সুমি কায়সারের কবিতা
অধীপতি আসমান
হে প্রভু দয়াবান অধীপতি আসমান,
ফুল ফল মাটি জল তোমারই দান।
ভোর সকালের সূর্য উদয় তোমার নামেই হয়,
তোমার নামের গান গাহিয়া কোমল হয় হৃদয়।
পাখিদের কলরব খোদা নাম করে যপ,
তুমি এক অদ্বিতীয় তুমিই মহান রব।
তোমার অনুমতি ছাড়া গাছের পাতা ঝরেনা,
শ্বাস-প্রশ্বাস একটি চোখের পলক পড়েনা।
তোমার ইশারাতে হয় রাত্রি প্রভাত,
যত জানি তবু যেনো তুমি অজ্ঞাত।
এই সুন্দর ধরনীতে মোরে দিলে শ্রেষ্ঠ্য রূপ,
তোমার সৃষ্টি আহা কতো অপরূপ।
পাঁচ প্রহরে করি মোরা তোমার ইবাদত,
ওগো রহমান তুমি মোদের রাখো সালামত।
কতো করি দুঃসাহস কতো শত পাপ,
ভুল ত্রুটি আড়াল করে -করে দাও মাফ।
ভালোর জন্য নরম তুমি খারাপেতে শক্ত,
ধ্যানে তুমি জ্ঞানে তুমি সর্ব মূহুর্ত প্রতি ওয়াক্ত।
তুমি অতি দয়ালু বড় করুনাময়,
বিপদে তোমায় ডাকি তুমিই আশ্রয়।
তুমি স্রষ্টা মহান তাই করি গুনগান,
আপদে ভরসা তুমি সর্ব বিরাজমান।
অন্তহীন
তুই শহুরে সময় আমি চোখের কোণে জল,
তোকে ভাবতে গেলে বুকে নামে উড়ো মেঘের দল।
সেই মেঘেরা হয় ভাগ আর তুই হোস বিয়োগ,
তোর পরশের ভরসা মেখে দুঃখেরা পায় নিয়োগ।
আমার অবাধ অভিমান তোর চোখে সুখের ঘুম,
তোর পাঠানো দুঃখ আমার পায়ে আঁকে চুম।
সেই চুমুর কথাই ভাব কিছু আলসেমি স্বভাব,
আমার বুক দেয়ালে ছুড়ে দেয়া তোর ধূর্ত জবাব।
বুঝিস কি তুই প্রেম-আর জানিস ভালোবাসা,
চোখ কতটুকু ঝরালে জল ভেঙে যায় আশা।
পাতা ঝরা গাছেরাও একদিন পায় নতুন জীবন,
তবু তোকে নিয়ে সাজেনা আমার প্রেমের সাতকাহন।
তোকে ভেবে ভেবে হই খুন – বেঁচে যাই বারংবার,
তুই সাত রাজার ধন আর রূপকথা আমার।
আমি বোঁকা সোকা প্রেম তুই চালাক মনোভাব,
এই মনের শহর বসন্তহীন শুধু তোর’ই অভাব।
তুই অভাব ঘরের সুখ আর রঙধনু আমার,
শত-শত পিছুটান ছেড়া বোতাম জামার।
যত করিস অবহেলা ততই কাছে নিয়ে যাই,
তোকে বুকে বয়েও মিছেমিছি দূরত্ব বাড়াই।
তোর নামেই বাঁচা মরা তুই আমার সেই অসুখ
তোকে ছাড়া আমি শূন্য জুড়ে থাকিস ব্যথা বুক।
আমি চলে যাওয়া পথিক পিছু তাকাই শতবার,
আসবো ফিরে তোর’ই নীড়ে তুই ডাকবি যতবার।
এক বৃষ্টিস্নাত সাঁঝে
চাঁদের মতো তিলক বৃত্ত কপাল মাঝে আঁকছিলে,
এলো কেঁশে শ্যাওলা ভাসা উঠান মাঝে হাটছিলে।
ছাতা মাথায় দুহাত ভরে বৃষ্টিটাকে ধরছিলে,
সেদিন তুমি হাসছিলে খুব বৃষ্টি গায়ে মাখছিলে।
আমি তখন জানলা পাশে অবাক হয়ে দেখছিলাম,
বৃষ্টি নয়তো আমি তোমার আলগা সোহাগ নিচ্ছিলাম।
তোমার পায়ে রৌপ্য নুপুর ছমছম আওয়াজ শুনছিলাম,
আমি তখন ভেতর ঘরে জ্বলছিলাম আর পুড়ছিলাম।
বৃষ্টি বড়ই ভাগ্যবান সে তোমার ছোঁয়া পাচ্ছিলো,
আমার তখন হৃদ গহীনে তোমার আঁদর ভাসছিলো।
আকাশ যখন গর্জে ওঠে বজ্রপাতের আলোতে,
তুমি তখন একটু ভীত ভয়ে তোমার বুক কাঁপে।
একটু ভয়ে আমিও ছিলাম ভীত তোমার মুখ দেখে,
হন্যে হয়ে দৌড়ে গিয়ে দিলাম আমার বুক পেতে।
বুকের মাঝে গুজলে মাথা মনের ঘরে সিধ কেটে,
ঠিক তখনই মন শহরের মরা গাছে ফুল ফোঁটে।
তারপরই ঠিক মাখলে সোহাগ আহ্লাদে মোর ঠোঁট কাঁপে,
দিন রাত ভোর কি এক যে ঘোর তোমার নামের যপ যপে।
ক্রোধ
ঝড় বৃষ্টি দ্বায় সেরেছে
সূর্য দিচ্ছে অগ্নিতাপ,
অভাবেরও অভাব হয় আজ
প্রকৃতির এ অভিশাপ।
খরা নেমেছে জমিনে
আকাশটাও আজ উদাস,
বাতাসে যেনো বিষ মিশেছে
অসহায়ত্বের পূর্বাভাস।
কতো যে আমরা করেছি পাপ
হারিয়েছি ক্রমে বোধ,
এ হয়তো আমাদের প্রতি
সৃষ্টিকর্তার ক্রোধ।
আরো পড়ুন- জামিল হাদীর কবিতা