পদাবলিপ্রচ্ছদ

মাহফুজ সজল এর কবিতাগুচ্ছ 

 ওমে অভিসারে 

আকাশ ফুটেছে-

তোমার মুখ সঙ্গম চূড়ান্তে যেমন

লাবণ্যপ্রভায় সুস্মিত। রাত্রি তোমার

ছাইবর্ণ শাড়ির মাধুরীমা। এই চাঁদ-

অলক্ষ্যে বস্ত্র সরানো উদর আবর্ত

তোমার- ফোটা নাভিমূল- পদ্মের

সঞ্চারি- দেহনদীটির নোঙর।

জোছনা- হায়! অন্তঃস্থে গুঞ্জরিত

বিস্মিত ভাষার অর্গল- শিহরিত

পেলবের জোড়- মন্থন পিপাসাবহা

অতল ধেয়ানে উদ্বেল। আর সে

এক কামনায় চুর আঁখি; এইসব

ভাবদ্রাক্ষার মদিরায় প্রেম প্রমথনে

উপমান। মাঠে মাঠে বইছে প্রাণকেলি-

ওম ও অভিরসরণের গান…

 

 

হাসির প্রচ্ছদে 

পাতালে যে বদ্ধতা তারওতো

স্বকর্মক বুদ্বুদ রটে বেগার শব্দবাজারে

তোমাকে পাইনা বলে অজস্র হাসির

নির্বচনে ফুটি বিপন্ন মনের আড়াল।

 

কেউ ভাবে জিয়নের নির্মল কুসুমিতা বুঝি!

 

তোমাকে পাচ্ছি না তাই

অধীর গানেই হয়েছি প্রতুল

কিছুই দেখি না পড়ি না বলে

কবিতার মতো রক্তাক্ত হৃদয় জমে না।

 

একাকীত্বে বিক্ষত মন-

জলেরই ঘের মাছের কাঁন্না তবু

চেনাজানা মৃত্যুমুখ- বানার বাঁধনে।

 

সময় নৃশংস তুলির আঁচড় বয়ে আসে

মুছে দিতে চায় তোমার প্রেম ভেবে

সুশ্রী কল্পনায় তাবৎ বিরহস্বাক্ষর।

আমিতো হাসির ক্যালেন্ডারে টানা

রয়ে যাই তোমাকে ভালোবাসার মতো

নিষ্ঠ পুরাতন, অন্তিম নতুন।

 

বুঝবে কে এমন ভঙ্গুর অয়োময়তা-

পৃথিবীর উজ্জ্বল চোখের নিচে

ফুটেছি কী ম্লানতার মায়াবী কালিমা!

 

 

‘সিদ্ধান্তহীন সকালে’

বিষণ্ণতার এই মেলে থাকা মেঘ অবয়ব

নির্নিমেষ এই ফ্যাঁকাশেপনার নাম

কোনো অনুদ্যমও হ’তে পারে-

বসে থাকা অবিরত বসে থাকা

কীযে নির্ণীতিহীন! আকাশ আমার

পানে চেয়ে অথবা আকাশই শুধু

নিতে জানলো আমার পাথুরে দৃষ্টি।

 

সমস্যা-জর্জর এ ক্রমা…

ভালোবাসা কেনো আদেখা কাঁটার দেখাভাস

আহত লাগে মুগ্ধতার অরণ্যে পাতায়

পাতায় কতো ফাঁদ।

 

ঘর হয়ে বসে থাকি নিঘর- শূন্যের ভাসা

ধোঁয়াশার জাল যেনো ক্ষুদ্রের ক্ষীণতর আশা

এ ছলায় আচমকা শব্দের শিহরণে কাঁপি

এ গভীর তিক্তবাটে দূরাগত অভয় সে নাকি

কোনো যাপনের শ্যাওলামী- অতিছায়া প্রতিচ্ছায়ায়?

 

নয় সেই অবিকল্পের ভেসে আসা-

লোকালয়- যেখানে যাচ্চেতাই মানুষ মরে যায়?

 

আমি কোন বা পথে তোমার কাছে যাবো!

 

কবি পরিচিতিঃ মাহফুজ সজল- কবিতাপ্রবণ ভাঙনের এক ‘কাইমেরবাউলি’ মেলা। জন্ম বেড়ে উঠা কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ‘ঘোড়াউত্রা’ নদীবর্তী ‘বলিয়ারদী’ গ্রামে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষাজীবন শেষে সেবামূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অবসর পেলেই ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল- ভাটিবাংলার রূপ রহম পানে। কিছুকাল মঞ্চনাটকে যুক্ত ছিলেন; বাজিতপুর ‘পৌরাণিক থিয়েটার’ এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

 

আরও পড়ুন- বদরুজ্জামান আলমগীরের কবিতা