শূন্যতার গোলকধাঁধা- পলাশ মজুমদার- গল্প
এই খুনের রহস্য-জট কোনো দিন খুলবে না। শার্লক হোমসের মতো পাকা কোনো গোয়েন্দার পক্ষেও খোলা অসম্ভব। কী এমন খুন যে কারও দ্বারা রহস্য উন্মোচন হবে না! ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, সত্য একদিন উদ্ভাসিত হবে। আবার না-ও হতে পারে।
কেন মম এমন একটি পরিকল্পনা করেছিল? রাগ, ক্ষোভ, জিদ, লোভ না অন্য কিছু-কী ছিল এর নেপথ্যে। ভাবতে গেলে নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না। মম যদি আমার সবকিছু নিয়ে চলে যেত, এতটা কষ্ট পেতাম না; সম্পর্কচ্ছেদ করলেও না। ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত হতে হতে জেনে গেছি, বিচ্ছেদ সম্পর্কের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি-এ বাস্তবতা অনেক আগেই মেনে নিয়েছিলাম। সত্য স্বীকার করে পথচলার নীতি আমাকে টিকিয়ে রেখেছে, এই কথা আমার জীবনে শতভাগ সত্য।
বুড়িগঙ্গায় যে লাশটি পাওয়া গিয়েছিল, তা আমার নয়। এক মাস পর পাওয়া মৃতদেহ শনাক্ত করা অসম্ভব। নিখোঁজ হওয়ার পর জিডির সূত্র ধরে মর্গে পড়ে থাকা লাশটিকে আমার বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া পুলিশের কোনো উপায় ছিল না। তদন্তকারী কর্মকর্তার ওপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপ ছিল; কারণ বিষয়টি পরিণত হয়েছিল জাতীয় ইস্যুতে।
দুই.
আমাকে আগের মতো ভালোবাস না কেন? মমর প্রশ্ন শুনে বুক কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে অন্তরাত্মা। জানতাম, জীবনের কোনো এক পর্যায়ে মম প্রশ্নটি করতে পারে। এবং যথারীতি এমন প্রশ্নে বিব্রত হব আমি। সেদিন ঠিক সেটাই হয়েছিল। তখন থেকে আমার অন্তর্বেদনা শুরু।
আমাদের সংসারের আয়ু না বলে বলব যৌথ জীবনের বয়সকালের হিসাবে মাত্র তিন বছর। এই স্বল্প সময়ের দাম্পত্য জীবনে মমকে কখনো ভালোবাসার কথা বলিনি; মনেও আসেনি। তবু উত্তর দিলাম-আবেগ হারিয়ে গেছে। আমি এখন সম্পূর্ণ নিরাবেগ। মনের কোথাও কোনো কোমল অনুভূতি টের পাই না। একবার হারালে মানুষ কি আর নিজেকে খুঁজে পায়!
মমর চিন্তার গভীরতা কম বলে হয়তো আমার কথা ধরতে পারে না। নিজের মতো অনুমান করে ওর ফর্সা মুখখানি মুহূর্তের মধ্যে গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যায়। ঝড়ের পূূর্বাভাসের মতো বিমর্ষতা ঘিরে ধরে ওকে। চেহারায় ফুটে ওঠে অসহায়ত্ব। কান্না জড়ানো কণ্ঠে ও প্রশ্ন করে, এমন হলো কেন? কী আমার অপরাধ? জীবন আমার সঙ্গে কেন এমন প্রতারণা করল।
প্রশ্নগুলো আমারও। নিজেকে অনেকবার করেছি। কোনো উত্তর পাইনি। সময়, সময়ই কি মানুষকে বদলে দেয়, বদলে দেয় জীবনযাপনের যাবতীয় অনুষঙ্গ। চাইলেও মানুষ আর ফিরতে পারে না অতীতে। অতীত-বর্তমান আর ভবিষ্যতের মধ্যে লুকোচুরি খেলা চলে নিরন্তর, যেন স্মৃতি আর কল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার রেষারেষি। স্মৃতি-কল্পনা নয়, মানুষ বাঁচে বাস্তবতার মধ্যেই।
মমকে একপলক দেখতে কত প্রতীক্ষা করেছি। ওর কথা ভেবে শরীরে-মনে হয়েছি রোমাঞ্চিত। কত রাত কাটিয়েছি নির্ঘুম। স্বপ্নে জাগরণে মম ছাড়া কেউ ছিল না। কত রকমভাবে কল্পনা করেছি-একদিন আমরা হারিয়ে যাব দূরে কোথাও। এক তরিতে দুজন ভাসব। কেবল ভাসব। চাঁদনী রাতে হাতে হাত রেখে নিরুদ্দেশ যাত্রায় বের হব। ঘর বাঁধব গহিন বালুচরে। কেউ জানবে না আমাদের খবর। এমন ভাবনাগুলো প্রতিনিয়ত সুখের সাগরে ভাসাত। তারপর দীর্ঘ বিচ্ছেদ। ছিটকে পড়ি দুজন দুদিকে।
