প্রচ্ছদমুক্তগদ্য

নিষিদ্ধ ভুবন- সেলিম রেজা- গল্প

একটি মাত্র ফোন লুবনার জীবনকে আবারও অস্থির করে তুলেছে। মনের গহীনে তুলেছে প্রচণ্ড এক ঝড়। দেহ-মনের ক্ষুধা মেটাতে, গোপনে গোপনে নিষিদ্ধ ভুবনে যে আসন তৈরি করেছিল, তাও বুঝি তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এই বুঝি উঠে যাচ্ছে নিষিদ্ধ ভুবনের পর্দা। কেঁপে ওঠে তার অন্তরাত্মা। কী করবে সে? দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তার মন। দ্বিধার দু’প্রান্তে দাঁড়ায় দুজন। একজন স্বামী রাসেল মাহমুদ, অন্যজন তার নিষিদ্ধ ভুবনের দোসর সুমন।

সুমনের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে নিষিদ্ধ সুখের সন্ধানে যখন সে সাঁতার কাটতে যাচ্ছিল- ঠিক সে মুহূর্তেই আসে স্বামী রাসেলের ফোন। সেলফোনটি অন করে কানে চেপে ধরতেই নেটওয়ার্কে ধরা পরে সিঙ্গাপুর প্রবাসী স্বামীর উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠ— “লুবনা আমি এ মাসেই আসছি”। লুবনার পায়ের তলা থেকে মাটি সড়ে যায়। যেন একটা ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়ে গেছে। কেঁপে ওঠে বুক। তবু সেলফোনটাকে আঁকরে ধরে প্রশ্ন করে— কখন আসছো?

পনের তারিখ।

সত্যি বলছ?

হ্যাঁ- সত্যি-সত্যি…

কথা শেষে অস্থির হয়ে ওঠে লুবনা। আজ মাসের দশ তারিখ। মাঝে মাত্র চারটে দিন। দু’বছর পর স্বামী ফিরছে। লুবনার তো খুশি হবার কথা। অথচ সে এখন ভীতসন্ত্রস্ত হরিণী এক।

লুবনাকে আরো জোড়ে বুকে জড়িয়ে প্রশ্ন করে সুমন-

কি হয়েছে লুবনা?

আসছে। বলেই এক ঝটকায় বাহুমুক্ত হয় লুবনা।

কে আসছে?

রাসেল ফিরছে পনের তারিখ…

এবার সুমনের মুখেও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। তাই সে উদ্ধতভাবে প্রস্তাব করে, চলো আমরা পালিয়ে যাই। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।

পাথরের মূর্তির মতো সুমনের দিকে তাকায় লুবনা।

মফস্বল শহরের বাসিন্দা লুবনা। এইচ এস সি পাশ করে ডিগ্রিতে ভর্তি হবার সাথে সাথেই, সিঙ্গাপুর ফেরৎ রাসেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। তাদের এলাকারই ছেলে রাসেল। বেশ হ্যান্ডসাম। প্রবাসী ছেলেকে বিয়ে করতে প্রথমে আপত্তি থাকলেও রাসেলকে দেখে রাজি হয়ে যায়। পরিবারের সবার ইচ্ছেতেই বিয়ে হয়। বাবাও বেশ খুশি ছিল— কারণ, বিয়েতে কোনো যৌতুকের দাবি ছিল না।

স্বামীকে জানা ও বোঝা না হতেই ছুটি শেষ হয়ে যায়। রাসেল চলে যায় সিঙ্গাপুর। যে মুহূর্তে ও দেহ-মনের ক্ষুধা বুঝতে শিখেছে, স্বামীকে কাছে পাওয়ার কথা অনুভব করেছে— সে মুহূর্তে স্বামী তার প্রবাসে অর্থের নেশায় বিভোর। দিন যায়, মাস যায়, যায় বছর। স্বামীর পাঠানো টাকা, গহনা আর ফোনের মিষ্টি কথায় মন ভরে না লুবনার। বিরহ যন্ত্রণায় সে ছটফট করে। তার বলতে ইচ্ছে করে– “তোমরা কেউ প্রবাসীকে বিয়ে করো না। না খেয়ে থাকো তবু স্বামীকে বুকে ধরে রাখ।” এমনি এক দুর্বল মুহূর্তে পাশের বাড়ির সুমনের সাথে তার পরিচয় হয়। হয় ঘনিষ্ঠতা। নীতি বিসর্জন দিয়ে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিষিদ্ধ ভুবনে প্রবেশ করে লুবনা। স্বামীর সাথে যে সম্পর্ক গড়ে উঠার কথা— সে সম্পর্ক গড়ে উঠে সুমনের সাথে। দু’জনে নতুন স্বপ্নে বিভোর কী করবে এখন লুবনা? একদিকে তার নিরীহ স্বামী রাসেল, অন্যদিকে ভার্সিটি পড়ুয়া তরতাজা তরুণ সুমন। একদিকে বিয়ের বন্ধন, অন্যদিকে প্রেম। একদিকে সমাজ সংসার, অন্যদিকে কলঙ্ক। কোন দিকে যাবে সে? সুমন আবারো লুবনাকে তাড়া দেয়— “চলো আমরা এখনই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি। রাসেলকে তুমি ডিভোর্স দাও।” লুবনা কিছুই বলতে পারে না, স্থির পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

আরও পড়ুন- তের থেকে উনিশ কথা