ডরোথি পার্কারের কবিতা- অনুবাদ: টিটো মোস্তাফিজ
বোহেমিয়া
লেখক, অভিনেতা ও কলাকুশলী আর এইসব
কখনো কিছুই জানেনা আর জানলেও নয় সব
ভাস্কর আর শিল্পী আর তাদের যত কিডনী
তাদের প্রেম কাহিনী গায় সিয়াটল থেকে সিডনি
নাট্যকার, কবি আর এমন অশ্বের গ্রীবাদেশ
এদের শুরু যে কোনো স্থানে সঙ্গমে হয় শেষ
ডায়েরি লেখক, সমালোচক আর ইত্যাকার যারা
কখনো কিছু বলে না আর কখনো না বলে না।
যে সবের কাজকাম আমার সহ্যসীমা ছাড়ায়
হা ঈশ্বর, এরাই তো জীবন বীমার গান গায়!
অভিজ্ঞতা
কিছু লোক তোমার হৃদয় ভেঙে দুটুকরো করবে
কিছু লোক তোষামোদ করবে আর ধামাধরবে
কিছু লোক তোমার দিকে তাকাবেই না কখনো
আর এভাবেই ব্যাপারটির সমতা হয় জেনো।
যৌনতার সাধারণ পর্যালোচনা
নারী চায় একগামীতা,
পুরুষ খুশি হতে চায় নতুনত্ব।
প্রেম নারীর চাঁদ ও সূর্য,
পুরুষের মজার হরেক তত্ত্ব।
নারী বাঁচে তার প্রভুকে নিয়ে,
দশ পর্যন্ত গোনো,
আর পুরুষ ওঠে তেতে।
এই যা সারাংশ আর যা যোগফল,
পৃথিবীর কী বা ভালো হয় এতে?
উপসংহার
সামান্যই আছে নেয়া কিংবা দেয়ায়
সামান্যই আছে জল বা সুরায়
এই বাঁচা, এই বাঁচা, এই বেঁচে থাকা
এ তো নয় আমার অভিপ্রায়
ওহ্ লড়াই করা কঠিন, আর বিরল
কারো শীর্ষ স্থান অর্জন করে নেয়া
কারণ শিল্পকলা বিশোধনের এক রূপ
আর ভালোবাসা স্থায়ী এক পতন
আর কর্ম হলো গবাদিপশুর প্রদেশ
আর বাকিটা খোলসের মাঝে ঝিনুক
তাই আমি ভাবছি যুদ্ধ আহবান করবো
তুমি কি দয়া করে নরকের পথ দেখাবে?
লড়াইয়ের শব্দাবলী
ধরা যাক প্রেম আমার এত্তো সোজা,
ধরো আমি দংশিত অহমের যন্ত্রণায়
ধরো প্রায়শই আমার মন খারাপ থাকে
বিবেচনা কোরো তবু তোমার পাশে আমায়।
ধরো আমি সাহসী নই কিংবা তরুণ
আদরে আতসে আমার প্রলাপেরা থরোথরো
ধরো শয়তান আমার কথায় পড়েছে ঢুকে
তবু আমার হৃদয়টা পরে নিতে পারো।
কিন্তু ধরো আমার কবিতা গুলো ছাঁকে না
এবং আমি পেতে পারি আরেক প্রিয়জন।
ললনার পুরস্কার
ললনা, ওহে ললনা, কখনো আলাপ করিও না
তোমার আপন কলিজার সাথে!
ডাগর ডাগর কথাগুলো সব রেখো নির্মল
বলতে যা চাও বিড়বিড় কর না!
জাহির করো নিজেকে, বাক্য আর দর্শনে
দ্রুত আর অগভীর এক ঝর্ণা সম।
শীতল হবে আর জোরে চলে যাবে
যেমন মিলিয়ে যায় তুষার এপ্রিলের
কমনীয় হবে আর হাসিখুশি
যেমনটা হয় মে-র চেরি ফুলরাশি।
ললনা, ওহে ললনা বলো না কথা তার সাথে
যে অশ্রু পোড়ায় তোমার সোনার কপোল
সে তো তাকে জিতে নেবে না, যার বাক্য
শুনিয়েছে তাকে হারানর শঙ্কা ধ্বনি।
মাথা খাটাও, দুঃখী ভাব ছাড়ো
তোমার প্রিয় সুন্দর ছেলেটাকে পাবে
রাশভারী হয়ো না কখনো কিংবা সত্যি
তোমার ইচ্ছে তোমার কাছেই আসবে।
আর তাতে যদি সুখী হও, খুকি
এতে প্রথম হয়েছ, অভিনন্দন তোমায়!
পর্যবেক্ষণ
যদি আমি পার্কের চারপাশে ঘোরাঘুরি না করি
নিশ্চিত ভাবেই নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারি
যদি প্রতি রাতে রাত দশটার মধ্যে ঘুমাই
তবে ফিরে আসতে পারে চেহারার চেকনাই
যদি আমি মজা নেয়া থেকে বিরত থাকি
হতে পারি বড় কিছু জীবন যাবে না ফাঁকি
কিন্তু আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো
তোমাদের কারো কথায় না চুল ভেজাবো।
উদ্ধত নয় নতও নয়
তারা আমার কথা বলে, তা-ই তো করবে
আমার ভালো হবে কিনা সেটা এক ধাঁধা
লভ্যাংশ সংগ্রহে খুঁজি বন্ধু আর অনুসারী
আর অন্তর্দাহ জাগানিয়া নাম গুলো আসে
বিজ্ঞান, শিল্পকলা আর পার্লার গেমসে।
কিন্তু আমার যা ভালো লাগে তা-ই করি
অভিজ্ঞ পরামর্শগুলো পাশে সরিয়ে রেখে
যদিও আমি খুব একটা ভালো করি না
তবু বুড়ো আঙুলটা নাকের সাথ ছাড়ে না।
অভাগীর কাকতাল
কসম কেটে বলবে যখন তুমি তারই
দীর্ঘশ্বাস নেয়া শিহরণে কাঁপা গলায়
আর সে ও জানায় গভীর প্রণয়
অজর, অমর অতলস্পর্শী প্রতিশ্রুতি
জেনে রাখো ললনা তোমাদের একজন
মিথ্যের ফুলঝুরি ফোটাচ্ছে অকারণ।
সংক্ষিপ্ত ঘন্টা
আমার ছোট্ট গানগুলো আর ফেরে না
এখন এই শুয়ে থাকা রাতগুলোয়
আমার নিচে থাকা মাথাটা চায়
অন্ধকার দেখতে আর থাকে
অপতনশীল ধূসরতার অপেক্ষায়।
ওহ্, শীতের রাত এত বিষন্ন আর ধীর
আর বিষন্নতার গান যেন বোবা হয়ে রয়
আর এটাও দুঃখজনক, মিথ্যে বলা
আর জানা আরেকটি ভোর আসবে।
দূরত্ব
হে প্রিয়, ভালবাসতে কিংবা লড়াই করতে
দুনিয়া পাড়ি দেয়া লাগতো কি?
আমি শান্ত থাকতে পারতাম আর সতৃষ্ণ চোখ দুটো
বন্ধ করে রাখতে পারতাম দিবস ও নিশি।
সাগরসম দূরত্বে থাকাটা সাহসী আর মধুর যন্ত্রণা
কিন্তু গলির শেষ মাথায় তোমাকে পাওয়া
আমার হৃদয় মাঝে তেতো লু হাওয়া।
ডরোথি পার্কারের কবিতা: অনুবাদক- কবি টিটো মোস্তাফিজ
আরো পড়ুন- জামিল হাদীর কবিতা