সে যেন আগের জন্মের কথা। জাতিস্মরের মতো মনের কোণে স্মৃতি মাঝেমধ্যে ভেসে ওঠে। স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা শেষে কলেজে ভর্তির অপেক্ষায়। সারা দিন বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে দিন কাটাতাম। শশব্যস্ত বলা যায়। তার মধ্যেও মম আমার মনে সারাক্ষণ খেলা করত। বিশেষ করে যখন একা থাকতাম। কোনো কিছুতে পরিপূর্ণ মনঃসংযোগ করতে পারতাম না।
তেত্রিশ বছর বয়সী সুপ্রতিষ্ঠিত আমার জীবনে সেই দিনগুলো আজ অনেকাংশে ম্লান। কুয়াশার মতো অস্পষ্ট। একতরফা প্রেমের প্রবল জোয়ারে তখন আমার হৃদয়-নদীর দুকূল ছাপিয়ে উঠেছিল; সাঁতার কাটতাম কল্পনার সমুদ্রে। সেখানে খেলা করত কত কথা, কত গান, কত কবিতা। সেসবের কোনো মূল্য মমর কাছে ছিল না; ও ব্যস্ত ছিল অন্য কোনো বিষয়ে। হয়তো মেতেছিল অন্য কোনো আনন্দযজ্ঞে। সেখানে সবাই থাকলেও আমি ছিলাম না। ও ছিল দূরের নক্ষত্রের মতো। চাইলেও যাকে ধরা যায় না।
আমার মনের কথা জানার পর মম হেসে উড়িয়ে দেয়। হয়তো বামন হয়ে চাঁদ ধরার সাহসের মতো কিছু ভেবে বান্ধবীদের কাছে উপহাস করত। দূরে বসেও তার আভাস পেতাম আমি। মম জানত না আমার জিদ ও সিরিয়াস প্রকৃতির কথা; জানত না যে, আমি হালকা মানুষ নই। আমার ভেতরে যে বাস করে প্রবল এক অভিমানী মানুষ, তা ওর পক্ষে অনুমান করা সম্ভব ছিল না।
তবু হাল ছাড়িনি। আমি সহজে হাল ছাড়ার পাত্র ছিলাম না। শেষ আমাকে দেখতে হবে। কত রকমভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে ওকে ভালোবাসি, তার ইয়ত্তা নেই। অথচ ওর আচরণ ছিল রহস্যময়। অথবা নারী-হৃদয়ের রহস্য বোঝার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি আমার তখন হয়নি। সেই রহস্যময়তা আমার জীবনে এমন জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল যে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। কিছুই ভালো লাগত না। সারাক্ষণ অন্যমনস্ক থাকতাম। পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হচ্ছিল।
হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়েছিলাম। সিগারেট, গাঁজা থেকে শুরু করে ঝুঁকেছিলাম মদের দিকেও। খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে নিষিদ্ধপল্লিতেও রাত কাটাতাম। নিদারুণ অর্থশূন্যতা আমাকে ঠেলে দেয় ভয়াবহ পরিণতির দিকে। ভেবেছিলাম আত্মহননের কথা। একবার নয়। একাধিকবার। হয়তো আত্মহত্যা করেই ফেলতাম। এত দিনে বিলীন হয়ে যেতাম পঞ্চভূতে।
ওই কঠিন সময়ে পবন নামের এক বন্ধু সহযোগিতার হাত বাড়ায়। বাঁচায় অন্ধকার থেকে। পবন সাহস জোগায়; জোগায় বেঁচে থাকার রসদ। তার কাছে জেনেছিলাম, জীবন কারও জন্য থেমে থাকে না। প্রত্যেকের জীবন স্বতন্ত্র। জীবন কেটে যাবে জীবনের নিয়মে। পবনের কথাগুলো আমার মনের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। একটু একটু করে আমার ভেতর আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
মাসখানেক পর পুরোপুরি বদলে যাই আমি। কাজ ছাড়া বাইরে যেতাম না। কোনো কাজে গেলেও টুপ করে কাজ সেরে চলে আসতাম। এক কঠিন প্রতিজ্ঞা আমূল পাল্টে দেয় আমাকে। ধীরে ধীরে নিজেকে যন্ত্রমানবের মতো অস্বাভাবিক মানুষে রূপান্তরিত করি। মন থেকে মুছে যায় সমস্ত আবেগ।
পার্থিব সব ধরনের আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে শুরু করলাম। কারও সঙ্গে মিশতাম না। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। সারাক্ষণ একা থাকতাম। আর কী যেন ভাবতাম। কেউ কেউ ইয়ার্কি করে বলত, শিমুল তো দার্শনিক হয়ে গেছে। আড়ালে কেউ পাগল বলেও ডাকত।
