন মানুষ জীবনকে যেভাবে সরলতার  চোখে দেখে,লোভ হিংসাকে পায়ে ঠেলে চলতে পারে,তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত লোকটি কেন পারছে না!তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ,শিক্ষার সাথে দর্শনের যথার্থ প্রয়োগ।ভুল জীবন দর্শনেই তাকে লোভী,অসৎ,অমানুষে পরিণত করেছে।

আমাদের শিক্ষা হোক সত্য ও সুন্দরের সাধনা ।মানবিকতা,দেশপ্রেম, পরমতসহিষ্ণুতা,সমতা ও সাম্যের গুণে সমৃদ্ধ ।শিক্ষার সাথে সঠিক জীবন দর্শনে শাণিত হোক প্রতিটি মন ও মনন।

ফেসবুকে ফলো করুন- পরমপাঠ সাহিত্য পত্রিকা