কথাসাহিত্যপ্রচ্ছদ

শঙ্খ ভালোবাসা- শেখ মেহেদীর গল্প

ভোর ছুঁই ছুঁই ভাব। পূর্বাকাশে শাদা আলোর রেখাপাত। কালো অন্ধকার আকাশটায় একগুচ্ছ জোসনা যেমন করে ফোটে তেমনি মনে হচ্ছে এসময়। কিন্তু হৃদয়টায় কেমন যেন এক কষ্ট অনুভব করছি। কী করব বুঝতে পারছি না। এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। আমি ঘরে ঢুকলাম। ঢুকতেই দেখি কাজল ঘোমটা টেনে লাল রঙের শাড়িতে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের শরীরটাকে ঢেকে ঈষৎ চোখে বারবার তাকাচ্ছে আর মিষ্টি করে হাসছে। যাকে বলে খইফোটা হাসি। আমিও আস্তে আস্তে ওর ভেতরে হাঁটলাম। হাত দু’টোকে ধরলাম। ও শিউরে উঠল। দেখতে লাগলাম মেহেদী রঙে আঁকা হরেক ডিজাইন ভালোবাসা ও সুখের ঢেউ। আরো লক্ষ করলাম এক পাশে লেখা মেহেদী যোগ কাজল। ওর চোখে চোখ টিপলাম। যেই একটু আদরে আবৃত করব অমনি চাচী হাজির। লজ্জায় দৌড়ে পালালাম। ঘুম ভেঙে গেল। স্বপ্ন ভেঙে গেল হৃদয়ের। শুধু শঙ্খময় একগুচ্ছ ভালোবাসার স্মৃতি ক্রমশই মিথষ্ক্রিয়ায় তোলপাড় করতে লাগল।

আমি জানি স্বপ্নগুলো এমনি করেই নষ্ট হয় আমার। ভাবনা এক হয় আরেক। কাজলকে দেখলাম বধূর বেশে আমার ঘরে অথচ সে আজ অন্যের বউ হয়ে দিব্যি সুখের সংসার করছে। আমাদের মাঝে কোনো খোঁজ খবর নেই। নদীর স্রোতধারার মতো শুধু বয়েই চলেছি। ও হয়ত ভালোই আছে। যখন যা মনে ধরে তাই করে। আকাশের রঙের মতো মন ওর। আমার সব ব্যর্থতা ওকে ঘিরে। কিন্তু আমিও বসে থাকিনি, দেবদাস হইনি। অর্পিতা নামের এক আত্মীয়ের মেয়েকে বিয়ে করি। মনে করি অনর্থক পিছু টেনে লাভ কী? তাই কাজের মধ্যে ডুবে থেকে কিছুটা হলেও ওকে ভুলতে চাই।

খুব সকালে অফিসে যাই। কেউ এখনো আসেনি। একটু পর রফিক আসল। ওর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম, চা খেলাম। এবং অফিসের কাজে হাত দিলাম। কিছুই ভালো লাগছে না। আজ তিনদিন হয়ে গেছে অর্পিতা বাসায় নেই। রাগ করে চলে গেছে বাপের বাড়ি। পূর্ব প্রেমের জের ধরে এ মনমালিন্য বিরাগ। কারণ আমি নাকি এখনো কাজলকে ভুলতে পারিনি আর অর্পিতাকে একটুকুও ভালোবাসতে পারিনি।

আমি একটা হিপক্রেট। আমার বাসা উত্তরায়। হঠাৎ বাসার কথা মনে পড়ল। বাসায় আছে সুহানা, সাইন জন্যে একটু কান্নাকাটিও করে না। অফিস থেকে ঘরে ফিরলে ফ্যাল ফ্যাল করে কাজের বুয়া। কেমন করে মা ছাড়া দু’টি সন্তান থাকে বুঝে উঠতে পারি না। মায়ের তাকিয়ে থাকে, কিছু বলে না। আমি বুঝি কিন্তু কিছুই করতে পারি না, শুধু অনুভব করি আমার বুকের ভেতর কেমন জানি করছে।

অফিস থেকে ঘরে ফিরলাম না। তুরাগ নদীর পাশ দিয়ে মেঠো পথ ধরে হাঁটতে লাগলাম। তাকিয়ে দেখতে লাগলাম কালো জল, নদীর ঢেউ। নদীর জল এখন যেমন স্বচ্ছ নেই, তেমনি আমার হৃদয়টাও আজ অন্ধকার আলোহীন হয়ে গেছে। কষ্টময় বিবর্ণ হয়ে গেছে। এভাবে বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে হচ্ছে। যেখানে এত সন্দেহ অবিশ্বাস সেখানে অনলদাহ কেমন করে সহ্য হয়। যত অসংগতি বিভেদের দেয়াল ভেঙে শান্তির সুবাতাস কি আর আমার জীবনে বইবে না?

আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, কিছুই ভালো বোধ করছি না। সব যেন অন্ধকার কালোময় মনে হচ্ছে। হাঁটুতে কোনো জোর পাচ্ছি না। শরীরটা অবশ লাগছে। চারদিক থেকে কোনো এক ভয়ংকর চিৎকার আমার পৃথিবীকে ক্রমশই শব্দহীন পাথুরে কালোময় করে দিচ্ছে। মাটির ধূলাতে বসে পড়লাম। এবং পড়ন্ত তুলোর মতো এলিয়ে পড়লাম অস্বীকৃত ঘুমে।

চোখ খুলে দেখি দু’জোড়া মায়াময় নিঃষ্পাপ মুখ আকুতির চোখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাখ্যাহীন ভাষায় বুঝাতে চায় বাবা তুমি জেগে ওঠো, আমরাই তোমার অবলম্বন।

আরও পড়ুন- মুনজুরুল আহসান ওলীর গল্প