মহানগর ওয়েব সিরিজ: সময়ের সরব সাক্ষী
মহানগর ওয়েব সিরিজের সিজন ২ এলো এই ঈদুল ফিতরে। সিজন ১ দেখার পর থেকে কী যে প্রতীক্ষা ছিলো সিজন ২ কবে আসবে!
৯টি পর্বের সিজন ২ এ কমন একটি ইন্ট্রো রাখা হয়েছে, ইন্ট্রোতেই কামাল করে দিয়েছেন নির্মাতা। ঢাকা মহানগরীর চিরাচরিত দৃশ্যাবলির মাঝে সংসদ ভবন, মাজার, লোকাল বাস, রেলস্টেশন, পোশাক-পরিচ্ছদের সাথে রাজু ভাস্কর্যের নিচে খালি গায়ের পথশিশু আর একটি বিশেষ স্লোগান সম্বলিত ভাস্কর্য মহানগরকে একটি অন্য রকম স্থান দিয়েছে।
ধনার্ঢ্য ব্যবসায়ীপুত্র আফনান চৌধুরীকে (শ্যামল মাওলা) গ্রেফতারের পরেই ওসি হারুনের (মোশাররফ করিম) ভাগ্যে শনির দশা লেগে যায়। পরে অবশ্য জানা গেল আফনান চৌধুরীর গ্রেফতার নয়, খেলা আরো উপরের। অধীনস্থ এসআই মলয়ের অভিযোগে থানা থেকে অন-ডিউটি ওসিকে ডিবি (ডিএমপি) তুলে নিয়ে যায়। এরপরই সিজন ২ এ ওসি হারুন নিজেকে আবিষ্কার করে রিমান্ড রুমে। রিমান্ডের দায়িত্বে থাকা দ্বীন মোহাম্মদ বাবর এবং তার সহকারী আবুল হায়াতকে দেখা যায় হারুনকে নিয়ে চর্চা করতে। আইজি নিজে এই বিষয়টা ঢিল করছেন বলে বলেন বাবর। এক পর্যায়ে সহকারী আবুল হায়াত হারুনকে ‘সামান্য ওসি’ বলে তাচ্ছিল্য করে। রিমান্ড রুমে ঢোকার পরে হারুন কোথায় আছে স্থান (ডিবি অফিস নয় এটা নিশ্চিত হয়েই) জিজ্ঞেস করলে তারা রহস্য জারী রাখেন এবং ওসি হারুন তাদের পদবী জিজ্ঞেস করলে তারা পদবীও জানান না। ‘সামান্য ওসি’ বলার পর মনে হয় তারা সিনিয়র অফিসারই হবে, কিন্তু হারুন তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করে না। এতে তারা বিব্রত হয় না।
বাবর আর হায়াতের শারীরিক ফিটনেস দেখে তাদের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের মনে হয় না, ডিবিও না, এনএসআই এসব বিষয়ে কাজ করার কথা নয়, এসবি হতে পারে! কারণ প্রথমত, আইজি নির্দেশ দিতে পারে এসবিকেই, এনএসআই বা সামরিক গোয়েন্দাদের নয়, দ্বিতীয়ত হারুনকে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়া হলে তিনি সম্ভবত কমিশনারকে লুকিয়ে ফোন করেন। যার ফোনের কারণেই হারুন ছাড়া পান। ‘ওই ফোনে’ বাবরকে বলা হয় ‘আমাকে না জানিয়ে ডাইরেক্ট এমপির কথায় কাজ করেন, আপনাদের কারণে দুই দিনের মেয়র আমাকে ভয় দেখায়।’ তার মানে মেয়র বাকি দুই ডিপার্টমেন্টকে ‘ভয়’ দেখাতে পারে না।
ওসি হারুনকে সৎপুলিশ অফিসার হিসেবেই দেখানো হয়েছে। তার সাথে মেয়র এবং এমপি চরিত্রে ঢাকার পাশের একটি মহানগরের দুই নেতার চরিত্রের ছায়া, একমন্ত্রী আর নায়িকার ফোনরেকর্ড, আলোচিত এসপি হারুনের নামের অনুকরণে ওসি হারুন, বিদেশফেরৎ প্রবাসীকে বিমানবন্দর থেকে তুলে আনা- ইত্যাদি আরো কিছু ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে মহানগর ওয়েব সিরিজ সময়ের সাক্ষী হয়ে রইলো।
এমপি চরিত্রে অনিবার্ণ ভট্টাচার্যকে গেস্ট এপিয়েরেন্সে পেয়ে ভালো লাগলো। এমপির একমাত্র ডায়লাগ- ‘খেলা হবে’ শুনে মনে হয়েছিল সিজন ৩ আসছে আরো গভীরের খেলা নিয়ে। কিন্তু এই খেলা যে ওসি হারুনের বন্ধু ডিবি অফিসার সুকুমার বড়ুয়া মুহূর্তেই খেলে দেবে তা দেখার পর সিজন ৩-এর আশাটা দুরাশা হয়ে গেল!
মহানগর ওয়েব সিরিজ সিজন ১ রিলিজের পরে নির্মাতা আশফাক নিপুণকে এসবি তলব করেছিল বলে শুনেছিলাম। তবুও সিজন ২ তার নিজস্বতা বজায় রেখে সময়কে ধারণ করতে পিছপা হয়নি। সাহসী নির্মাণের জন্য কুর্ণিশ রইলো প্রিয় নির্মাতা।
মহানগর ওয়েব সিরিজ- মহানগর