পদাবলিপ্রচ্ছদ

বদরুজ্জামান আলমগীরের কবিতা

বিচার কক্ষ

আদালতের ভিতর বিচারকের কক্ষে বসলে
ওরা যখন কিছু প্রসেস করে,
কোন কমিটি নির্বাচন করে তখন এতো নৈঃশব্দ্য,
পিনপতন নিস্তব্ধতা যে
মনে হয়, কথার সঙ্গে বিচারের একটি বিরোধ আছে।
বিচার একটি মড়দেহ- যার আকুতি নাই,
উচ্ছ্বাস আর কান্না হাসি নাই- বিচার এগুলোর ঊর্ধ্বে।
মানুষ এমন পাথর হয় কীভাবে,
কীভাবে এতোটা অনড়।
সুবিচার তাহলে জীবন নয়- একটি মৃতাবস্থা,
গোটা ব্যবস্থা একটি মমির গ্রহ।
ঠিকাছে, তাই হোক শ্রদ্ধেয় বিচারপতি।
ঘরভর্তি প্রায় শখানেক মানুষ-
সবাই একদম বাক্যহীন।
কেউ একটু যদি পা নাড়ায়,
বা জামাটা একচুল ঠিক করে- তাহলে মনে হয়
এখানে একটিও মানুষ নাই-
একটা দুইটা গোবরে পোকা
রাত্রির নেকাব কাটতে কুটকুট দাঁত বসায় মাত্র।

 

অপেক্ষার বোন

আমি সাধারণত মৃত মানুষের মুখ দেখি না-
প্রাণের দুকূল ছাপিয়ে ভাবি যে,
সামনের নিথর মুখটি একটি স্টিল ছবি
একটি চিত্রকল্প মাত্র- এ সত্য হতে পারে না,
সত্য তার চলাচল, হাসিকান্না, লেনদেন।

আজ আমি কেবল স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি-
যে চলে গেল আমাদের একা ফেলে
সে বিহনে কীভাবে আমার ছোট ছোট
গ্রামগুলির সাথে দেখা হবে আর!

কীভাবে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে বুঝবো যে,
আমরা শস্যের দানা ও পথের ধূলা মিশানো
হাসির দেশ থেকে এসেছি!
আমার এ নিরবধি সবজি পসারী ভাই
নুয়ে থাকাগুলো থরে থরে সাজিয়ে রাখতো-
শস্য ও খাবার দানার মৃধুলয় শত ভাঁজ
আমাদের শঙ্কিত শৈশব, ঘুড্ডি লাটিমের ঘূর্ণি।

এভাবেই আমরা সবজি ও বিলের ভাই,
আমরা রয়ে রয়ে নুনপানি, অপেক্ষার বোন।

 

উড়াল কবর

এভাবেই লোকটা আস্তে আস্তে একটি কবর হয়ে যায়,
এক্ষেত্রে বোধের বাইরে একটা আলটপকা ব্যাপার ঘটে-
নিজে কবর হয়ে যাবার পর সে মাটিতে থাকে না আর
কেবল যায়,পাহাড়ের দিকে আনকোরা উড়ে উড়ে যায়।

কবর কথাটা বললেই আমাদের আলগোছে মনে পড়ে
নমিত মাটি ঝুরঝুর খাঁচার ভিতর সেলাই করা আছে,
আছে সেলাই করা স্মৃতির নুয়ে পড়া খয়েরী কররেখা
বৈদেহী দেহ সংসার পাতে বুঝি ঝিনুকের প্রার্থনা ঘরে।

মৃত্যগ্রহণের পর লোকটি জীবনাধিক চমকে চমকে ওঠে
সবার বাড়ি বাড়ি যায় নিরলে পাখা ঝাপটায় সঙ্কটে,
সবকথা এসে মিলে যায় শেষে শন শন ছায়া ও কায়ায়
এভাবেই লোকটা আস্তে আস্তে একটি কবর হয়ে যায়।

 

 

আরও পড়ুন- মাহদী মল্লিকের কবিতা