পদাবলিপ্রচ্ছদ

একগুচ্ছ কবিতা- আনিসুর রহমান অপু

পতাকা  ও  প্রতিবেশী

[ কবি শ্রীজাত’র ‘পতাকা’ কবিতার পাঠ প্রতিক্রিয়ায় ]

 

দিয়েছ শুশ্রূষা মিথ‍্যে নয়, দিয়েছিলে তা কি শুধু ভালোবেসে ?

কতোটুকু প্রেম তার, কতোটা বাঁচলো প্রতিরক্ষা ব‍্যয়, দিনশেষে ?

 

দিচ্ছ জল, খরা-মারী, বাঁধ খুলে বন‍্যাও দু’হাতে— নির্বিকার !

আর উপহার লেন্দুপ দর্জির মতো ভণ্ড-ভ্রষ্ট স্বৈরাচার !

 

যদিও ‘বাঙালি’ তুমি,  দিনশেষে রয়ে যাও সে-ই এক চোখা

ছড়ি ঘোরাতে মরিয়া মোড়ল যে গোত্র, নির্লজ্জ ও একরোখা !

 

ভালোবাসা-বিরোধের মানে জেনো কমবেশি আমরাও জানি

কাঁটাতারে ঝুলে থাকে বন্ধুত্বের নিদর্শন, যেভাবে ফেলানি !

 

‘লঘু’-‘গুরু’র গুজব তিল থেকে এক লাফে অতিকায় তিমি

বাজাচ্ছ নৃশংস যুদ্ধের দামামা,  দ্রিমিকি দ্রিমিকি দ্রাক্ দ্রিমি !

 

দিয়েছ যা ভুলিনি তা , কায়োমনে করিও স্বীকার তার ঋণ

পরিয়ে শেকল পায়ে অথচ সাজাতে চাও, চিরপরাধীন !

 

পতাকা পোড়ায়‍-পেষে , কতিপয় নালায়েক, মূর্খ-অর্বাচীন—

তুমি জ্ঞানী ‘অন্য ভাবে কথা হবে ‘ বলে তাও দেখাচ্ছ সঙ্গীন !

 

পুষছো তো তোমরাই দ্বেষ-ঘৃণা, তারও বেশি ক্ষমতার পেশী

আমরা চেয়েছি কেবল সমমর্যাদা আর সৎ প্রতিবেশী !

 

ছড়াবে কুটিল কাঁটা, ধরে নেবে বিনিময়ে আমি দেবো ফুল

সে তোমার ভুল, যে ভুলে হারাবে কূল আর উদ্দেশ্যের মূল !

 

 

জন্মকথন

ঘুমুতে গেলেই আসে , ব্যস্ত চঞ্চল দিনের মাথা

যখনি বালিশে রাখি , আলগোছে তখনি তুমুল

তোড়ে হাজির হুজুরাইন, মগজের কোষে মেরে

মৃদু টোকা, থোকা থোকা শব্দের মিছিল, তন্দ্রাহারা

রাত্রির রোদ্দুর মেখে হেঁটে যায়, সময়ের গাথা

কিংবা মন্থন যাপিত সমুদ্রের ;  উদ্বাস্ত – উম্মূল

মানুষের মুখ , দুঃখ সুখ নৈমিত্তিক হাঁটু গেড়ে

 

থাকা বঞ্চনার কুটোখড়, পরিযায়ী পালকের

নানারঙ –যাযাবর উপমায়–প্রেরণার পাখি

প্রাঞ্জল পাঁপড়ি মেলে ডেকে নেয় শব্দসমাবেশে ।

শাওয়ারের তলায়, যুবতী ঝর্ণার প্রেমধারা —

প্রতি রোমকূপে বুনে যায় শিহরণ, চালকের

আসনে বসে-সে কাব্যরানী , বাঁধে কবিতার রাখি

রীতিঋতু, স্থানকালপাত্র, প্রেক্ষাপট নির্বিশেষে ।

 

অমিয় জোছনার গান

কার মুখ ভাসে ক্যানভাসে!

রঙতুলি ইজেলের হৃদয়ে ছড়ায় রঙ,  খুশি-খুনসুটি!

কার ফিরে আসায় হারানো আকাশ আবার ফিরে আসে

পাখি পোষা জানালায় —

ব্যথা-বেদনার মরু-খরা,দহনের দুরন্ত আগুন

ধুয়ে যায় বৃষ্টির আশ্বাসে!

 

পাণ্ডুলিপির প্রান্তর জুড়ে ব্ল্যাকহোলের শূন্যতা ধূ-ধূ—

কোন মায়া মাঠ মুছে দেয় অন্তরের বিদীর্ণ বঞ্চনা,

পৃথিবীর ধূসরতম প্রত্যাখ্যানও, প্রেরণার প্রমিত আলোয় ফের হাসে!

অন্তঃস্রোতা ঢেউ আর খোলা হাওয়ার প্রগাঢ় প্রেম টেনে নেয় কাছে  —

যেন কোনো অজানা পুণ্যের ফল তুলে দেয় খৈয়ামের কবিতার থেকে

উঠে আসা হরিৎ হৃদয় লাস্যময়ী এক গভীর বিশ্বাসে !

স্বল্পমেয়াদী সান্নিধ্য তার খুলে দেয় হাজার দুয়ারী প্রণয় প্রকোষ্ঠ,

মায়া সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ থেকে খুঁজে পাওয়া অকৃত্রিম অব্যাখ্যেয় এক টান—

আমাদের অবরুদ্ধ আকাশে আবার ছড়িয়ে-পড়ে অমিয় জোছনার গান।

 

 

আরো পড়ুন- শাহিন চাষীর কবিতা

ফলো করুন- পরমপাঠ ফেসবুক পেজ