হেমন্তের পদাবলি- টিটো মোস্তাফিজ
হেমন্তের এক রাত্রি
কৃষ্ণপক্ষের ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ খানা ভাসে
হেমন্তের ফসল কাটা মাঠের উপর।
জোছনার আবছায়ায় বিক্ষিপ্তভাবে
পড়ে থাকা ধানের গোছার দখল
নিতে ব্যস্ত মেঠো ইঁদুরের বাথান।
গাছের কোটর থেকে হঠাৎ
প্রহর ঘোষণা করে প্যাঁচা।
অতঃপর নিঃশব্দ উড়ান
রাতের আকাশে একাকী চাঁদটা
রেখে কেমনে ঘুমাতে যাবে সে?
ঘরে ও বাইরে আরও কয়েকজন
করেছে না ঘুমানোর পণ।
দেয়াল ঘড়িটার সেকেন্ডের কাঁটা
হাঁকডাক শুরু করে টিকটিকায়।
ঘরের টিকটিকিও কম যায় না,
ঘুণপোকার ছানারা জেগে ওঠে
অতঃপর ক্যাটকুট নৈশভোজ।
বিরতি নিয়ে নিয়ে কির-কিরি
ঘাসফড়িং এর টেলিগ্রাম।
ঝুলবারান্দা থেকে ভেসে আসে
শেষ গুচ্ছে ফোটা শিউলির ঘ্রাণ।
বাতায়ন পাশে কিশোরী কুয়াশা
গলায় খোঁচা দিয়ে খুশখুশ করে।
মশারীর পাশে কেঁদে ওঠে মশকী
কে জানে কী নালিশ তার!
দীর্ঘ বাক্সবন্দি ন্যাংটা লেপখানা
রোদ, বাতাস ও কাপড়ের দাবীতে
অবরোধ করে নাসিকা প্রদেশ।
তারই অবকাশে নিজের শ্বাস প্রশ্বাস
সশব্দে জানায় এখনো বেঁচে আছি।
হেমন্তের রাতে
থাই গ্লাসে টোকা দেয় হালকা বাতাস
ঘুলঘুলির পথে ঢোকে একটি জোনাকি।
সিলিং ফ্যান থেকে বাতাসে ভর দিয়ে
উলম্বভাবে নামতে থাকে মাকড়শা।
মাঝেমধ্যে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ে
কামরাঙা গাছটায় জমাটবাঁধা শিশির।
আমি এমনকি আমার হৃৎকম্পনের
শব্দটাও শুনতে পাই বালিশের মাঝে।
শুষ্ক ঠোঁট আর্দ্রতা খোঁজে রসনায়।
চিলেকোঠার লোহার দরজা খোলে
কে যেন কোথাও অতি সন্তর্পণে।
এমন রাতে কে যায় অভিসারে?
আরো পড়ুন- রুশিয়া জামান রত্নার কবিতা