সারাক্ষণ বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকতাম, যেন লেখাপড়া ছাড়া আমার কোনো কাজ ছিল না। মা মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে বাইরে ঘোরার জন্য ঠেলে পাঠাতেন। কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ঘুরে আবার ফিরে আসতাম। বাইরে থাকতে একটুও ভালো লাগত না।
এদিকে পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ায় সবাই গর্ব করা শুরু করল; অথচ আমার কোনো বিকার নেই। বৃত্তি পেয়ে পেয়ে ধাপে ধাপে শীর্ষস্থান অধিকার করে শিক্ষাজীবন শেষ করি। রেকর্ডসংখ্যক নম্বর পাওয়ার কারণে বিভাগ থেকে আমাকে অফার দেওয়া হয়; কর্মজীবন শুরু হয় আমারই দর্শন বিভাগে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে আসি।
তিন.
বছর চারেক আগের কথা। এক দুপুরে মম আমার ডিপার্টমেন্টে দেখা করতে এলো। তখন দার্শনিক হিসেবে এক নামে দেশে-বিদেশে আমি পরিচিত। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যেতে হয়। অনুরোধে ও চাপে দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকায় লিখতে হয়। সুশীল সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে সর্বত্র গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি। ফলে আমাকে খুঁজে পেতে মমকে বেশি বেগ পেতে হয়নি।
মম ঘণ্টাখানেক আলাপ করল। ক্লাস ছিল বলে বেশি সময় দিতে পারিনি। আমার বৃত্তান্ত জানার পর ওকে অনেকটা আশ্বস্ত মনে হলো। চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক খেয়াল করলাম। অথচ আমি একটিও প্রশ্ন করিনি। রাগ-অভিমান কিংবা ক্ষোভের কারণে নয়, আসলে ওকে দশটা মেয়ে থেকে আলাদা মনে হয়নি। অন্য সবার মতো ওর প্রতিও আমার কোনো অভিযোগ ছিল না।
তারপর থেকে মম প্রায়ই দেখা করতে আসত। কখনো ফোন করত। গল্প করত বিভিন্ন বিষয়ে। আমার মনে হতো ঠিক সৌজন্যবশত ওর সঙ্গে কথা বলতাম। মুখের ওপর আমি কাউকে না বলতে পারতাম না। ভদ্রতাবোধ আমার সহজাত প্রবৃত্তি। অন্য মেয়েরা আমার অনাগ্রহের কারণে আলাপচারিতা বেশিক্ষণ চালাতে পারে না। কেটে পড়ে। ধারণা ছিল, মেয়েরা সহ্য করে না বিন্দুমাত্র অবহেলা। অথচ মম ব্যতিক্রম। ও আমার অনুৎসাহ আমলে নেয়নি; খেয়াল করেনি সৌজন্যবোধ।
এভাবে বছরখানেক চলার পর হঠাৎ একদিন কৌশলে মম আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। দিকপাশ না ভেবে রাজি হয়ে যাই এ জন্য যে আমি তো কাউকে ভালোবাসি না; বরং মম এদিক থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। কারণ, ওকে একসময় ভালোবাসতাম।
চার.
বিয়ের তিন বছর পর মমর প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। দিনরাত আমাকে জ¦ালিয়ে-পুড়িয়ে মারছে। কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। জানি, এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। আমার মনের কথা মমকে কোনো দিন বলতে পারব না।
তবে একটা উত্তর তৈরি হয়েছে মনে-পৃথিবীতে ভালোবাসা ছাড়া সবকিছুর মূল্য আছে, এমনকি করুণারও। যেমন আমি মমকে করুণা করে সংসার করছি। যে ভালোবাসা ষোলো বছর আগে মন থেকে উবে গিয়েছিল, তা কখনো ফিরে আসবে না। অসম্ভব। আর সারা জীবন আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে শূন্যতা। জানি, এই শূন্যতা থেকে আমার মুক্তি কোনো দিন মিলবে না।
পাঁচ.
