মির্জা গালিবের কবিতা
মির্জা গালিবের কবিতা
১.
বন্ধুর দেখা পাওয়া যেতো যদি ভাগ্য তেমন হতো!
দীর্ঘ জীবন পেলেও কি আর অন্যরকম হতো?
তবু আজো তারই পথ চেয়ে আছি, অহো কী মুর্খ আমি!
দেখা যে পাবো না জানতাম যদি, মরণেও সুখ হতো।
অদেখার তীরে নিহত মানুষ লিখতো যদি সে পদ-
ক্ষতবিক্ষত মর্মকাহিনী একখানি তবে হতো।
শরীর আমার জ্বরে থরোথর, শীতল ওই যে হাত
রাখতো কপালে যদি সে সত্যি বন্ধু আমার হতো।
বিষণ্ণতায় ক্রমে ডুবে যাই-মুমূর্ষু আমি মরে যাই।
ভালোবাসার উপসংহার কী আর অন্য হতো!
কাকে বলি আমি আমার কাহিনী, একটিও শ্রোতা পাইনি।
শুধু লিখে চলা! এর চেয়ে জানি মৃত্যুই ভালো হতো।
তার উপহাস সাগর সমান, নিমজ্জিত এ আমি।
জানাজাবিহীন এমন এ লাশে মাজার কি আর হতো।
গালিব, তোমার কাব্য লেখার কলম কী জোরদার!
মদেই মাতাল- নইলে তোমার অস্থিতে কবি হতো।
মির্জা গালিবের কবিতা
২.
হৃদয়ে অসুখ। ওষুধ কোথাও নেই।
স্বাস্থ্যেই আছি। তবু কিছু ভালো নেই।
কেন প্রেমিকের সংখ্যা বাড়িয়ে চলো?
আমার নাটকে বিবাদ দৃশ্য নেই!
শ্বাস টেনে পথ চলেছি দীর্ঘদিন-
তবুও তোমার খড়গে মৃত্যু নেই।
ওষ্ঠ্য তোমার মধুক্ষরা, তাই ওরা
তিরস্কারেও হাল ছেড়ে দিয়ে নেই!
খবর পেয়েছি তুমি নাকি আজ আসবে!
আজকেই দ্যাখো এ ঘরে আসন নেই।
বিধাতা বিরুপ এতটাই হতে পারে-
এত প্রার্থনা তবু উত্তর নেই।
জীবন পেয়েছি, জীবিন দিয়েছি তাকে।
সত্য এমনই- সত্যে স্থির নেই।
সারে ক্ষতমুখ, রক্ত তবুও ঝরে।
চাকা থেমে যায়, তবু চাকা থেমে নেই।
ভালোবাসা ছিলো, নাকি এ ছলনা ছিলো?
হৃদয় নিয়ে সে হৃদয়ে আর তো নেই।
অনুরোধ করি, গালিব, কিছু তো বলো!
এই তো গজল-এ ছাড়া কিছু তো নেই।
মির্জা গালিবের কবিতা
৩.
দিয়েই দিয়েছো হৃদয় যখন, ক্রন্দন তবে কেন?
স্পন্দন থেমে যাবার পরেও ঠোঁট নেড়ে ওঠে কেন?
অটল রয়েছে সে তার কথায়- আমি কেন টলে যাবো?
কেন এত নিচে নেমে আমি তাকে শুধরাবো- মেজাজ কেন!
এসেছিলো কাছে বন্ধুর মতো। ব্যবহার ছিলো বিপরীত!
এত যদি প্রেম তবে আঘাতের এত তীব্রতা কেন?
এই বুঝি প্রেম! বিশ্বাস এই! মাথা কুটবোই-
তার মতো এক পাষাণীর কাছে যেতে বা হবেই কেন?
বন্দী ও পাখি- মন খুলে তুমি জিজ্ঞাসা করো তাকে-
আকাশের বাজ পড়বেই যদি আমারই খাঁচায় কেন?
দ্যাখো মানুষের ধরন ধারণ: শত্রু বন্ধু বেশে!
তবে অভিধানে শত্রুর মতো শব্দ রয়েছে কেন?
পরীক্ষা যদি বলো একে তবে যাতনা বলবে কাকে?
দাওনি তো মন তবুও আমার মন বুঝে দেখা কেন?
চাওয়া পাওয়াগুলো যদি হয় ভুল- সে দোষ তোমারই বটে!
হৃদয়ের ক্ষতি হৃদয়েই থাক। শরীরে এসো না কেন?
গালিব, ছাড়ো তো পরিহাস তুমি- কোনো লাভ নেই ওতে।
মিথ্যের ঝুড়ি স্তুতিবাদ বিনা কাছে আসবে সে কেন?
আরও পড়ুন- মির্জা গালিবের শায়েরী