প্রচ্ছদসাক্ষাৎকার

গীতিকবি জহুর কবিরের সাক্ষাৎকার

কেমন আছেন ?

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে চমৎকার আছি।

 

লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?

লেখালেখি শুরুটা ক্লাস নাইনে পড়ার সময় প্রথম কবিতা লিখি ক্লাসমেটদের নিয়ে ‘নবমের নবরাত্রি’। লেখালেখির শুরুটা বলবো বাবার থেকে। ছোটবেলায় বাবার বুকে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম। বাবার কাছ থেকে দরাজ কণ্ঠে শুনতাম লোকগীতি যা আমাকে পরবর্তীতে সাহিত্যে উদ্বুদ্ধ করেছে।

 

প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে কিছু বলুন

প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “পৃথিবীর দুই চোখ” তখন অনার্স চতুর্থবর্ষের ছাত্র এটি ২০১৩ সালে। পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া পাই। এরপর ২০১৫ সালে উপন্যাস “শেষ কথা বলা হলো না” আমাকে নতুনভাবে পাঠকমহলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে মনোনিবেশ করেছি গান লেখাতে এবং বিরামহীন লিখে চলেছি গানের কবিতা।

 

এখন কি লিখছেন?

এখন মূলত গান নিয়ে আছি। বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের আলোচিত প্রায় সব শিল্পীদের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়ে আমার লেখা আধুনিক, মডার্ন ফোক, দেশাত্মবোধক ও মরমী গান। বর্তমান সময়ে বেশকিছু জাগরণের গান লিখেছি। যেগুলো খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হবে অনলাইন প্লাটফর্মে।

 

আপনার লেখালেখির বিষয়বস্তু বা উপজীব্য নিয়ে বলুন।

আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে গ্রামে সংগত কারণে সহজ সরল গ্রামীণ জীবন যেমন আমার কবিতায় উঠে এসেছে তেমনি এসেছে সংগ্রামের বাস্তবচিত্র। চেষ্টা করেছি শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লিখতে। বাংলাদেশের বেশিরভাগই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তাদের কথাই বেশি বলেছি কবিতায়। তাদের অধিকারের কথা মূলত লিখতে চাই।

 

আসন্ন বইমেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই।

কাব্যগ্রন্থের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কয়েকজন প্রকাশকের সাথে আলোচনা চলছে।

 

পাঠকদের থেকে একজন লেখকের প্রত্যাশা কি থাকে? আপনার ক্ষেত্রে তার প্রভাব কি?

পাঠকদের কাছ থেকে প্রত্যাশা বলতে তারা ভালো লেখকের লেখা পড়ুক সস্তায় গা না ভাসিয়ে এটাই প্রত্যাশা। আমার লেখায় আমি অভিনব কিছু লিখতে চাই। গতানুগতিক হালকা বিষয় নিয়ে সুড়সুড়ি সম্পন্ন লেখা আমার অপছন্দ। তাদের কাছে চাওয়া তারা যেন রুচিসম্মত লেখা পড়ে এবং রুচিশীল গান শোনে।

 

প্রকাশকদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য চাই।

প্রকাশকের হাত ধরে লেখকের স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়। উভয়ের মেলবন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। প্রকাশকের মাথায় থাকে ব্যবসা। তারা প্রতিষ্ঠিত লেখকের বই ছাপতে চান। নতুন লেখকের নিয়ে তাদের মাথায় কোনো পরিকল্পনা বলতে লেখকের টাকায় বই ছাপানো। এর থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।

 

কবি বা লেখকের কি স্বীকৃতি প্রয়োজন আছে? কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখেন?

পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতাই লেখকের বড় স্বীকৃতি। এর বাইরে কোনো স্বীকৃতি প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। প্রতিষ্ঠা পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 

লোকে বলে কবিরা ভাতে মরে- এ নিয়ে কিছু বলুন

সাহিত্য চর্চা করে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জন করা বোকামিই বলবো, কারণ এই চর্চা করতে গিয়ে লেখকরা পলিটিক্যাল লেজুড়বৃত্তি করে সত্য কথা লিখতে পারছে না। সাহিত্য করে টাকা উপার্জনের চিন্তা যাদের মাথায় আছে,যারা সাহিত্য করে খায় তাদের আমি প্রকৃত লেখক হিসেবে বিবেচনা করি না। টাকা উপার্জনের বহু উপায় আছে। অর্থের চিন্তা করে সাহিত্য চর্চা হয় না।

 

একজন লেখক কবির জন্য পড়াশোনা (সাহিত্য পাঠ) কতটুকু জরুরী?

যে লেখক বেশি পড়ে তার লেখার গভীরতা ততো বেশি। পড়াশোনা ছাড়া লেখকের লেখা অসম্ভব। পড়াশুনা ছাড়া প্রকৃত লেখক হওয়া যায় না। যিনি নিয়মিত পড়েন তার মধ্যে নতুন নতুন চিন্তার সৃষ্টি হয়। নতুন ভাবনা তৈরি হয়। নতুন সাহিত্যের পথ তৈরি হয়। গভীরভাবে ভাবতে শেখায়।

 

নিজের লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা জানতে চাই।

বাংলাদেশের সমাজ বাস্ততা নিয়েই লিখতে চাই। এদেশে জন্মেছি এটাই বড় প্রাপ্তি। আমি লিখি মূলতঃ বিবেকের তাড়নায়। সমাজের সমস্যা গুলো সামনে এলে এড়িয়ে যেতে পারিনা। প্রতিবাদ করে বসি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার কথা বলে যাবো। বলতে না পারলে নিজের ভিতর অপরাধী লাগে। বলতে পারলে শান্তি পাই। এটাই মূলত আমার প্রাপ্তি। প্রত্যাশা হলো এদেশের প্রতিটি মানুষ নিজের মতো করে বাঁচবে। বৈষম্যহীন একটি দেশের চিন্তা করি। প্রত্যাশা করি লেখকরা দলবাজি ছেড়ে জনগণের কথা ভাববে, তাদের প্রত্যাশা গুলোই হবে লেখকের প্রত্যাশা, যার প্রতিফলন ঘটবে লেখায়। সেই সাথে তাদের বাকস্বাধীনতা দেখতে চাই।

 

যারা লিখতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

আমি বলবো লেখার চেয়ে বেশি পড়তে। আমি মূলত গান ও কবিতা লিখি। যারা লিখে তারা যেনো  ভালো করে শিখে তারপর লেখে। কারণ অধিকাংশ লেখকের লেখায় ব্যাকরণ ও প্রকরণ ত্রুটি সম্পন্ন। আশা করবো তারা শিল্প সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করে তারপর যেন লেখে তা না হলে গুনীজনের কাছে হাস্যকর হতে হবে। হাস্যকর হতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।

 

আরো পড়ুন- কবি তাজ ইসলামের সাক্ষাৎকার