কবি কামরান চৌধুরীর সাক্ষাৎকার
কেমন আছেন ?
– আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি।
লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?
– আমার ছোটোবেলা থেকে বই পড়ার অভ্যাস। ছোটো গল্প পড়তে খুব পছন্দ করতাম। যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকে নিজের ডায়েরীতে ছোটো গল্প, কবিতা এইসব লিখতাম। অবশ্য তখন আপন মনে যা লিখতাম, তখন ভাবতেই পারিনি এগুলো সাহিত্যচর্চা। তবে অবসরে বই পড়ার পাশাপাশি শখের বশে লেখালিখি বেশ উপভোগ করতাম। এখনো অবশ্য করি। তখন থেকেই লেখালিখির শুরু।
প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে কিছু বলুন
– আমার প্রকাশিত বই মূলত তিনটি। প্রথম বইটি একটি যৌথকাব্যগ্রন্থ। যার নাম ‘কাব্যের নিশাচর’। বইটি সম্পাদনা করেছিলাম। ২০২১ সালে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর ২০২২ সালে প্রকাশিত একক গল্পগ্রন্থ ‘নিথর ইস্টিশন’। এরপর ২০২৩ সালে একক কাব্যগ্রন্থ ‘অখ্যায়িকা’।
এখন কি লিখছেন?
– এখন একটি থ্রিলার উপন্যাস লিখছি। উপন্যাসটি ২০২৪ বইমেলায় প্রকাশিত হবার কথা ছিল। তবে ব্যস্ততার কারণে পান্ডুলিপি পুরো শেষ করা হয়নি। এখন শেষের পর্যায়ে আছে। এছাড়া একটি গল্পগ্রন্থ লেখা হচ্ছে।
আপনার লেখালেখির বিষয়বস্তু বা উপজীব্য নিয়ে বলুন।
– আমার লেখালিখির বিষয়বস্তু হলো দেশের চারপাশের সামাজিক ব্যবস্থা, অন্যায়, প্রতিবাদ, প্রেম এবং দ্রোহ।
আসন্ন বইমেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই
– থ্রিলার উপন্যাস ‘শেষের ছয়’ নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। যেটি একটু আগে বলেছিলাম। আসলে যদিও আমি পাঠকদের কাছে একজন কবি হিসেবে পরিচিত৷ তবে কবিতায় নিজেকে আরও পরিণত করতে চাই। তাই আপাততো কবিতার বই প্রকাশ নিয়ে আগ্রহী নই। নিজেকে যাচাই করতে চাই উপন্যাস দিয়ে। কতটুকু পাঠক বইটি গ্রহন করবে এবং কতটুকু আমাকে শিখতে হবে।
পাঠকদের থেকে একজন লেখকের প্রত্যাশা কি থাকে? আপনার ক্ষেত্রে তার প্রভাব কি?
– আমি মনে করি পাঠকদের কাছ একজন লেখক মূলত প্রত্যাশা করে তাঁর লেখার গঠনমূলক আলোচনা এবং সমালোচনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার লেখক জীবনে পাঠকদের কাছ থেকে এই দুটো বিষয় সবসময় আশা করি। এতে করে আমার ভবিষ্যৎ লেখালিখিতে নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়।
প্রকাশকদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য চাই।
– প্রকাশকেরা মূলত ব্যবসায়ী। তাঁদের প্রধান কাজ হলো বইয়ের ব্যবসা করা। তবে বর্তমানে এই ব্যবসা সৎ এবং অসৎ দুটো প্রথা অবলম্বন করা হচ্ছে। সৎ বলতে বুঝিয়েছি কিছু প্রকাশক দেখবেন তাঁর ব্যবসায় লাভ কিছুটা কম হলেও সেই প্রকাশকগুলো দিন রাত পরিশ্রম নতুন পুরাতন লেখকদের ভালো সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সময় অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য কমিশন দিচ্ছে। অথচ অসৎ প্রকাশকগুলো তাঁর পুরোই উল্টো। লেখকদের বই প্রকাশের কথা বলে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণা করে চলেছে। যা লেখকদের খুবই হতাশ করে। অথচ, এই অসৎ প্রকাশকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো দৃষ্টি নেই! ভুক্তভোগী লেখকেরাও হয়ে যায় নিশ্চুপ।
কবি বা লেখকের কি স্বীকৃতি প্রয়োজন আছে? কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখেন?
– একজন কবি বা লেখকের অবশ্যই স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে। কারণ, একজন রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিবাজ, সরকারি আমলা, সাংবাদিকেরা যদি স্বীকৃতি পায়। তবে কবি বা লেখকদেরও পাওয়া উচিত। তবে হ্যাঁ, এই স্বীকৃতি দিয়ে কোনো কবি বা লেখক তাদের আত্ম অহংকার নিয়ে বেশিদিন সাহিত্যে টিকে থাকতে পারে না। নিরহংকার কবি /লেখক হওয়া প্রয়োজন।
লোকে বলে কবিরা ভাতে মরে- এ নিয়ে কিছু বলুন
– কথাটি খুব একটা খারাপ না। আসলে বর্তমান এই দেশে প্রত্যেক কবিকে নিজের এবং পরিবারের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা নিজেরই করতে হয়। এখন সেকালের সময় নেই, নিয়মিত পত্রিকার পাতায় বা বই লিখে অর্থ উপার্জন করা যায়। দ্রব্য মূল্যের এই উর্দ্ধগতিতে এখন কোনো কবি তাঁর লেখা দিয়ে তাঁর আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না। প্রতিটি কবিকে এখন কিছু না কিছু করেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
একজন লেখক কবির জন্য পড়াশোনা (সাহিত্য পাঠ) কতটুকু জরুরী?
– একজন লেখক বা কবির জন্য বই পড়া অবশ্যই জরুরী। কারণ, বই পড়ার অভ্যাস যদি না থাকে, তবে লেখালিখি করা কঠিন হয়ে যায়। তাই যত বেশি পড়া হবে, তত বেশী জানা এবং শেখা হবে।
নিজের লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা জানতে চাই।
– আমার লেখালিখি নিয়ে ভবিষ্যৎ তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা একজন মানুষ আমি। পাঠকদের ভালোবাসা এবং অনুপ্রেরণায় যা সম্মান পেয়েছি তা বলাই বাহুল্য৷ পাঠকেরা আমাকে মনে রাখুক এটাই আমার প্রত্যাশা। তাঁদের জন্য ভালো কিছু বই লিখে যেতে চাই। তাঁরা পড়বে এবং আলোচনা-সমালোচনা দুটোই করবে। আমার প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা এতটুকুই।
যারা লিখতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
– যারা লিখতে চায় তাঁদের বলবো আগে প্রচুর বই পড়ুন তারপর লেখালিখি। একজন লেখক হতে গেলে অবশ্যই তাকে বিনয়ী, সৎ, চরিত্রবান এবং উদার হতে হবে। বিখ্যাত হবার নেশা সবারই থাকে। তবে এই বিখ্যাত হবার নেশায় নিজেকে যেন হারিয়ে না ফেলা হয় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বহু ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় এই সৃষ্টিশীল কাজে। লেখক জীবন মোটেও সহজ নয়, সুতরাং হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।
আরো পড়ুন- কবি সুশান্ত হালদারের সাক্ষাৎকার