শিশির আজম এর একগুচ্ছ কবিতা
বিনোদিনী
তোমাকে আমি ভালবাসতাম বিনেদিনী
বিনোদিনী দাসী
এখন সবাই তোমাকে চেনে নটী বিনোদিনী বলে
নটী
তোমার অভিনয় প্রতিভার রোশনাই সবাইকে বিমোহিত করেছে
কলকাতা
দিল্লী
লাহোর
কে পেরেছে তোমাকে উপেক্ষা করতে
গিরিশচন্দ্র থেকে গুর্মুখ রায়
রামকৃষ্ণ থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ
বলতেই হয় তোমার ভক্তের তালিকা সমীহজাগানো
আবার এও তো ঠিক যে কেউ কেউ চেয়েছে তোমাকে রক্ষিতা করতে
হ্যা রক্ষিতা
আর আমরা তো জানিই যে তুমি জাত বোষ্টমের মেয়ে
তোমার মাা ছিল বেশ্যা
তুমিই বলেছ
কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালবাসতাম
না
তোমার অসামান্য অভিনয় প্রতিভার জন্য না
তোমার রূপ আর বাবুসমাজের প্রতি প্রকাশ্য বিদ্রুপের জন্যও না
আমি জানতাম কেউ তোমাকে ভালবাসে না
যার যার স্বার্থে সবাই তোমার প্রতি মেকি ভালবাসা দেখায়
তুমি বোঝ হয় তো
হয় তো না
কিন্তু আমি জানতাম কাউকে তুমি ভালবাসনি
কাউকে না
হ্যা তোমাকে কেবল একজনই ভালবেসেছে
তোমার রূপ জনপ্রিয়তা বা টাকাপয়সার প্রলোভন ছাড়াই
সে আমি
যাকে তুমি দেখনি
যাকে দেখার সুযোগ তোমার ছিল না
তবু জেনে রেখ
আমি তোমাকে ভালবাসি
তোমার অশ্রু রক্ত বমি তুমি আমাকে দিও বিনোদিনী
বলা যাইতে পারে এইটা আমার অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ
তোমারে নিয়া আমি ভাবতেছি
আর
আমার কবিতা নিয়া ভাবতেছি
জগতে যাদের পরিপাটি টেবিলের প্রতি মোহ নাই
তাদের ভেতর সম্ভবত আমিই একমাত্র ব্যাক্তি
তোমারে নিয়া
যে
ভাবতেছে আর দেখতেছে মিষ্টি ম্যানিকুইনটা তার দিকেই তাকায়া আছে
অপলক
যে
আপ্রাণ চেষ্টা করতেছে একটা উপায় বার কোর্বার
কীভাবে
একটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মুখে
কবিতা বসায়ে
সাউন্ড রেস্পন্স আদায় করা যায়
আর ভাবতেছি আমার কবিতা নিয়া
জগতে আর কে কে ভাবতেছে
অথবা
আদৌ
এইটা নিয়া
কেউা রিয়্যাক্ট কোর্বার প্রয়োজনই বোধ কোর্তেছে না
হয় তো
যা হোক এইটা কোন ফ্যাক্ট না
তুমি তুমিই
কবিতা কবিতাই
এশিয়া
যে দিনটা চলে যাচ্ছে তার পুচ্ছ থেকেই আমরা পেয়ে যাব স্বস্তিকর সুবাসিত আগামীকাল
আর নষ্ট করবার মতো সময় আমাদের হাতে নেই
তাহলে ঐ কথাই রইলো
যে আমরা বেঁচে উঠবো জাদরেল কোন অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই
যা কিছু পবিত্র তা থেকে মুক্ত হয়ে
নেশা
হ্যা বৃষ্টির নেশা
ভালোবাসার নেশা
ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়ার নেশা
একই পৃষ্ঠায় আত্মজীবনী লিখবে মানুষ আর প্রজাপতি
আর নীলকুঠির দেয়াল
এটা দেখতে পাবো এমন আকাঙ্ক্ষার নেশা
হ্যা
আমরা তো জানিই যে মাদের মেরে ফেলা হবে
আর এমন একটা ভাব করা হবে যেন আমরা নেই আদৌ
ছিলাম না
কিন্তু আমরা তো মরি না
আজ অব্দি আমাদের ভেতর কেউ মারা যায়নি
আর বিশ্বাস রাখতে হবে নিজেদের ওপর নিজেদের ক্ষত
আর ক্ষোভের ওপর
সূর্য আগামীকাল পূবে না পশ্চিমে উঠবে
এটা ঠিক করবো আমরা
হ্যা আমরা
কবিতা পড়া মেয়ে
আমাকে বুঝিয়ে দেবার দরকার নেই যে উনি আমাকে ভালোবাসেননি
হ্যা
উনি ভালোবাসেন ফ্রেন্স পারফিউম
ইতালিয়ান পিৎজা
চাইকোভস্কি
আর
উনি কবিতা ভালোবাসেন
পুলিশ কবিতা পড়ে কবিকে গুলি করে মেরেছে এ আপনারা দেখেছেন
(পুলিশ কবিতা পড়ে না
বেশ্যার ঋতুস্রাব হয় না)
কিন্তু কোন মেয়ের ক্ষেত্রে একথা কি খাটে
যে
কবিতা ভালোবাসে তার দাবীমতো
রাতের গাছ
রাত হলে
সচরাচর কোন গাছের নিচে আমি বসিনে
ওরা এতো কথা বলে
এতো কথা বলে
নিজেদের ভেতর
আর
মাটির সঙ্গে
তারার সঙ্গে
পোকামাকড়ের সঙ্গে
আর তাজা শক্তপোক্ত যত হাড়ের সঙ্গে।
আরো পড়ুন- জামিল হাদীর কবিতা
ফেসবুকে ফলো করুন- পরমপাঠ সাহিত্য পত্রিকা