একগুচ্ছ কবিতা: শতরূপা সোমা
ডাকছে সুদিন
চিলের চোখে সূর্য দেখে ফিরছি ঘরে
সন্ধ্যা পেতে বেলকনিতে চা পেয়ালায়
রোমন্থনের ছায়া ছায়া কোলাজগুলো ঝরাপাতা
হলদে ডানায় উড়তে থাকে বুকের ভেতর
এমনি করে প্রহর পেরোয় গড়িয়ে যেন দানের গুটি
পলক দুয়েক জ্যোৎস্না নাচে শয্যা ঘরে
মেঘ পাহাড়ের গ্রীবাদেশে চতুর্দশী চন্দ্রকলা
একা আমি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর প্রতীক্ষাতে
তজবি জপি ক্যালেন্ডারে
কী অপরুপ যাচ্ছে বেলা চুলে- ত্বকে-
পায়ে পায়ে গোরস্থানের অভিমুখী
আজকে তবু ভাদ্র রাতে ইচ্ছে বাদুড়- ঝুলন দোলে
আমড়াপাতার অন্ধকারে নীড়ের মতন
স্বপ্ন বাঁধে খড়ের সুতোয় কল্পনা রং
শিশুর ধ্বনি- পুলোক মাখা কলরবে
কোমল মুঠোয় ডাকছে সুদিন মহাজাতক
এখনো সন্ধ্যায়
পৌষ ; কণা কণা মহানাম
অষ্ট প্রহর সাধু… সাধু… মারহাবা লাগে
মন, তোমাকে দেখিনা কত কাল
জোস্না ডোবা ঘাটে শুধু এক চিলতে মুখ মনে আসে
আর অথৈ কালো কালো বৃক্ষের ছায়া
এখনো দুটি পা আনন্দ নগর
কেবলই সেবা দিতে চায়- জননীর
তুমি ডুব সাধনায় নিমজ্জিত সহস্রযুগ
হাতড়ে জোটেনা আশীর্বাদ
শুধু এক মর্ম ছোঁয়া
তর্জনী নাকি মধ্যমায়
সেই বৃষ্টি পুকুরে ছিড়ে যাওয়া রক্তের শৈশব
কী পবিত্র এক অশ্রুরূপ
মাঝে মাঝে কৈশোরে যাই
কাজল টেনে কুড়োতে থাকি আকাশ ভর্তি বকুল
মাঝে মাঝে কালিগঙ্গার চরে
আমার নৌকডুবি সন্ধ্যা ঘনায়
শুনি, মঙ্গল শঙ্খেরা তুমুল বাজতে থাকে
মতুয়ার ঘরে
মরমি ছায়ার প্রচ্ছদ
ধীরে ধীরে মোচিত হয় রাত ;ঠোঁটের গুঞ্জনে
নুয়ে পড়ে মক্ষি ও যুঁথির চিবুক
ছাপোষা কান্নার দাগে অতি অকস্মাৎ
খুলে পড়ে সংবৎসরের ফলিত মান
আজন্মের বাহাদুরি সব
নারকেল ফালির মত চাঁদ জেগে ওঠে
চম্পক জোস্নারঘামে-
ত্রিনয়নে আজ
নম্র জোনাকির দেশে সজ্জিত আঁধার
মেখে এসে দুইহাতে কাঁকালে- পাঁজরে
পরস্পরের মেঘে ভেঙে পড়ে
তুমুল বাদল
কদমের সুচারু গোলোক
ভাসন্ত আকাশে ওড়ে রাধিকা বেহাগে
নরম করুণ এক জানকীর মুখ অভিবাসে
ঋদ্ধ অশোকের ডাল যেন তারে
আঁচড়ে এঁকে নেয় মরমি ছায়ার প্রচ্ছদে
প্রতীক্ষা এক দুরারোগ্যের নাম
ছোট বড় কয়েকটি ছায়া আমাকে ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়ে ধুলায়
সন্ধ্যাত্তোর তারাদের নীচে তাদের গান শোনাই-
লালনের -দেশের
বনের উর্ধ্ব হতে আঁচল ভরা হাওয়া উড়ে আসে
হোগলা পাতায় আঙুল রেখে কী এক খুনসুঁটি
খেলা করে ধঞ্চেফুলের বন্ধনে
আমি সুনসান বিড়ালের পাশে সঙ্গ হয়ে দাঁড়াই
অন্যকারো প্রতীক্ষা নিয়ে
প্রতীক্ষা এক দুরারোগ্যের নাম-
বলেছিল কে কবে, হাতড়াই মনে
অকস্মাৎ ভেজা জটলায় চিল্লে ওঠে শতার্ধ ব্যাঙ
তাদের জোড়া জোড়া চোখ মিলনে মুখর
হাঁটু ভেঙে দাঁড়ানো জিয়ল লাগোয়া সজনের কাঁধে
ভরসায় হেলে দেয় মাথা
তার পাতার কেশরগুলি পত্ পত্ দীর্ঘশ্বাসে
কোথায় কোথায় যেন মিলে যায়
আমার তৃষ্ণা জাগে খুব- উষ্ণের;
সারারাত- অধর্য্যে ফেটে যেতে থাকে
মর্মর বুকের পাথর।
প্রশ্ন ও উজালা বিশ্বাস
সাদা আলো তলায় ফুটে আছে মক্ষীরানির ঘর
আমার প্রেতাত্মার পাশকাটিয়ে তুমি চলাচল করো
তোমার বাহুতে মেখে থাকে কুমোদিনীর জল
আমি দ্রষ্টা গাছ,রাতের ঢালে নিশ্চুপ কাঁদি
কাজুপত্রে তুলে রাখি নজরের কষ
তুমি কার্যদিবসের আল কেটে ছোট, উদগ্র ঘোটক তোমার কেশর ওড়াতে থাকে বিম্বিত আয়নার ফ্রেমে
পিঁপড়ার রতিকুঞ্জের ভেতর ডাকিনীর ফিসফাস কথা লুটিয়ে পড়া হড়পার মত ভাসতে থাকে দূরদর্শনে
কতক উজবুক গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া গন্ধ শুধু
বাতাস ভার করে রাখে
আর আমার রত্নাগারে হামলার প্রস্তুতি নিয়ে উড়ন খেলে পঙ্গপাল
আমি কামারশালার হাপরে ফুঁকতে থাকি জোরালো শ্বাস
চোখে উজালা বিশ্বাস ঝিকিয়ে ওঠে তড়িৎ গমনে
তুমি বসন বদলে উঠে এলে ” গত নিশি কোথায় ছিলে”
প্রশ্নে তাকায় রাধা ।
ফেসবুকে ফলো করুন: পরমপাঠ সাহিত্য পত্রিকা
আরো পড়ুন- টিটো মোস্তাফিজের কবিতা