নজর উল ইসলামের কবিতা
জলছবি
আদিখ্যেতা আবেগ সংহত রেখে কতদিন চলা যায়
ভূমিকার আকাশ জীবনচক্রে বাঁধনহীন ঝাঁঝালো
স্বপন্ময় স্রোতে ঘূর্ণাবর্ত বাজায় বিন্দুতে সিন্ধু
অভিব্যক্তির উঠোন তাড়নায় সংগঠিত স্থিতিশীল
আমাদের সুনিবিড় চোখ অনন্তে ভাসে চাউর বিশ্বাসে
হিংসার পরিণাম বিবর্তনের ধাপে সাজ সাজ অর্জন
গভীর সন্ত্রাস রুখে দেবে সভ্যতার মলাট
সময়ের ধস দৃশ্যত কথাঘর মুছে যায় প্রেক্ষাপট
দলদাস শুধু বিশ্বস্ত জলঘোলা জলছবি…
উত্তরণ
পৃথিবীর হাসি লুকনো রূপক-সংসারে
মনকাজলে রূপ ভাসে তার উত্তরণ
নিঃস্ব আমার সাজিয়ে তোলে নিরন্তর
প্রতিফলিত চিহ্নিত গুণ সব ঘরানায়
হৃদয় খুনের ঘোমটাখানি মুখ ভাসায়
সমান্তরাল বিন্যাস থেকে সব ছাপছবি
প্রকৃতির সাথে মহাবিশ্বের যোজনায়
সুস্থিতি সবুজ হোক অমরতার আগুনে…
মোহমায়া
মন মেখেছে মেঘজন্মের রঙিন সভ্যতা
সেখানেও তুমি আশ্চর্য ভনিতার দর্শক
জুঁইফুল-কদমফুল গান ভেসে-আসা খোয়াব দেখতে আসিনি
আসিনি নাটকের ভেতর বিস্তর মেঘ বর্ণনাও
শুধু ভাষণ আর কৃত্রিম ছকবাজির নির্দয় খোলস
রূপক কুড়নো আঁকা ছবিঘরের আবহ-পথিক
ঝুঁকে আছে হলুদ কিরণে আত্মার অমর হরিণ
একখন্ড মেঘ কতটা হাসিতে আকাশ লেখে
লুকনো এক চোখ ভরপুর পুষে যায় জোছনা বন
স্নিগ্ধ শিহরণ মন-শহর মোহিত স্বপ্নকুসুম
বুঝি হৃদয় সব অনুক্ষণ কুড়িয়ে নেবে মোহমায়া
ঈশানকোণ ঘেঁষা সাত-সাতটি বর্ণচ্ছটার সমারোহ
যে বন্ধন প্রিয়মুখ দেখাদেখির এক সমুদ্র সাহস…
মনভাষা
আমি যে আকাশ লিখি মন-আঁকি অবর্ণন
সেখানে পাখিরা ওড়ে অনন্ত জানলার মুখোমুখি
শিখনমালায় অনুভূতির মুখর নদীরাও কথা বলে
কত যে আপন ডানাজুড়ে যায় দিগন্ত সম্ভবা
প্রিয় মুখ ও মণিকোঠায় তুলে রাখি সযত্নে
যেন পথিক শান্ত ছায়ানীড়ে মনঘর কথোপকথন
অলেখা আজন্ম যাত্রাপথের মন-স্ফূটিত ফুল
যে অন্তরকোহলে অনুক্ত স্বপ্নরা ডানা ছেড়ে মুক্ত-সন্ন্যাসে
তার প্রতি ইচ্ছেরা কথাঘর হয়ে ওঠা চিহ্নিত বিন্যাস
সুখকর সাগর-ভাষ্য আনত ঘনত্বে ডুবন্ত কাহিনি
দেখি রাতের আঁধার ভেঙে সূর্যের বর্ণচ্ছটা
পূরবী হাওয়ায় একাঙ্গ আলোমন পাখি…
হাতছানি
বিকেলের মলাট খুলে দেখি মনখারাপ লুকনো
কতদিন ঝিলমিলে রোদ্দুর আসেনি এ ঘরে
শ্বাসরুদ্ধ সমর্পণ ঘিরে দুষ্টু মাছির ভনভন
ডান-বামে যেদিকে তাকাই বিরূপ ঢেউ
আমার জললিপির ভুবন এমন ভাঙনে
আমি যে সমান্তরাল ভেসে যাব
ভূগোল ঠুকরে ঠুকরে অপরূপ বাগানটাকে
অভিসন্ধির মুখে ঠেলে দাউ দাউ আগুনে
এ কোন পরিহাস চেনা আয়না থেকে
চেনা আকাশ থেকে দূরের বহু দূ..র..
গা-কথা আজ পর্ণমোচীর মত ঝরছে
বিলাসী ভূমিকা জানলায় চোখ রাখা দায়
বিনত বন্ধু আমরা যে উৎকর্ষ অনুবাদ করি
ইচ্ছেডানায় জন্ম লিখেছিলাম ফুল হয়ে
আলো হয়ে সম্ভোগ সাগরের অপারে
প্রাসঙ্গিক মনছবির হাতছানি শুধু হাতছানি…
মায়াপাখি
আকাশপাখির মনভেজা গ্রহণ মায়া চাদরে জড়িয়ে
বুঝি
নয়নাভিরাম নৈসর্গ সৃজনভূমি প্রকৃতি ডাকে
সম্ভাবনা ওড়ে আঁচল নির্ভার অভিযোজন রং বিনিয়োগ
যে দিন সজাগ হবে স্নেহ কুড়ানো সমাজ সংসার
মাটির পবিত্রতায় ছায়ামূর্তি ঘাসে ঘাসে নীল একাকার
প্রজন্ম সোহাগ আলো ছায়া সংলগ্ন প্রিয় অভিযান
প্রণয় মাখা বিস্তার দানের মত বিসর্জনে মগ্ন দিশা
অমরত্বে মহামন নিরপেক্ষ নিমজ্জন যাত্রায়
আপন সুরের গান সর্বোপরি ফেরা মুখর প্রাণবন্ত
ভালবাসায় সে প্রকৃত খাঁটি রূপকার কারুজলে
কাঁপা জিজ্ঞাসা সাঁতরে ভুবন ডাঙার গাঁ-ঘেঁষা ওম,
নিচের সব ফন্দি তো জড়ো হয়—মন্দিরে সহাস্য
লজ্জানত হই
দগ্ধ হৃদয়খানি মনঘরে রেখে ফের ওড়ে পাখি
অনন্ত পথের পথ রচনা হয় দোলাচল হারিয়ে…
আরও পড়ুন- শিশির আজমের কবিতা