পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- অর্ণব সামন্ত

 নক্ষত্র মানুষ

ফেরানোর সময় কি আছে ?
বরঞ্চ হারানো কাঁচের ফাটল
লিখে রাখে দীর্ঘশ্বাস , বিন্দুমাত্র সুখ
কুয়াশার অসুখ আজকাল বড্ড বেশি জ্বালায়
জাতিস্মর হতে চেষ্টা করি
তবু মুখগুলি মনে পড়ে না
সম্পর্কগুলি হানাবাড়ির মতন পড়ে থাকে
কেউ এসে হাত ধরে না , কেউ কেউ না
তবু ভাবি পর্বত শিখর থেকে কেউ ডাকছে
পর্বত করে দেবে বলে ভেতরে যার অজস্র নদী
আর আমি মহাকাল বুকে নিয়ে
নেমে আসব সমতলে
সমস্ত হজম করে সহজ হয়ে
কবিতা ফুটে উঠবে চক্ষুতারায়
নক্ষত্রমানুষদের দেখে দেখে … !

 

অবসর

যুগের পর যুগ ধরে কবি লিখে চলেছেন
কখনও বিরহ যক্ষ উপাখ্যান ,
কখনও আনন্দমুখর বসন্তোৎসব ,
যদিও বিলাপের আর্তনাদ আপ্লুত স্বর জুড়ে আছে
ফুলমাল্য পাচ্ছেন , স্বীকৃতি দেশীয় , আন্তর্দেশীয় , ভুবনগ্রামের
তবুও মহাকালের করাল বদনে তার বিশ্বাস নেই
মুহূর্তেই তা’ গ্রাস করে নিতে পারে বিভাব বৈভব
তাই পাঠকের হৃদয়ের অনুমতিতে তার ভীষণ রুচি
সেই একমাত্র পারে আবহমানকালের জমিতে
বীজ বুনে দিতে যার ফসল পেতে পারে
আপ্রলয় জনগণমানস , এভারেস্টে পৌঁছেও
তার মনে হয় পান্ডুলিপি ছাইপাঁশ , টুকরো টুকরো করে
ছড়িয়ে দেন চতুর্দিকে পর্বতে অরণ্যে সমুদ্রে
আর নিজে চলে যান নিষ্ক্রমনে
একটি বিশুদ্ধ কবিতার বিশুদ্ধ জীবনের সন্ধানে !

 

সিদ্ধার্থ

ঐ যে সিদ্ধার্থ এসে দাঁড়িয়েছেন রাতের গহনে
মশারি অগ্নিসমেত পুড়ে মরেছে শৈশব
সরিষা বাটতে বাটতে একমুঠো সরিষার আনয়ন গল্প
ল্যাম্প জ্বলছে টিমটিম করে প্রান্তিকে
কৈশোর ক্রমে ছুটে যাচ্ছে যৌবনে
নদী চিনতে পাহাড় পর্বত উপত্যকা সমতল
মোহনার গর্জন , অরণ্য আদিম মনোভাব
খামখেয়ালী ইছামতী পলিক্রোমিক
নমস্য শব্দেরা প্রেমিকা হয়ে উঠছে
পুরুষোত্তম জগতের কেন্দ্রে বঙ্কিম দাঁড়িয়ে
বাঁশি বাজাচ্ছেন তো বাজাচ্ছেন কোনো দিকে খেয়াল নেই
শুধু তির তির করে আনন্দ ঝরে পড়ছে
কোষ কোষ কোষদল থেকে , স্নায়ুতে সেতার ঝঙ্কার
বিদ্যুচ্চমক ফিকে হয়ে অন্ধকারে মুখ লুকোচ্ছে
অষ্টসিদ্ধি পাবার পর এক ঢেউয়ে ভেসে আসছে
মহাজনকের কাছে হাজার হাজার জন্ম
ভিন্নরূপে নদীটি উদ্ভাসিত হচ্ছে জননী , মেয়ে ,
প্রেমিকা , বধূ হয়ে – সেই মহামায়া প্রেমের বাতাবরণে
ঘিরে রাখছে বোধি , হৃদয়ের বোধে অসহায় ভাসিয়ে !

*অর্ণব সামন্ত-কবি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ। 

 

আরো পড়ুন- বদরুজ্জামান আলমগীরের কবিতা

ফলো করুন- পরমপাঠ ফেসবুক পেজ