মে দিবসের কবিতা- জহুর কবির
শ্রম ও শ্রমিক
শ্রমিকের শ্রমেতে সেজেছে পথঘাট
মাঠঘাটবিহারও তাদেরই দান
পানিপথ রেলপথ সংযোগ সড়কে
নতুন মোড়কে জাগিয়েছে প্রাণ।
অফিস কফিশপ সাজানো উদ্যান
সবখানে তাদেরই অবদান,
বিনিময়ে পায় তারা কত শতো
লাঞ্ছনা বঞ্চনা অপমান।
ইতিহাস গড়ার কারিগর পায়না
ইতিহাসে তবু তারা স্থান,
তুচ্ছতাচ্ছিল্য নিদারুণ আহাজারি
হয়নাকো কোনদিন অবসান।
শ্রম ও শ্রমিক জনতা করে যায়
মানবতা চির শান্তির আহ্বান,
এতো সুন্দর অলিন্দ অভিধান
সবই তো তাদেরই অবদান।
রক্তের শ্লোগান
উত্তপ্ত শ্রমিকের রক্তের
লেলিহান দাবানল দাউদাউ জ্বলছে,
কয়লার খনিতে ময়লার গলিতে
ইস্পাত কারখানায় গলছে গলছে।
জ্বলে জ্বলে গলে গলে শ্রমিক
ভেরিয়াস প্রডাক্ট হয় তারা ছাঁচেতে,
শোভা পায় যে যার মতো করে
সাজিয়ে রাখে আলমারি কাচেতে।
তাদের রক্তের ফসলের পায়েস
আয়েশে খাও ডাইনিং টেবিলে
টেবিলেও রক্ত রক্ত গ্লাস প্লেটে
মারছো তাদের বন্দুক ঢিলে।
পিলে চমকানো দম আটকানো
হরদম কূপেতে উদ্ধারকর্মী,
ধুকে ধুকে মারছে পঁচে গলছে
এই খেলা চলছে নানাবিধ ধর্মী।
শ্রমিকের রক্তে অট্টালিকা উঠছে
উড়ছে সেতু গড়ছে নগর সভ্যতা,
অথচ নাম ফলকে লিখছো
খোদায় করে নিজের কথা।
ফুটপাত
চোখধাঁধানো অট্টালিকা
বিলাস বসন রাখার জায়গা নাই
এই শহরে আবার কারো
মাথা গুঁজে থাকার জায়গা নাই
ছেঁড়া টুকরো জামা গায়ে
ছেড়া জুতো আহা দুটি পায়
সঙ্গী ফুটপাত পেটে নেই ভাত
সম্বল হারা নিঃস্ব নিরুপায়।
অষ্টপ্রহর বুকে এদের
অসীম ব্যথার নদী বয়ে যায়
এদের খবর কেউ ছাপেনা
ভুল করেও কোনো পত্রিকায়।
মে দিবসের গান
জীবন ঘসে জ্বালায় চূলা
বাঁচে শ্রমিক কর্মে
না শুকাতে ঘাম দাও দাম
বলা আছে ধর্মে।
রক্ত ফোটায় গড়া ফুটপাত
দামী সব ইমারাত,
ফসল ফলায় ভুবন সাজায়
তাদের সবল হাত।
শ্রমের নায্য মূল্য পেতে
হয় হোক দ্বন্দ্ব সংঘাত,
মুখের গ্রাস পারবেনা খেতে
কেড়ে কোনো বদজাত।
মজলুম জাগো জাগো করো
শোষকের নিশ্চিহ্ন,
আগুনের হয়না প্রতিরোধ
রক্তের বৃষ্টি ভিন্ন।
মে দিবসের জয় হোক জয় হোক
সকল শ্রমিকের,
লিখ যাও ইতিহাস স্বর্ণে
রক্তের তাজা রক্তের।
শ্রমিক জনতা
শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত
পুষ্পে পুষ্পে পুষ্প শোভিত
গ্রাম শহর আধুনিক জীবন
সুনিপুণ শ্রমিকের তুলির ছোঁয়া
দিয়ে যায় উপহার শীতল হাওয়া
সবখানে তাদেরই প্রয়োজন।
দিনরাত হাড়ভাঙা শ্রমে
পায়না দু’বেলা দুমুঠো ভাত।
অথচ মহাজন তাদের ঘামে
হয় সমাজের অভিজাত।
ব্যবধান প্রাচীরঘেরা দুর্গ
থাকবে বলো কতোকাল,
সাধারণ জনতা জাগবে
জাগবেই আজ আর কাল।
বোকা জনগণ
কসাইয়ের হাতে
গনতন্ত্রের ছুরি
আমানত রাখে
বোকা জনগণ।
অবশেষে নিজেই
দেখে নিজের মাংসের
কতো সুন্দর
পরিবেশন।
আরও পড়ুন- তাজ ইসলামের কবিতা