দিন দিন মম যে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হচ্ছে, তা টের পেতাম। প্রতিশোধ হিসেবে আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল। প্রশ্ন করলে না পারতে উত্তর দিত। দায়সারা গোছের। কোনো প্রশ্নের উত্তরও দিত না। চুপ থাকত। কার সঙ্গে যেন প্রায়ই ফোনে কথা বলত। কিছু কথা আমার কানেও আসত। আমি সেসব আমলে নিতাম না। ওর মানুুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকতেই পারে। আমার বন্ধু নেই বলে কি ওর বন্ধু থাকতে পারবে না।
অনেকের সঙ্গে ওর সম্পর্কের বিষয়কে এত সহজভাবে নিলাম যে, প্রশ্ন করে ওকে কখনো বিব্রত করিনি। তা ছাড়া আমাদের সম্পর্ক গতানুগতিক স্বামী-স্ত্রীর মতো নয়। স্বামীর অধিকার ফলানোর প্রশ্ন অবান্তর; যেন বিশেষ প্রয়োজনে এক ছাদের নিচে বাস করছি।
মাঝেমধ্যে ওর বন্ধুরাও বাসায় আসত। কেবল মেয়েবন্ধু নয়, ছেলেবন্ধুও। কখনো ও রাতে বাসায় ফিরত না। কয়েক দিনের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে চলে যেত। দেশের মধ্যে শুধু নয়, বিদেশেও। টাকা নিয়ে যেত আমার কাছ থেকে। আমি ওকে না করতে পারতাম না। যখন যা চাইত দিয়ে দিতাম, যাতে ঝামেলা না বাড়ায়। কেন জানি ওকে খুব ভয় পেতাম। আমাকে অফার করলেও ওর সঙ্গে বেড়াতে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না। তাই অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়তাম।
একদিন পত্রিকার জন্য একটি কলাম লিখছিলাম। মম বাথরুমে ছিল। তখন বিছানায় পড়ে থাকা ওর মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। একবার নয়। তিনবার। বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিতে গিয়ে স্ক্রিনে দেখি, সুমনের নাম। কৌতূহল বশে ফোন রিসিভ করলাম। শুনতে পাই একটি পুরুষ কণ্ঠ, ঘুমের ওষুধটা বিকেলে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াবা। ঠিক বারোটায় আমি আসব। দেখবা ওকে কী করি। লাশ টুকরা টুকরা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেব। কোনো প্রমাণ রাখব না। সব ঠিকঠাক। তুমি কোনো চিন্তা করো না। টাকাটা রেডি রেখো।
সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে সুইস অফ করে দিলাম। আমার হাত-পা কাঁপছে। মাথা কয়েকবার চক্কর দিয়ে উঠল। আমি যেন আর আমার মধ্যে নেই। ভয়ে হাত-পা পেটের মধ্যে সেধিয়ে গেছে। এর মধ্যে বের হওয়ার জন্য জামাকাপড় পরে নিলাম।
মম বাথরুম থেকে বের হতেই বললাম, জরুরি কল এসেছে। একটি সেমিনারে যোগ দিতে আমার চট্টগ্রাম যাওয়া দরকার। আগামীকাল সকালবেলায় প্রোগ্রাম। এখনই বের হতে হবে। দুদিন পর ফিরব। পৌঁছেই কল দেব। তুমি চিন্তা করো না।
এই বলে এক কাপড়ে বের হয়ে পড়লাম। সঙ্গে নিলাম কেবল পাসপোর্ট, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড আর আলমারিতে থাকা টাকার বান্ডেল। মোবাইলের সুইচ অফ করে সোজা কলাবাগান। বেনাপোলগামী বাসের টিকিট কেটে চেপে বসলাম।
পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলাম মাসখানেক। মাঝেমধ্যে প্রথম আলো অনলাইন পত্রিকায় চোখ বুলাতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক শিমুল চৌধুরীর খবর প্রতিদিনই দেখতে পেতাম। নিখোঁজ। জিডি। কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে। প্রগতিশীল শিক্ষক খুন। হত্যা না আত্মহত্যা। জঙ্গিবাদ ইস্যু। স্বজনের আহাজারি। তার স্ত্রী মমকে জিজ্ঞাসাবাদ। রিমান্ড। চিহ্নিত হচ্ছে না খুনি।
একদিন পত্রিকায় দেখি, শিমুল চৌধুরীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- কালকেউটে